প্রতিবারই থাপ্পড়ের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছিলেন যাকের ভাই...
আজ অভিনেতা আলী যাকেরের চলে যাওয়ার দিন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যু হয় এই বরেণ্য অভিনেতার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মঞ্চ, টিভ নাটক ও চলচ্চিত্রে নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে দেখা গেছে এই অভিনেতাকে। তাঁর আলোচিত টিভি নাটকের একটি ছিল হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’। নাটকটিকে তাঁর অভিনয় মনে রেখেছেন অনেক দর্শক। আলী যাকেরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেই নাটকের কিছু ঘটনা ফিরে দেখা যাক।
অভিনেতা ফারুক আহমেদের ক্যারিয়ারে প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘আজ রবিবার’। নাটকে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল মতি। চরিত্রের প্রয়োজনে আলী যাকেরের হাতে অনেকগুলো থাপ্পড় খেতে হয়েছে এই অভিনেতাকে। আলী যাকেরের সঙ্গে ফারুক আহমেদের পর্দার রসায়ন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
‘আজ রবিবার’ নাটকে আজগর চরিত্রে অভিনয় করেন আলী যাকের। তিনি বাড়ির বড় ছেলে। গল্পে তাঁকে বেশির ভাগ সময় ঘরের ভেতর পড়াশোনা করতে দেখা যেত। দীর্ঘসময় ঘরের ভেতর বসে বসে তিনি কী করতেন, সে ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন মতি চরিত্রের ফারুক। গৃহপরিচারক মতি প্রায়ই আজগরের দরজার ফাঁকা দিয়ে উঁকি দিতেন। মতি উঁকি দিলেই সেটা ধরে ফেলতেন আজগর। বেশির ভাগ সময় এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে থাপ্পড় খেতেন তিনি। একবার দরজার ছিদ্র দিয়ে কালি ছুঁড়ে মারেন আজগর।
নাটকটির শুটিংয়ের সেই ঘটনা গত বছর প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। তিনি বলেছিলেন, দৃশ্যগুলো ধারণের সময় তাঁকে অনেকগুলো থাপ্পড় খেতে হয়েছিল। কারণ, থাপ্পড়ের শটগুলো ঠিকমতো হয়ে উঠত না।
ফারুক বলেন, ‘থাপ্পড় মারার শট ওকে না হওয়ার কারণে বারবার আলী যাকেরের হাতে আমাকে থাপ্পড় খেতে হচ্ছিল। প্রতিবার থাপ্পড় মেরে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ধরতেন। আমাকে আদর করে বলতেন, “ইশ্ রে, জোরে লেগেছে মনে হয়। মনে কষ্ট রেখো না।” আমি যতই তাঁকে বলি, ব্যথা পাইনি, কষ্ট নিইনি, তারপরও তিনি প্রতিবারই থাপ্পড়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছিলেন।’
‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকেও ফারুক আহমেদকে থাপ্পড় খেতে হয়। ঘটনাটা ছিল, একদল বিদেশি আসে একটি অচিন গাছ দেখতে। তাদের সঙ্গে আলী যাকের বসে কথা বলছেন। ফারুক আহমেদ কাজের ছেলে হয়ে তাদের কথার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন কথা বলেন। পরে আলী যাকের রেগে তাঁকে ডেকে দূরে নিয়ে গিয়ে থাপ্পড় মারেন।
সেই ঘটনা মনে করেন ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, ‘যাকের ভাই ছিলেন স্বাস্থ্যবান, তাঁর হাতের পাঞ্জা ছিল মোটা। সেদিন প্রথম থাপ্পড় খেয়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই। ব্যথায় আমার মাথা ঘুরতে থাকে। যাকের ভাই দ্রুত আমাকে তুলে নেন। দুঃখ প্রকাশ করেন। সেদিন সারাক্ষণ আমাকে আদর করে বলতে থাকেন, “মনে কষ্ট রাখিস না।” আলী যাকের আমাকে বোঝান, “যদি জোরে থাপ্পড় না মারতাম, দৃশ্যে বাস্তবতা প্রকাশ পেত না।’
১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকের। ২০ ফেব্রুয়ারি একটি আর ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ও সন্ধ্যায় দুটি শো হয়েছিল নাটকটির।
মঞ্চে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘বিদগ্ধ রমণীকুল’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও’।
‘আজ রবিবার’ ছাড়াও টিভিতে আলী যাকেরকে দেখা গেছে ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘দেয়াল’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটকে।