মৃত্যু নিয়ে যা বলেছিলেন মাসুদ আলী খান
‘যথেষ্ট পেয়েছি। আমি সন্তুষ্ট। জীবন নিয়ে কোনো খেদ নেই আমার।’ দুই বছর আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই বলেছিলেন মাসুদ আলী খান। দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারে কথা বলেছিলেন নিজের কাজ নিয়ে। মৃত্যু নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। কী বলেছিলেন তিনি।
জন্মদিন উপলক্ষে নেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় জন্মদিন নিয়ে। মাসুদ আলী খান বলেছিলেন, ‘অনেকে জন্মদিনটা ভীতিকর মনে করে। অনেক এ-ও ভাবে, বয়স এত বছর হয়ে গেল! আমার কাছে এটা খুবই সহজাত ব্যাপার। তাই আমি ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করি।
বয়স কমে যাচ্ছে, মৃত্যুর দিকে এক বছর এগিয়ে গেলাম—এমনটা কখনোই ভাবি না। মৃত্যুর যথাসময়েই আসবে, এটা নিয়ে অযথা ভেবে মাথা খারাপ করার কোনো মানে হয় না। ছোটবেলায় তো কখনো জন্মদিন উদ্যাপন করা হতো না। এখন নাতি-নাতনিরা আছে, ওরা দাদা-নানার জন্মদিন মনে করিয়ে দেয়।’
ফেলে আসা জীবন নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ ছিল না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘এখন আহ্বান করছি মৃত্যুর। মনে হয়, দেখলাম তো অনেক, আর কীই-বা দেখার আছে, পাওয়ার আছে। যদিও মানুষ বলে, পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কখনো শেষ হয় না। আমার তা কখনোই মনে হয় না। যথেষ্ট পেয়েছি। আমি সন্তুষ্ট। জীবন নিয়ে কোনো খেদ নেই আমার।’
জন্ম ও মৃত্যু বিষয়ে তাঁর ভাবনা ছিল এমন, ‘জন্মে মানুষের যেমন হাত নেই, মৃত্যুতেও নেই। তবে ইদানীং একটা জিনিস আমাকে খুব কষ্ট দেয়। ভাবতে থাকি, আমার খেলার সাথি যারা ছিল, অভিনয়ে, খেলাধুলায়—চারদিকে তাকালে দেখি, এখন আর কেউ নেই।
আমি যাদের কথা মনে করতে পারি, তারা কেউ নেই। কদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম, সম্পর্কে ভাই হয়, মজিবুর রহমান খান, দেখলাম, তিনি শুধু বেঁচে আছেন। এসব ভাবলে খুব বেদনা দেয়।’
বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান আর নেই। আজ বিকেলে রাজধানীর নিজ বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে এই গুণী অভিনেতার। সাত দশকের অভিনয়জীবন তাঁর। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমে সমানতালে কাজ করেছেন। ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘একান্নবর্তী’, ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ নাটকে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি ‘নদী ও নারী’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘মাটির ময়না’, ‘মোল্লাবাড়ীর বউ’ চলচ্চিত্রেও ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি।