যে ৬ অভিযোগ এনে চমককে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ডিরেক্টরস গিল্ড
এবার ছোট পর্দার পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড তিন মাসের জন্য অভিনয়ে নিষিদ্ধ করল অভিনেত্রী রোকাইয়া জাহান চমককে। আজ সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হীরা, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগরসহ সংগঠনের অন্য নেতারা।
এককভাবে ডিরেক্টরস গিল্ড সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ইতিপূর্বেও অভিযোগ প্রমাণিত অভিনেত্রী রোকাইয়া জাহান চমকের অপেশাদারি আচরণের কারণে আরও অনেক নির্মাতা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁর মতো কিছুসংখ্যক অপেশাদার অভিনয়শিল্পী দ্বারা বিভিন্ন শুটিং সেটে নির্মাতাসহ টেকনিক্যাল ইউনিটের সদস্যা নানাভাবে নিগৃহীত হন কখনো শারীরিক ও মানসিকভাবেও নির্যাতিত হন।
ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রমাণিত অভিযোগে অভিনয়শিল্পী রুকাইয়া জাহান চমকের সঙ্গে আগামী তিন মাসে ডিরেক্টরস গিল্ডের কোনো সদস্য টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমের কোনো প্রকার নির্মাণকাজ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে চমক ৩০ আগস্টের মধ্যে নির্মাতার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবেন। অন্যথায় অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যেসব পরিচালক এই অভিনেত্রীকে নিয়ে শুটিং করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ সময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চমকের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রোডাকশন বয়ের মুখে গরম চা ছুড়ে মারা, মেকআপম্যানকে মারধর করা, সহকারী পরিচালককে হুমকি দেওয়া। এ ছাড়া চমকের বিরুদ্ধে শুটিংয়ের লাইটম্যানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা, ক্যামেরাম্যানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ও শুটিংয়ের গাড়ির ড্রাইভারের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে নন অভিনয়শিল্পী সংঘ ও টেলিভিশন প্রযোজক সমিতির নেতারা। তাঁরা মিটিংয়ে বসেছেন। আলাদা করে তাঁরা বিবৃতি দেবেন।
৪ আগস্ট ঢাকার একটি শুটিংবাড়িতে এ ঘটনার সূত্রপাত। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সামনে আসে অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের অসদাচরণ। সহশিল্পীর কাছে অনৈতিক সুবিধা চাওয়া, পরিচালকের ক্ষতিপূরণসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয় অভিনেত্রী চমকের বিরুদ্ধে। সে ঘটনা নিয়ে অবশেষে গত রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ছোট পর্দার পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন মীমাংসায় বসে। রাত ১০টা পর্যন্ত সেই মিটিং চললেও সেদিন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সংগঠনগুলো। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে ১৪ আগস্ট রাতে সংগঠনগুলো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিনয়শিল্পী সংঘ অভিনেত্রী চমকের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করে। তারা এটাও জানায়, চমকের কোনো অভিযোগ সত্য নয়। সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাংগঠনিক বার্তায় বলা হয়েছিল, ‘শুটিং সেটে উত্তেজিত অবস্থায় চমক যে আচরণ করেছেন, যার কারণে সেটে পুলিশ আসা, শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং পরিচালক আর্থিক ক্ষতি ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মাসুম বাশার মাসুম এবং নির্মাতা আদিব হাসানসহ ইউনিটের সবার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অভিনেত্রী চমকের ভুল ছিল এবং পরে অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।’
সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অভিনেত্রী চমক ক্ষতিগ্রস্ত নাটকের প্রযোজক, পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মাসুম বাশারসহ সবার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন ও ক্ষমা চাইবেন। একই সঙ্গে শুটিং শেষ করার প্রয়োজনীয় অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বাধ্য থাকবেন চমক। এ ছাড়া তাঁকে অভিনেতা আরশ খান ও পরিচালক আদিব হাসানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে চমককে। এমন ঘটনা আবার ঘটলে সংগঠন কর্তৃক শাস্তি গ্রহণ করতে তরুণ এই অভিনেত্রী বাধ্য থাকবেন। এ নিয়ে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করার কথা বলা হয়েছে চমককে। শুধু তা-ই নয়, আগামী ৬ মাস সব সংগঠনের পর্যবেক্ষণে থাকবেন চমক। আরও বলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া কোনো সাক্ষাৎকার কখনোই কোনো ঘটনার সুরাহা করতে পারে না। যে কারণে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পোস্ট বা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না।