আমাদের সেক্টরের সবাই ঢালাওভাবে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে: মৌ

তাহমিনা সুলতানা মৌছবি : মৌর ফেসবুক

দুই যুগ ধরে অভিনয়ে আছেন তাহমিনা সুলতানা মৌ। চলচ্চিত্র ছাড়া অভিনয়ের সব মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর বাবা এবং বড় বোন অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত। বড় বোন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের নামকরা নায়িকা শাবনাজ। বাবা এস এম হুমায়ূন নাটকের দল নাট্যচক্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। অভিনয় পরিবারের সন্তান হয়ে নিজের পরিচয়ে অভিনয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছেন। অভিনয়জীবনে দীর্ঘ পথচলা মৌ বিনোদন অঙ্গনের কয়েকজনের কর্মকাণ্ডে ইদানীং বিব্রত ও বিরক্ত। তাঁর মতে, গুটিকয়েক মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বিনোদন অঙ্গনের প্রায় সবাইকে নেতিবাচক কথা শুনতে হচ্ছে।

ছোটবেলা থেকেই নৃত্যশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাহমিনা সুলতানা মৌর। তাই শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপার কাছে নাচের তালিমও নিয়েছিলেন। একটা পর্যায়ে নাচ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ১৯৯৯ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘চোর চোর’ টেলিছবির মাধ্যমে পেশাদার অভিনয়ে যাত্রা শুরু। এর পর থেকে টানা অভিনয়ের সঙ্গেই আছেন। অভিনয়ের ফাঁকে বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছেন। ইদানীং কাজকর্ম কমিয়েও দিয়েছেন। গত শনিবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিনোদন অঙ্গন নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি জানিয়েছেন, ভাইরাল হওয়ার জন্য সবাই পাগল হয়ে গেছে, যা খুবই ভয়ংকর।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট মৌ লিখেছেন, ‘১৯৯৯-২০০০ সালে আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন চলচ্চিত্রের কাজ করার সাহস আমরা অনেকেই করতে পাইনি। কাটপিসের যুগ ছিল, কাকে বিশ্বাস করব? ছবির মধ্যে যদি কাটপিস ঢুকিয়ে দেয়! কেমন করে বিশ্বাস করব? তাই আর সে সময় আমাদের  চলচ্চিত্রে কাজ করা হয়নি। সাহসের অভাব ছিল, সেই সাহসের অভাব এখনো আছে।

২০২৪ সালে এসে মিডিয়াতে এবং আমাদের চারপাশে যা চলছে, এটাকে কি যুগ বলা যায়? আগে ছিল কাটপিসের যুগ? আর এখন? রুচির দুর্ভিক্ষ? ভাইরাল হওয়ার জন্য সবাই পাগল হয়ে গেছে। শুধু মিডিয়াকে দোষ দিলে কিন্তু হবে না। মিডিয়ার বাইরে সাধারণ মানুষ, আমরা যাদের সাধারন মনে করি, তারা এখন জনপ্রিয়তা পেতে বা অসাধারণ হওয়ার জন্য পাগলামি শুরু করে দিয়েছে। যে করে হোক, যেমন করেই হোক—ভাইরাল হতেই হবে।’

আরও পড়ুন

হঠাৎ করে কেন এমনটা বললেন সে বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় মৌর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘চরিত্রের প্রয়োজনে আমরা অভিনয়শিল্পীরা অনেক কিছুই করি। নানান রকম দৃশ্যে অভিনয়, পেশাকও পরি—ওটা আমাদের পেশার একটা অংশ। কিন্তু ইদানীং আশপাশে যা হচ্ছে, কারণ ছাড়াই অশালীণ, উদ্ভট পোশাক পরে নিজেদের প্রদর্শিত করছে। এমনটা যারাই করছে, শুধুই ভাইরাল হওয়ার জন্য। কোনো কারণ ছাড়াই চারপাশে যা হচ্ছে, এসব নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভাইরাল হওয়ার জন্য তারা যেমন এমনটা করছে, আরেকটা গ্রুপ নিজেরা প্রচার প্রসার করেও ভাইরাল যাত্রায় নিজেদের শামিল করছে!’

কিছুটা অভিমান ও ক্ষোভ মেশানে কণ্ঠে মৌ বললেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, মঞ্চে অভিনয় শিখে এই অঙ্গনে কাজ করতে এসেছি। এখন যারা নোংরামী ছড়াচ্ছে তাদের কারও এমন ব্যাকগ্রাউন্ড আছে বলে মনে হয় না। কিছু না শিখেও তারা ভাবছে, আমাদের আলোচনায় থাকতে হবে। এরা কিছু না শিখেই ভাইরাল হতে চায়। যেভাবে হোক তাদের ভাইরাল হতে।

তাহমিনা সুলতানা মৌ। ফেসবুক থেকে

আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরের তাৎপর্য কি তা তরুণ প্রজন্ম জানছে না! তারা আরও অনেক বেসিক কিছু শেখা থেকে বঞ্চিত। অথচ দেখেন সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নোংরা কাজ নিয়ে আলোচনায় থাকা মানুষগুলো এবং তাদের কাজগুলো প্রচারমাধ্যম ছড়িয়ে দেওয়ার ফল হচ্ছে এসব। আমরা তো বিটিভির আমলে না। প্যাকেজের আমলে। আমাদের নামটা প্রতিষ্ঠিত করতে ২০ বছর লাগছে লেগেছে। আমরা পর্দায় অন অ্যান্ড অফ বিশ বছর ধরে কাজ করছি। অথচ অল্প কিছুদিন ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজের নামে নোংরামি করে নিজেদের নামটা সবার মুখে মুখে পৌঁছে দিচ্ছে। খুবই বেদনাদায়ক।’

তাহমিনা সুলতানা মৌ মনে করছেন, গুটিকয়েক মানুষের নোংরা কর্মকান্ডের দায়ভার এই অঙ্গনের সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের কারণে সবাইকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। মৌ বললেন, ‘কয়েকজনের কর্মকান্ডে  বিনোদন অঙ্গনের সবাইকে ঢালাওভাবে গালি দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। আজ কারণ ছাড়াই অশালীন পোশাক করে, নেতিবাচক কর্মকান্ড করে যারা আলোচনায় আসছে, প্রচারমাধ্যম তাদের নিয়ে মাতামাতি করছে। প্রচারমাধ্যম যদি ভাইরালদের পাত্তা না দেয়, একটা সময় ঠিকই তারা থেমে যাবে। প্রচারমাধ্যমে নোংরামি পৃষ্ঠপোষকতা করা মানে তা একরকম সত্যায়িত রূপ দেওয়া! যা সত্যিই দুঃখজনক। এখন হয়তো কেউ বলবেন, অনলাইন মাধ্যমে করছে। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়াও তো করছে। আমার মনে হয়, আমাদের সেক্টরের সবাই ঢালাওভাবে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।’