‘আগামী এক বছরের পরিকল্পনা করেছি’
কয়েক বছর ধরে মাসের ৩০ দিনই শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন আফরান নিশো। এক বছর ধরে এমন ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়েছেন। কাজ করেছেন ছক কষে। সময় দিয়েছেন নিজেকে। এরই ফাঁকে পছন্দের গল্পে টেলিভিশন চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেছে তাঁকে। বড় পর্দার জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ মাসেই শুটিংয়ে নামবেন। বছরের পর বছর যিনি অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তাঁর সময়টা কীভাবে কাটছে? নতুন কাজের প্রস্তুতি কীভাবে নিচ্ছেন?
ভাবনায় বড় পর্দা
নাটকে ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেছেন আফরান নিশো। এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে একাধিক নির্মাতাই তাঁকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর পরিকল্পনা করেন। অবশেষে গত বছরের শেষ দিকে কাঙ্ক্ষিত সেই চলচ্চিত্রের ঘোষণা আসে—সুড়ঙ্গ নামে চলচ্চিত্রটি তৈরি হবে চরকি ও আলফা আইয়ের যৌথ প্রযোজনায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুটিং শুরু।
নিশো বললেন, ‘২০–২২ বছরের ক্যারিয়ার। উপস্থাপক, মডেল হয়ে ২০০৫ সালে নাটকে কাজ শুরু। শুরু থেকেই দায়িত্ব ভেবেই কাজ করেছি। এমন না খুব আলাদা কাজ করেছি। যে কাজটা করেছি, মনোযোগ দিয়ে করেছি। একটা পর্যায়ে সবাই বলছিল, ফিল্ম করতে। আমারও মনে হয়েছে, কবে ফিল্ম করব। অভিনয় পেশা, আমার রুটিরুজি। পেশাদারভাবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সাহস বা ইচ্ছাটুকু তৈরি হয়নি। গত বছর তা হয়েছে। তাই নাটকের কাজ কমিয়ে দিই। একটা নতুন কিছু শুরুর আগে এমনটা করতে হয়। সুড়ঙ্গ কিন্তু ওটিটির জন্য হওয়ার কথা ছিল। পরে পরিচালক রাফি বলল, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র করতে চায়। রাজি আছি কি না। আমিও ভাবলাম, নাটকের কাজ কমিয়ে দিয়েছি। নিজেকে প্রস্তুত করছি। এখনো যদি চলচ্চিত্র না করি, তাহলে আসলে করা হবে না।’
আমরা তো কনটেন্ট নিয়ে কাজ করি। যে সময়টা দেওয়া হয়, সেই সময়ের মধ্যে নিজেকে প্রস্তুত করি। নাটকে সাধারণত বাজেট কম, ওয়েবে বাজেট বেশি। আমার কাছে আলাদা মাধ্যম মনে হয় না। মনে হয়, ভালো কনটেন্ট, গল্প নিয়ে কাজ করছি। হয়তো সেখানে ৩ দিনের জায়গায় ৩০ দিনের সময় পাচ্ছি। আর কিছুই না।
নাটক, ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রের পার্থক্য
নাটক, ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম—এই তিন মাধ্যমের সঙ্গে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পার্থক্য খুব একটা দেখেন না আফরান নিশো। সব মাধ্যমে অভিনয়টাই করতে হয়। কোনোটায় অল্প সময়ের প্রস্তুতি, আবার কোনোটায় পার্থক্যটা বেশি সময়ের।
নিশো বললেন, ‘আমরা তো কনটেন্ট নিয়ে কাজ করি। যে সময়টা দেওয়া হয়, সেই সময়ের মধ্যে নিজেকে প্রস্তুত করি। নাটকে সাধারণত বাজেট কম, ওয়েবে বাজেট বেশি। আমার কাছে আলাদা মাধ্যম মনে হয় না। মনে হয়, ভালো কনটেন্ট, গল্প নিয়ে কাজ করছি। হয়তো সেখানে ৩ দিনের জায়গায় ৩০ দিনের সময় পাচ্ছি। আর কিছুই না। আমাকে তো আসলে অভিনয়ই করতে হবে। আমার কাজ অভিনয় করা, টিমকে সন্তুষ্ট করা, নিজেকে সন্তুষ্ট করা, পরিশ্রম করা, যত্নশীল থাকা, সময়মতো কাজ করে টাকাটা সুন্দর করে বুঝে নেওয়া।’
শুধুই অভিনয়
টেলিভিশনের মানুষ আফরান নিশো নাটকে অভিনয় একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। তবে তাঁকে ওটিটিতে দেখা গেছে। চরকিতে সিন্ডিকেট ও হইচইয়ে কাইজার মুক্তি পেলে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। তবে এমনটা নয়, চলচ্চিত্রেই আগামী দিনে বেশি ব্যস্ত হবেন। নিশো বললেন, ‘এটা ঠিক, নাটক আমার জীবন থেকে কমে গেছে। কিন্তু এই নাটকই আমাকে তৈরি করেছে। একদিনে তা বাতিল ঘোষণা করতে পারব না। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যখন অনেক হবে, নিজেকে ওদিকটায় যুক্ত করব। ওটিটির কাজ পাঁচটা হাতে থাকলে তো ফিল্মের কাজ করতে পারব না। আর বছরে তিন–চারটা সিনেমার কাজ হাতে থাকলে অন্য কোনো কাজ করতে পারব না। আবার আগামী বছর যদি চলচ্চিত্রে কাজ কমে যায়, তাহলে নাটকের সংখ্যা বা ওটিটির সংখ্যা বাড়বে। আমি শুধু একের পর এক অভিনয় করে যাব।’
‘সুড়ঙ্গ’ শেষে ‘কাইজার টু’
কাইজার মুক্তির পর সবারই জিজ্ঞাসা ছিল, কবে আসবে সিজন টু? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন কাইজার চরিত্রে অভিনয় করা আফরান নিশো নিজেই, ‘সুড়ঙ্গ–এর পর কাইজার–এর দ্বিতীয় কিস্তির শুটিং শুরু করব। আগামী এক বছরের পরিকল্পনা করেছি। কাজের মাধ্যমে তা সবাই জানতে পারবেন।’
বিরতির পর
যেকোনো পরিবর্তন বা প্রত্যাবর্তনে সময় নিতে হয়। তবে এই সময় মানুষ বসেও থাকে না। অন্য কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে নেয়, বললেন আফরান নিশো। নাটকের কাজ কমিয়ে তিনিও তেমন কিছু করেছেন। এর মধ্যে সৈয়দ জামিল আহমেদের কাছে আড়াই মাসের কর্মশালা করেছেন। নিশোর মতে, কাজহীন জীবনে এমনিতে একটা পরিবর্তন আসে। তাঁর জীবনেও তেমনটা এসেছে।
নিশো বললেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে এতটা রিল্যাক্স সময় পার করিনি। এত বেশি নিজেকে নিয়ে ভাবিওনি। আবার অনেক বেশি কিছু ভাবছি, তা–ও না। বলতে পারি, ছোটবেলায় এমন সময় কাটিয়েছি। এটা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। কারণ, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা। প্রধান চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছি বলে এই সচ্ছলতা এসেছে। কিন্তু অভিনয়ের যে মানুষটা আর্থিকভাবে এতটা সচ্ছল নয়, সে হয়তো এভাবে ফ্রি সময় পার করতে পারত না। কী যে আরাম লাগে। ভালো লাগে। মনে হয়, এভাবে সারা জীবন কাটিয়ে দিই। আর কাজ করে কী হবে। তারপরও একটা কর্মশালায় অংশ নিয়েছি, জামিল স্যারের। স্তানিস্লাভস্কির অভিনয় নিয়ে যে বই আছে, তা পড়ে অভিনয়ের কিছু তত্ত্ব জানলাম। সারা জীবন তো পর্যবেক্ষণ থেকে অভিনয় করেছি। এই যে এখন একটা কর্মশালা করতে পারলাম, জামিল স্যারের মতো মানুষের সঙ্গে একটা যোগসূত্র তৈরি হলো, এটা আমাকে কতটুকু সহযোগিতা করবে, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু এটা তো আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। ভালো লেগেছে।’
ঘোরাঘুরি
গাড়ি চালাতে খুব ভালোবাসেন আফরান নিশো। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতেও ভালো লাগে। কিন্তু প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া খুব একটা সম্ভব হয় না। তারপরও এবার কুয়াকাটায় ঘুরতে গিয়েছিলেন।
বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই। রাত তিনটা–চারটার দিকে। গাড়ি টান দিয়ে চলে যাই। কেউ জানে না। বাবার সঙ্গে কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে চলে আসি। টাঙ্গাইলে শুয়ে আছেন তো। আবার নীরবে চলে আসি।
নিশো বললেন, ‘আমার মতো করে ঘুরি। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় গিয়েছিলাম পরিবার নিয়ে। বাইরে গেলে শুধু ঘুমানো হয়। প্রকৃতির সঙ্গে থাকার সুযোগ হয় না। একটা নির্জন দ্বীপ থাকলে ভালো হতো, যেখানে মনের আনন্দে ঘুরতে পারতাম। তবে মাস্ক পরে মুখ ঢেকে রাখি—তারপরও অদ্ভুতভাবে মানুষ আমাকে চিনে ফেলে।’ কথায়–কথায় নিশো জানালেন, প্রয়াত বাবার কবর জিয়ারত করতেও চলে যান গভীর রাতে। তিনি বললেন, ‘বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই। রাত তিনটা–চারটার দিকে। গাড়ি টান দিয়ে চলে যাই। কেউ জানে না। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলে চলে আসি। টাঙ্গাইলে শুয়ে আছেন তো। আবার নীরবে চলে আসি।’