দিনরাত কাজ করে ১ হাজার ২০০ টাকায় কী...

মেহজাবীনের সঙ্গে প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ আবু জাফর। ছবি: ফেসবুক

নতুন বছরে পারিশ্রমিক কত হবে, সেই তালিকা প্রকাশ করেছে প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সেই তালিকা থেকে দেখা যায়, প্রোডাকশন বয়দের পারিশ্রমিক বাড়ছে না। কথা বলে জানা যায়, তাঁরা নিয়মিত কাজ চান। পাশাপাশি প্রযোজকদের কথা ভেবে কোনো পারিশ্রমিক বাড়াচ্ছে না শুটিংয়ের এই সংগঠন। আগের নির্ধারিত পারিশ্রমিকেই আগামী বছর কাজ করতে চায় তারা।

প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা এখনো নিয়মিত অনেকে কাজে ফেরেননি। এর কারণ প্রযোজকেরা নিয়মিত এখনো কাজ করছেন না। আমরা চাই, তাঁরা নিয়মিত কাজ করলেই আমরা খেয়ে–পরে বেঁচে থাকতে পারব। আমরা চাই না, নাটকের দুঃসময়ে পারিশ্রমিক বাড়াতে।’

শুটিংয়ের ফাঁকে খায়রুল বাসারের সঙ্গে প্রোডাকশন ব্যবস্থাপক হাসিব। ছবি: ফেসবুক

দেশে সবকিছুর দাম বাড়ছে। সেখানে শুটিং কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন এই প্রোডাকশন সহকারীরা। তবে বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান আবু জাফর। তিনি বলেন, ‘আমরা পারিশ্রমিক বাড়ালে প্রযোজকেরা হয়তো চাপে থাকবেন। দেখা যাবে বাজেট কিছুটা হলেও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ১ দিন কাজ করে ১০ দিন বসে থাকতে হবে। এ ছাড়া দুজনের কাজ একজনকে দিয়ে করাবেন প্রযোজকেরা। তার চেয়ে প্রযোজকেরা নিয়মিত কাজ করলে আমাদের জন্য ভালো। কম আয় হলেও নিয়মিত কাজ থাকলে সবাই কমবেশি ভালো থাকব।’

শুটিং চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন প্রোডাকশন সহকারীরা। শুটিংয়ের লোকেশন ব্যবস্থাপনা, যাতায়াত ব্যবস্থাপনা, শুটিংয়ে শিল্পী–কলাকুশলীরা কী খাবেন, সেগুলো ব্যবস্থাপনা করাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তাঁদের সেই অর্থে পারিশ্রমিক কখনোই বাড়ানো হয় না বলে জানান কয়েকজন ব্যবস্থাপক। মেরাজ হোসেন বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে কতজনের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। সবকিছুর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিশ্রমিক বাড়ানোর কথা বললে কাজে নিবে না। অন্যজন ঠিকই কাজ করবে। এই কষ্ট কাউকে বলা যায় না।’

টয়া ও ইরফান সাজ্জাদের সঙ্গে সহকারী ব্যবস্থাপক মিরাজ বুলেট
ছবি: ফেসবুক

এদিকে কেউ কেউ বলেন, কাজ কমে গেছে। বেকায়দায় পড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। শুটিংয়ের কাজ করার পাশাপাশি কেউ ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রোডাকশন ব্যবস্থাপক হাসিব মিয়া বলেন, ‘আমাদের খরচ বাড়ছে। কিন্তু শুটিং নিয়মিত না হওয়ায় বিপাকে আছি। শুটিং করে আর দিন যায় না। ব্যবসা–বাণিজ্য করব ভাবতেছি। পাশাপাশি শুটিংয়ের কাজও করব। শুটিংয়ে নিয়মিত কাজ না করলে পোষায় না। কষ্টে চললেও সংগঠনের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিব।’

প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, মিউজিক ভিডিও ও তথ্যচিত্রের ব্যবস্থাপকদের পারিশ্রমিক প্রতিদিন দুই হাজার টাকা। তাঁদের সহকারীদের ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া নাটকের ব্যবস্থাপক প্রতিদিন শুটিং করে পারিশ্রমিক পান ৩ হাজার টাকা, সহকারী ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ওভিসি, টিভিসি, রিয়েলিটি শো ও সিনেমায় প্রতিদিন ব্যবস্থাপকেরা পারিশ্রমিক পান ৫ হাজার টাকা, সহকারীরা পান ১ হাজার ৫০০ টাকা।

গত সপ্তাহে কথা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের একজন প্রোডাকশন সহকারী হাফিজের সঙ্গে। তিনি জানান, শুটিংয়ে সবার আগে আসতে হয় তাঁকে। কাজ থাকলে ভোর পাঁচটার দিকে তাঁকে শুটিংয়ের জন্য বের হতে হয়। কলাকুশলী বা লাইট ক্যামেরাসহ অন্যান্য টিম গাড়িতে তুলে শুটিংয়ে নিয়ে যেতে হয়। পরে শুটিংয়ে বিরতিহীন সব কাজই করতে হয়। শুটিং থেকে তারকা, অন্যান্য কলাকুশলীসহ অন্যরা সবাই চলে গেলে তাঁদের ছুটি মেলে।

হাফিজ বলেন, ‘আমাদের ১৬ ঘণ্টা তো সব সময়ই কাজ করতে হয়। এ ছাড়া টানা ২৪ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। দুই শিফটের টাকা তেমন একটা পাই না। অনেক সময় বাড়তি সময়ের কাজের জন্য আলাদা নাশতার টাকা ধরিয়ে দেয়। বসরা বেশি পায়। পারিশ্রমিক নিয়ে সবদিক থেকেই আমরা প্রোডাকশন বয়রা বঞ্চিত। দিনরাত শুটিং করে ১ হাজার ২০০ টাকায় কী হয় বলেন? সরকার পতনের পর মাসে ছয়–সাত দিন কাজ থাকে।’

আরও পড়ুন