কাটপিসের যুগেও সাহস নিয়ে সিনেমায় আসা উচিত ছিল
সবে ছোট পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। সময়টা ১৯৯৯ সাল। সেই সময়েই প্রথম নাম লেখান ‘কাজল কালো দিন’ নামের একটি নাটকে। তারপর একের পর এক অল্প সময়েই ছোট পর্দায় কাজ করতে থাকেন। নাটকের অভিনয়ের দুই বছর পরেই নিয়মিত ডাক পড়ে এফডিসি ঘরানার সিনেমায়। সেই সময় সাহসের কারণে এফডিসির কমার্শিয়াল সিনেমায় নেই গোলাম ফরিদা ছন্দা। সেই আফসোস যেন আজও রয়ে গেছে।
বাংলা সিনেমার জন্য অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিয়েছিল ২০০০ সাল–পরবর্তী সময়। সেই সময়েই দেশের সিনেমায় একের পর এক অশ্লীলতা ও কাটপিস ঢুকে যায়, যা বেশ কয়েক বছর ধরে চলে। মূলধারার অনেক তারকা তখন সিনেমার এই স্রোতে গা ভাসাননি। সেই সময়েই সিনেমায় ডাক পড়ে ছন্দার।
ছন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিনেমার তখন মান্দা অবস্থা। সিনেমায় যাওয়া মানেই তখন ভদ্র পরিবারের মেয়েদের নেতিবাচক চোখে দেখা হতো। কারণ, চলচ্চিত্রকে কাটপিস নষ্ট করে দিচ্ছিল। তখন ময়ূরী, মুনমুন, নদীদের কথা সবচেয়ে বেশি শুনতেন দর্শকেরা। সামাজিক কোনো সিনেমায় তাদের দেখা যেত না। তখন সিনেমায় ডাক পড়ায় আর সাহস হয়নি অভিনয় করার।’
ক্যারিয়ারে তখন সুসময় পার করছিলেন। নাটকে তাঁর অনেক ব্যস্ততা ছিল। এদিকে প্রায়ই সিনেমার পরিচালকেরা তাঁকে অনুরোধ করতেন সিনেমায় নাম লেখাতে। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে পছন্দমতো ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, শাকিব খানদের সঙ্গে তখন কাস্টিং করার কথা বলতেন প্রযোজক ও পরিচালকেরা। ‘আমাকে পরিচালকেরা বলতেন, আপনি রাজি হন। আমরা আপনার পছন্দমতো নায়ক নেব। তখন জনপ্রিয় ছিলেন ফেরদৌস, রিয়াজসহ আরও অনেকে। শাকিব খান নতুন। কিন্তু ভালো করছিলেন। আমি পরিবারকে জানালাম। তারা চলচ্চিত্রের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ভালো চোখে দেখল না। নাটক করলে আপত্তি নেই, কিন্তু সিনেমা করা যাবে।’—কথাগুলো বলেন ছন্দা।
এই সময় তিনি আরও যোগ করলেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাকে বেশির ভাগ পরিচালক বলতেন আমি নাকি দেখতে ঋতুপর্ণার মতো। তাঁরা ঋতুপর্ণার জায়গায় আমার কথা ভাবতেন। তাঁরা বলতেন, “আপনি থাকতে কেন ঋতুপর্ণাকে নেব, ফেরদৌস, রিয়াজ কার সঙ্গে অভিনয় করতে চান বলেন।” কিন্তু কাটপিস আমার বাণিজ্যিক সিনেমার ক্যারিয়ারটা নষ্ট করে দিল।’
ইচ্ছা ছিল সিনেমার নায়িকা হওয়ার; কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরে সেই অর্থে আর সিনেমায় কাজ করার সুযোগ হয়নি। ২০১৭ সালে ‘অর্পিতা’ সিনেমায় নাম লেখান। নারীদের নিয়ে এই গল্পে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন ছন্দা। পরে তিনি ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘নকশী কাঁথার জমিন’, ‘কোন এক কালে’, ‘দুঃসাহসী খোকা’, ‘ভয়াল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘নিঃশব্দে’ সিনেমার কাজ।
ছন্দা বলেন, ‘কাটপিসের যুগেও সাহস নিয়ে সিনেমায় আসা উচিত ছিল। কারণ, আমরা তো বাছবিচার করেই সিনেমা করতাম। কিন্তু পরিবার নিরুৎসাহিত করার কারণে আর সাহস হয়নি। স্ট্যাটাসের কথা ভেবেই হয়তো সাহস হয়নি। হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, সময় একবার চলে গেলে সেটাকে আর ধরা যায় না। এ জন্য কিছুটা আফসোস হয়। কারণ, আমার শুরুতে সিনেমার যে প্রস্তাব পেয়েছি। সেই জায়গা চিন্তা করলে আজ সিনেমার ক্যারিয়ার আরও অনেক ভালো জায়গায় থাকার কথা ছিল।’