সেদিন মনে হয়েছিল, আমি তো ভালো কাজ করছি: মোশাররফ করিম
গত ঈদে ‘গ্রামের ভাইরাল বউ’, ‘ভারপ্রাপ্ত বউ’সহ বেশ কিছু নাটক দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন মোশাররফ করিম। ইতিমধ্যে আবারও শুটিংয়ে ফিরেছেন। ঈদের নাটক, ঈদের ছুটি, ঈদ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন এই অভিনেতা।
গত কয়েক বছরের তুলনায় গেল ঈদে মোশাররফ করিমের কাজের সংখ্যা ছিল বেশি। ঈদে ৩০টির মতো নাটকে তাঁকে দেখা গেছে। পরে চার দিন বিরতি নিয়েছিলেন। সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন। মোশাররফ করিম বলেন, ‘বছরের বিভিন্ন সময় শুটিং করা অনেক নাটক ঈদে প্রচারিত হয়েছে। সবার মন রাখতে গিয়ে অনেক সময় বাধ্য হয়েও অনেক নাটকে অভিনয় করতে হয়েছে। অনেক বিষয় থাকে, যেগুলো মেনে নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। যার জন্য সংখ্যা বেশি।’
শুধুই কি ভাইরাল গল্প
ঘুরেফিরে ক্লিক করবে, ভাইরাল হবে, এমন নাটকের গল্পই বেশির ভাগ পরিচালক চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, এর সঙ্গে প্রযোজকের ব্যবসা জড়িত। বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার তাগাদা থাকে। যে কারণে সবাই সাধারণত বিনোদননির্ভর কাজগুলোই করতে চান। এমন চিত্রনাট্য বেশি পেয়েছিলেন মোশাররফ করিম। তিনি মনে করেন, কমেডি, মানবিকসহ সব ধরনের গল্প হতে হবে। তবে দর্শকের চাওয়াকে প্রাধান্য দিতেই হবে।
মোশাররফ বলেন, ‘কিন্তু হাসির গল্পও তো মানবিক। এটা তো নিছক কোনো গল্প নয়। এই অর্থে মানবিক যে নিছক হাসির গল্পটি যদি ঠিকঠাকভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তাহলে সেই গল্প বা সেই নাটক দেখে একজন বিষণ্ন মানুষ উপকৃত হয়। সেটা কিন্তু অনেক বড় অবদান। আমার নাটক দেখে অনেকবার অনেক জায়গা থেকে ফোন এসেছে।’
অভিনয় অনেক বড় কাজ
একবার নির্মলেন্দু গুণ অসুস্থ হয়ে বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সে সময় নাটক দেখে মোশাররফ করিমকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আপনার নাটক আমাকে আনন্দ দিয়েছে।’ সেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে মোশররফ বলেন, ‘সেদিন মনে হয়েছিল, আমি তো ভালো কাজ করছি। কারও মন খারাপ বা শরীর খারাপ থাকলে সেখানে নাটকটি ভূমিকা রাখছে। মন প্রফুল্ল করার জন্য নাটক কাজ করছে। অনেক ঘটনার মধ্যে আরেকটি ঘটনা বলি, একবার এক চিকিৎসক ফোন করেছিলেন। সেই চর্মরোগবিশেষজ্ঞ তখন কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি। সেখান থেকেই তিনি ফোন করে আমার কিছু নাটকের লিংক চাইলেন। আমি পাঠিয়ে দিই। নাটক দেখে তিনি ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলেন। সেদিনও মনে হয়েছিল, অভিনয় অনেক বড় কাজ। আমার নাটক দেখে কেউ একজন উপকৃত হচ্ছেন।’
চ্যালেঞ্জ নিতে চান
যেকোনো কাজের মধ্যেই চ্যালেঞ্জ থাকে। চ্যালেঞ্জ না থাকলে সেটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে না। এ কথা মোশাররফ করিমের। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আফসোস রয়ে গেছে। কারণ, তিনি পছন্দসই গল্প খুব একটা পান না। ‘যেকোনো কাজ নিয়েই কথোপকথনের ব্যাপার, আলোচনা, সমালোচনা—এগুলো সব সময়ই থাকে। কিন্তু বড় মুশকিলটা হচ্ছে, কোনো একটা কাজের জন্য অভিনেতা, পরিচালক থেকে শুরু করে সব কলাকুশলী একবিন্দুতে মিললে অন্য কিছু হয়ে ওঠে। কারণ, অনেক সময় দেখা গেল যে একটা গল্প অসাধারণ লাগল, কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল যে সেটা আর অসাধারণ হয়ে উঠল না। আবার সাদামাটা গল্পও অসাধারণ হয়ে ওঠে।’ বলেন এই দাপুটে অভিনেতা।
বিরক্ত ও সন্তুষ্ট মোশাররফ
নাটকের শুটিংয়ের জন্য খুব একটা বাড়তি সময় পাওয়া যায় না। চরিত্রায়ণের জন্য নেই সময়। টানা শুটিং করতে হয়। যা করার, শুটিংয়ের সময়ের মধ্যেই করতে হয়। এই সময়ে একটি চরিত্র হয়ে ওঠা কঠিন। মোশাররফ করিম বলেন, ‘যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা নাটকের শুটিং করি, সেখানে কাজ করে আনন্দিত হওয়ার সুযোগ কম। এর জন্য একটি পরিকল্পনার দরকার হয়। সেটা নাটকে অনেক সময়ই হয়ে ওঠে না। যে কারণে শুটিং করতে গিয়ে কখনো কখনো বিরক্ত হই, কখনো সন্তুষ্ট হই। তবে আমি সব সময় চেষ্টা করি, প্রতিটি কাজ থেকে আনন্দ আহরণ করতে। সেভাবেই অল্প সময়ের মধ্যে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
এত কাজ করে কী হবে
নাটকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে, এটা বহুবার মনে হয়েছে এই অভিনেতার। সেটা নাটক বেশি করছেন বলে নয়; বরং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই মনে হয়, এত কাজ করে কী হবে! কারণ, বিশ্রামের সুযোগ তেমন মেলে না। ঈদের পরই কিছু শিডিউল দেওয়া ছিল। সেগুলো করতে হয়েছে। সামনে একটি বিরতি নেব। তখন একটানা হয়তো ১০-১৫ দিন কাজে থাকব না। সময়টা নিজেকে দেব, পরিবারের সঙ্গেই থাকব।’
‘মহানগর ৩’ হতেই পারে
‘মহানগর ২’ মুক্তির পর শোনা যাচ্ছিল, পরবর্তী কিস্তি আসছে। তবে এটা নিয়ে নাকি তেমন কিছুই জানেন না এই অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘“মহানগর”–এর পরবর্তী কিস্তি আসবে কি না, আমি জানি না। এটা নিয়ে আশফাক নিপুণ বলতে পারবে। আমার জানামতে, একধরনের চিন্তাভাবনা তো ছিলই।’ এ সময় তিনি ওসি হারুন চরিত্র নিয়ে বলেন, ‘আমার পছন্দের দারুণ একটা চরিত্র। খুব মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বনির্ভর চরিত্র। পছন্দের চরিত্র করতে পারাটাই বড় পাওয়া। দিন শেষে মনে হয়, কাজটা করতে পারলাম। চরিত্রের মানসিকতার মধ্য দিয়ে যেতে পারলাম। এটা আমাকে এখনো আনন্দিত করে। এখনো মনে হয়, “মহানগর ৩” হতেই পারে।’