অপি করিম ও ইন্তেখাব দিনারের কাছে ফুল বিক্রি করছে, শিশুটি এখন নায়ক
শৈশবে খুবই দুরন্ত ছিলেন। একাই সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতেন। বাসায় খেলনা দিয়ে নিজেই সাজতেন বিক্রেতা, নিজেই ক্রেতা। কাগজ দিয়ে বানাতেন টাকা। আবার গামলা দিয়ে বানাতেন গাড়ি। নিজেই চালক, নিজেই হতেন যাত্রী। নিজের কাছেই গাড়ির ভাড়া চাইতেন। সারা দিন অভিনয় করে খেলা সেই তরুণের বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না ক্যামেরার সামনে। সেই তরুণ এখন দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। মা–বাবার পথেই হাঁটছেন।
অনেক দিন ধরেই ফেসবুক একটি স্থির ছবি ঘুরছে। অভিনয়শিল্পী অপি করিম ও ইন্তেখাব দিনারের কাছে ফুল বিক্রি করছে শিশু। এটি একটি নাটকের দৃশ্য। কিন্তু চেনা যায় না পাশের শিশুটি কে। সেই ছবি নিয়ে কথা হলো নাটকটির অভিনেতা ও পরিচালক নরেশ ভূঁইয়ার সঙ্গে। পরে কথা হলো নরেশ ভূঁইয়ার স্ত্রী অভিনেত্রী শিল্পী সরকার। নাটকটির নির্মাতা ও রচনা তাঁদেরই।
শিল্পী সরকার হেসে বলেন, ‘ওই ছেলেটি আমার, ইয়াশ রোহান। শৈশবে ওর অভিনয় সবাই খুবই পছন্দ করতেন। আমাদের বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছে। আমাদের বাইরে ওকে একটি নাটকে অভিনয় করতে দিয়েছি। আমি চাইনি সে শিশুশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পাক। চাইতাম বড় হয়ে ইয়াশ নায়ক হোক। কিন্তু সে কখনোই চাইত না অভিনয় করতে। ও চাইত পরিচালক হতে।’
ইয়াশ রোহানের অভিনয়ের শুরুটা চার বছর বয়সে। সারা দিন বাড়ি মাতিয়ে রাখা শিশুটি কি আর ধরাবাঁধাভাবে অভিনয় করতে চান। তাঁর সারা দিনের দুষ্টু–মিষ্টি গল্প নিয়ে ইয়াশের মা লিখলেন নাটক। ‘খুশি’নামের সেই ধারাবাহিক নাটকটি পরিচালনা করেন ইয়াশের বাবা নরেশ ভূঁইয়া। ধারাবাহিকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হয়। সেই নাটকের গল্প ছিল ইয়াশ রোহানকে ঘিরেই। শিশুতোষ গল্পটি দর্শকেরা পছন্দ করেন।
ইয়াশ রোহান শিশুতোষ এ গল্পের নায়ক। আর নাটকে কাজের মেয়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতি। ‘ওকে (ইয়াশ) ধরে নিয়ে অভিনয় করাতে হতো। এতটুকু ছোট ছেলে। অভিনয়ের কী বোঝে। তাকে যেভাবে বলে দিই, সেভাবে অভিনয় করে। কখনো কোলে নিয়ে, কখনো পার্কে নিয়ে ঘুরতে হতো। তবেই বুঝিয়ে বললে অভিনয় করত। মা হিসেবে পুরো কষ্টটা আমাকেই করতে হতো।’ বলেন শিল্পী সরকার।
ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করলেও তাঁর মা চাইতেন না ছেলে শিশুচরিত্রে জনপ্রিয় হোক। তাঁর মতে, শিশু চরিত্রে একবার জনপ্রিয়তা পেলেও তিনি আর পরে নায়ক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না। অভিজ্ঞতা থেকেই ইয়াশকে অভিনয় থেকে দূরে রাখতেন, তা ছাড়া পেশাগতভাবে তখন শিক্ষকতা করায় বাড়তি সময়ও ছিল না ছেলেকে নিয়ে শুটিং ইউনিটে বসে থাকার। শিল্পী সরকার বলেন, ‘শিশু চরিত্রে স্টার ইমেজ থাকলে পরবর্তী সময়ে নায়ক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা কম থাকে। অনেকেই শিশুদের নায়ক হিসেবে মানতে পারে না। এটা আমার কাছে মনে হতো।’
তিন সন্তানের মধ্যে মেজ ছিলেন অভিনেতা ইয়াশ রোহান। সন্তানদের নিয়ে মা যেমন চাইতেন অভিনয় করুক। তেমনি চাইতেন কোনো এক ছেলে পাশাপাশি ডাক্তার হোক। এখনো ইয়াশকে মাঝেমধ্যে বলেন, ‘তুই ডাক্তার হলে কত সুন্দর লাগত তোকে দেখতে।’ শৈশবে ছেলেরা নাকি আগেই বুঝতে পেরেছিল, তাঁদের চিকিৎসক বানানোর ইচ্ছা। যে কারণে সেই পথেই হাঁটেননি কোনো ছেলে।
শিল্পী সরকার অপু জানান, শৈশব থেকেই ছেলে ইয়াশ রোহানকে নিয়ে অভিনয় ভাবনা শুরু হয়। মজার সেই ঘটনা ভাগাভাগি করলেন তিনি। সেবার ঢাকায় দিলীপ কুমার এসেছিলেন। ইয়াশের তখন ১৭ দিন বয়স। তাঁকে বাসায় রেখেই শিল্পী সরকার চলে যান প্রিয় অভিনেতা দীলিপ কুমারকে দেখতে। দেখা শেষে চলে আসার সময় একজন তাঁকে খেয়ে যেতে বলেন। তখন উত্তরে শিল্পী সরকার বলেন, ‘আমার দিলীপ কুমার ঘরে। ওই দিন থেকেই কেন যেন চাইতাম, আমার ছেলে হিরো হোক।’
তবে ছেলের ক্যারিয়ার নিয়ে কখনোই কোনো বাড়তি চাপ ছিল না। স্বাধীনভাবেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। এর মধ্যেই এক দিন গিয়াসউদ্দিন সেলিমের শুটিং ইউনিটে এই পরিচালক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘পাঠ করবা।’ ইচ্ছা না থাকলেও প্রথম নায়ক হিসেবে স্বপ্নজাল সিনেমায় অভিনয় করেন। এরপর একাধিক অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও চার বছর তেমন কোনো অভিনয়ে দেখা যায়নি।
‘এত মানুষ ফোন দেয়ে যে কারণে পরবর্তী সময়ে বলেকয়ে অভিনয় করতে পাঠিয়েছি। আস্তে আস্তে অভিনয় করতে গিয়ে এখন অভিনয় পছন্দ করে। অভিনয়ের প্রতি ছেলের ভালোবাসা আছে বুঝতে পারি। অভিনয়ে ওর সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। যখন কেউ বলে, ইয়াশ রোহান খুব ভালো অভিনয় করে, তখন মা হিসেবে গর্ব হয়। ছেলের এই সাফল্য দেখে অহংকার হয়। এটাই তো প্রতিটি মা চায়।’–বলেন এই তারকার মা।