কী করছেন তুষি?
৯ বছরের পেশাদার অভিনয়জীবন নাজিফা তুষির। ২০১৪ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার পর নাটকের অলিগলি পেরিয়ে একসময় চলচ্চিত্রে নাম লেখান। ২০১৬-তে মুক্তি পায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আইসক্রিম’। এরপর বড় পর্দায় আবার দেখা যায় গত বছর, হাওয়া সিনেমায়। ছবিটির ‘গুলতি’ চরিত্রে অভিনয় করে সবার ভালোবাসা আদায় করেন। সাড়া জাগানো সিনেমাটি মুক্তির বছর পেরিয়ে গেলেও এই নায়িকাকে নতুন কোনো চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। কী করছেন তাহলে? তারই খোঁজ নিয়েছে বিনোদন।
‘হাওয়া’ মুক্তির ১৪ মাস পার হতে চলছে। একটি সফল ও প্রশংসিত চলচ্চিত্র মুক্তির পর সাধারণত দেখা যায়, এত সময় পার হওয়ার আগেই সেই ছবির পাত্র–পাত্রীর একাধিক নতুন চলচ্চিত্রের ঘোষণা চলে আসে। শুটিংয়ের খবরেও থাকেন। কিন্তু কোথাও নেই ‘হাওয়া’র বেদেনী চরিত্রের গুলতি (নাজিফা তুষি)। তাহলে কোথায় এখন তুষি? না, তিনি হারিয়ে যাননি। তিনি প্রস্তুত হচ্ছেন। আসছেন ওয়েব সিরিজ, ওয়েব ফিল্ম নিয়ে। যেগুলোর শুটিং শুরু হবে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে। গত শুক্রবার তুষি প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমি প্রস্তুত হচ্ছি। বছর শেষে ব্যস্ততা শুরু হবে।’
‘হাওয়া’ মুক্তির পর অনেক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন নাজিফা তুষি। তবে কোনো ছবির পরিচালক–প্রযোজককে হ্যাঁ বলেননি, ‘সিনেমাটা আমার কাছে খুবই এক্সক্লুসিভ। তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছি। অবশ্যই পরের বছরে নতুন সিনেমার শুটিং করব। কথাবার্তা অনেকের সঙ্গেই চূড়ান্ত হয়েছে। অনেক পরিচালক ও প্রযোজক আমাকে নিয়ে কাজের ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন। ভালো চরিত্রের জন্য তাঁরা ভাবছেন। আমার তো মনে হয়, এটাই বড় পাওয়া। এটাই ‘হাওয়া’র প্রাপ্তি। তবে এখনই সিনেমা নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারব না। প্রযোজক–পরিচালকেরা সময়মতো জানাবেন।’
লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হওয়ার পর স্কুলজীবন থেকে অভিনয়শিল্পী হতে চাওয়া নাজিফা তুষির পথচলাটা সহজ হয়। তবে শুরু থেকেই তাড়াহুড়া চাননি। তাই ৯ বছরের পেশাদার অভিনয়জীবনে তুষির যত কাজ, তা হাতে গুনে ফেলা সম্ভব। চলচ্চিত্রের বাইরে ওয়েব ফিল্ম, সিরিজেও প্রশংসিত হন। এর মধ্যে চরকির ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘স্কুটি’ উল্লেখযোগ্য। তবে ‘হাওয়া’ তাঁকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়।
তুষি বললেন, ‘আমি একটু কম কাজ করি। তাই কাজগুলো আলোচনায়ও কম আসে। হয়তো হাওয়ার পর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। মানুষ এখন আরও বেশি জানতে চায়, যা খুবই ভালো দিক। এটা আমি সাধুবাদ জানাই। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমার কিছু কাজ হবে, যেগুলো ডেভেলপিং স্টেজে আছে। একটার পর একটা কাজ শুরু হবে। তবে অনেক সময় দুই–তিন মাস ভালো কাজের কোনো প্রস্তাব আসে না, আবার যে রকম কাজ করতে চাই, কোনো মাসে সে রকম পাঁচটারও প্রস্তাব পেয়েছি। ‘হাওয়া’র পর যে কয়টি কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, তা নিয়ে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যস্ত থাকব। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ফ্রি ছিলাম।’
অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখেননি নাজিফা তুষি। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি কর্মশালা করেছেন। এর মধ্যে সৈয়দ জামিল আহমেদের কাছে একটা শর্ট কোর্স ও আরেকটা মাস্টার্স কোর্স করেছেন। এর বাইরেও তাঁর কাছে অভিনয়, চিত্রনাট্য লেখা ও ভয়েস মডিউলেশনের অনেকগুলো কর্মশালা করেছেন। অভিনয়ে নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে প্রাচ্যনটের সঙ্গেও যুক্ত হন। কর্মশালায় পরিচালনার নানা কৌশল আয়ত্ত করলেও পরিচালনা নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা নেই। তবে লেখালেখিটা উপভোগ করেন বলে জানালেন তুষি। এর বাইরে অনলাইনে দেশ–বিদেশের বিভিন্ন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকের মাস্টারক্লাস করেছেন তিনি। তুষি বললেন, ‘শুধু মাস্টারক্লাস না, আমি অনেক সাক্ষাৎকারও দেখেছি। যখন যেটার সময় পাই, সেটাই দেখার চেষ্টা করি। জেমস ক্যামেরন, নাটালি পোর্টম্যান, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু, অনুরাগ কাশ্যপ, কোয়েন্টিন টারান্টিনো, জেমস ক্যামেরনের মাস্টারক্লাস দেখছি। পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের বড় বড় ইন্টারভিউ দেখেছি। শাবানা আজমীর জীবন নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি।’
অভিনয়ের বাইরে নাজিফা তুষির নানা বিষয়ে আগ্রহের ব্যাপারটা নজরে এসেছে হাওয়ার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনেরও। তুষিকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সার্চলাইটের মতো হঠাৎ জ্বলে উঠে হারিয়ে যাওয়া আলো তুষি নয়। সুমন প্রথম আলোয় লিখেছিলেন, ‘হাওয়া’র শুট শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনেক কাজের মধ্যে নিজেকে না জড়িয়ে তুষি ব্যস্ত হয়ে পড়ে থিয়েটার কোর্স নিয়ে। একটার পর একটা কর্মশালায় নিজেকে ব্যস্ত রাখে। তারপর আরও কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে পরিণত করার ছাপ আমরা দেখতে পারি। তুষি আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস ভৌতিক নয়। কোনো চরিত্র পেলে সেটাকে কীভাবে খুঁজে পাবে, তার জন্য সে হাতড়ে বেড়ায়।’
যেকোনো নতুন কাজ শুরুর আগে নাজিফা তুষি কিছু বিষয় প্রাধান্য দেন। তা কী, সেটা শোনা যাক তাঁরই মুখেই, ‘সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিই পরিচালক, আমার চরিত্র, তারপর দেখি টিমে কারা কারা আছেন। এরপর বাজেট ও সম্মানী—এটাই আমার কাজের প্রক্রিয়া। তবে ভালো নির্মাতা বলতে বোঝাতে চাইছি, খুব পরিচিত কেউ, তা কিন্তু না। নতুন একজনও হতে পারে, যে তার ভাবনা দিয়ে মুগ্ধ করবে বা মানসম্পন্ন হবে। যদি বুঝতে পারি যে এ কাজের সঙ্গে থাকলে ভালো হবে, নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে পারব, তবেই কাজটা করি। আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে বেশি আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কাজ করতে ভীষণ উদ্দীপ্ত হই, আনন্দ লাগে।’