ঈদে তিন শতাধিক রোমান্টিক নাটক
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বেশ কিছু কারণে এবার ঈদনাটকের বাজেট বেড়েছে। অনেক তারকার শিডিউল পেতেও বাড়তি গুনতে হচ্ছে পারিশ্রমিক। টেলিভিশন প্রযোজকেরা জানান, সব মিলিয়ে বাজেট ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে। তারপরও বাড়ছে ঈদনাটকের সংখ্যা। ভিউকে প্রাধান্য দিয়ে রোমান্টিক ও জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের নাটক নির্মাণে ব্যস্ত নির্মাতারা। প্রযোজক, পরিচালক ও কলাকুশলীদের সূত্রে জানা যায়, ঈদনাটকের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যাবে।
এবার ঈদনাটকের শুটিংয়ের শুরুতেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুনতে হয়েছে, কলাকুশলীরা পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। চিত্রগ্রাহক, রূপসজ্জাকারী, লাইট ক্রু, প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে একশ্রেণির কলাকুশলীরা দৈনন্দিন পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। এ বছর ১৫টি নাটক প্রচার করবে সিএমভি ইউটিউব চ্যানেল। বাজেট কোটি টাকার ওপরে। ইতিমধ্যে তারা বেশির ভাগ কাজের শুটিং শেষ করেছে। কাজগুলো নিয়ে আশাবাদী হলেও সিএমভির স্বত্বাধিকারী শাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, ‘এবার ২০ লাখ টাকা বাজেট বেড়েছে। পরিচালকেরা সেভাবেই বাজেট দিয়েছেন। আসলে তাঁদের করার কিছু নেই। কলাকুশলীরা বাজেট বাড়িয়েছেন। লাইট, ক্যামেরার ভাড়া বেড়েছে। কাজের মান ধরে রাখতে আমরা আপস করিনি।’
আরও যেভাবে খরচ বাড়ছে
এক বছর আগেও দেখা গেছে, এক দিন বা দুই দিনে ঈদনাটকের শুটিং শেষ করতেন অনেক অভিনয়শিল্পী। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। আগের চেয়ে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এখানে পরিচালক, প্রযোজকেরা কেউ ভিউর জন্য ছাড় দিতে চান না। ঈদে পরিচালক রাফাত মজুমদার রিংকুর সাতটি নাটক প্রচারিত হবে। ৭টি নাটকের বাজেট ৬০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘এখন দর্শক ধরে রাখতে গল্পে, লোকেশনে বৈচিত্র্য আনতে হচ্ছে। ক্যামেরার কাজ, এডিটিং, শুটিং—সব জায়গায় সময় দিতে হচ্ছে। তারকাদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। দুই দিনের কাজ এখন পাঁচ–ছয় দিনে করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সবকিছুর দাম বাড়তি, নাটক নির্মাণেও সেটার প্রভাব পড়েছে। তারপরও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ আছে।’
প্রস্তুত হচ্ছে ৬০০ নাটক
টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির জানান, ঈদ উপলক্ষে ছয় শতাধিক নাটক প্রচারিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, চ্যানেল আই, এনটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশন, এটিএন বাংলা, মাছরাঙাসহ ৯টি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আগেই নাটকের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অন্যদিকে গত মাসে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে ইউটিউব চ্যানেলগুলো। বেশির ভাগ ইউটিউব চ্যানেল সরাসরি তাদের চ্যানেলে নাটক প্রচার করবে। অন্যদিকে বেশ কিছু টেলিভিশনে এবার ঈদের নাটক সংখ্যায় আগের চেয়ে কমেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের কর্তাব্যক্তি বলেন, ‘টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো নয়। অনেক বিজ্ঞাপন ডিজিটালে চলে যাচ্ছে। খেলার পেছনে চলে যাচ্ছে। আমাদের টিভির সঙ্গে ইউটিউবের ওপর ভর করে ঈদে নাটক প্রচার করছি।’
ইউটিউবে বেশি
ইউটিউবের নাটকের বাজেট টিভি নাটকের চেয়ে বেশি বলে জানালেন কয়েকজন নির্মাতা। দেখা যায়, কোনো ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশন এক–দুই মিলিয়ন হলেও প্রযোজকেরা নাটকপ্রতি বাজেট দিচ্ছেন এক–দুই লাখ টাকা বেশি। কখনো আরও বেশি। অন্যদিক পাঁচ মিলিয়নের বেশি সাবস্ক্রিপশন নিয়েও বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেল বাজেটে পিছিয়ে। তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলেন বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আখন্দ। তিনি বলেন, ‘এটা একসময় ছিল। কারণ, হুট করেই ইউটিউবের নাটকগুলো দ্বিগুণ বাজেট দিয়ে নাটক নির্মাণ শুরু করে। তখন আমরা মানিয়ে নিতে পারিনি। বর্তমানে আমাদের একই দামে নাটক নিতে হয়। আমাদের নাটকগুলোও কিন্তু ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে থাকছে। আমাদের এবার ঈদে ৩৭টি একক নাটক ও ৭টি টেলিফিল্ম যাবে। দর্শক ধরে রাখতে কমবেশি ব্যালান্স করেই আমাদের বাজেট দিতে হচ্ছে।’
প্রেমের গল্পে প্রাধান্য
গত দুই বছর ঈদনাটকে প্রাধান্য পেয়েছিল পারিবারিক গল্প। পাশাপাশি একাধিক কমেডিনির্ভর নাটক জায়গা পেত। এবার পারিবারিক গল্পের বাইরে থাকছে প্রেমের গল্পকে ঘিরে সিরিয়াস নাটক। জানা যায়, ইউটিউবের তরুণ দর্শক ধরতেই নাটকগুলো নির্মিত হচ্ছে। নির্মাতা সেরনিয়াবত শাওন জানান, তাঁর নাটকগুলো রোমান্টিক ও ড্রামা ঘরানার। কারণ, প্রযোজকেরা পরিবারকেন্দ্রিক সিরিয়াস গল্প নির্মাণে আগ্রহী নন। ঈদের জন্য ৩৫টির মতো নাটকের আবহ সংগীত তৈরি করছেন আপেল মাহমুদ। তিনি এমিল নামে পরিচিত। এমিল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যত নাটক মিউজিক করার জন্য পেয়েছি, তার ৭০ শতাংশের বেশি রোমান্টিক, সিরিয়াস ড্রামা জনরার। যেখানে আগে ৮০ শতাংশ কমেডি নাটক থাকত। এবার কমেডি নাটক পাচ্ছি ২০-২৫ শতাংশ।’ পরিচালক ও প্রযোজকেরা জানান, ঈদে প্রচার হবে, এমন ৫০ ভাগের বেশি গল্প রোমান্টিক। কারণ দর্শক প্রেমের গল্প পছন্দ করছেন।