পালিয়ে শুটিং দেখা ছোট শরীফুল যেভাবে অভিনেতা হলেন
‘বিভিন্ন চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করি। কিন্তু পর্দায় আমি পাকামো করলেই দর্শক বেশি পছন্দ করে। আমাকে নিয়ে সেই রকম গল্পই এখন বেশি হয়। আমারও পাকামি করতে ভালোই লাগে। কিন্তু আমি এক ধরনের অভিনয়ের মধ্যে আটকে থাকতে চাই না। ’—মজা করেই কথাগুলো বলল শিশুশিল্পী শরীফুল ইসলাম।
অভিনয় করবেন এমন স্বপ্ন তাঁরা দেখেননি তিনি। অথচ সেই অভিনয়ই তাঁর ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এখন তিনি পর্দার নিয়মিত মুখ। তাঁর অভিনয়ে আসার গল্প যেমন নাটকীয়, তেমনি তাঁদের ভাগ্যবদলের গল্পও নাটকের মতোই। শরীফুলের সেই অজানা গল্পই তুলে ধরা হলো। নাটক–সিনেমার মতোই বদলে যাওয়া জীবন পর্ব–৩। বদলে যাওয়া এই অভিনয়শিল্পীরা কেউ আগে প্রোডাকশন সহকারী, কেউ শুটিং টিমে চা-বিস্কুট সরবরাহ করতেন, কেউ শুটিংয়ে ভাড়া দিতেন নানা কিছিমের জিনিস। আগে স্বপ্ন না দেখলেও তাঁরা এখন চেষ্টা করে যাচ্ছেন অভিনয়শিল্পীর পরিচয়টা ধরে রাখতে।
গাজীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান শরীফুল ইসলাম অবশ্য নাটকের প্রোডাকশনে ছিল না। হোতাপাড়ার খতিব খামারবাড়ি এলাকায় চা–বিস্কুটের দোকান ছিল তার বাবার। সেখানে সব সময় বসে থাকত শরীফুল। কেউ চা–বিস্কুট চাইলে শরীফুল হাজির। বাবার দোকানে ও দোকানের আশপাশে প্রায়ই শুটিং হতো। কখনো শুটিংয়ে আসা শিল্পী, কলাকুশলীদের চা–বিস্কুট পৌঁছে দিত শরীফুল আর লুকিয়ে দেখত শুটিং। মনে মনে ভাবত, অভিনয় বড়লোকের ব্যাপার-স্যাপার। এভাবেই একদিন চায়ের দোকানের পাশে ছোট্ট শরীফুলকে দেখে চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানের পছন্দ হয়। ছেলেটির বাবাকে খুঁজতে থাকেন। পরে শরীফুলের বাবার সঙ্গে কথা বলে তাকে অভিনয়ের জন্য নিয়ে যান। শরীফুল প্রথম অভিনয় করেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের নাটকে। তার পর থেকে বাচ্চাদের চরিত্রে কাউকে প্রয়োজন হলেও ডাক পড়ত শরীফুলের।
তবে পরিচিতি তখনো হয়নি। এর মধ্যেই অমিতাভ রেজার বিজ্ঞাপনচিত্রের ডাক পায় শরীফুল। সেই বিজ্ঞাপনে ‘হু টোল্ড ইউ, অয়েল ইওর ওন মেশিন’ সংলাপটি শরীফুলকে জনপ্রিয় করে তোলে। এখন সে নাটকের পরিচিত মুখ। অভিনয় করেছে সিনেমাতেও। শরীফুল বলে, ‘অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল না। এখন আমার অভিনয়ের আয় দিয়েই সংসার চালাই। পরিবারের জন্য অভিনয় করে কিছু করতে পারছি, এটা আমার ভালো লাগে। আরও ভালো কাজ করতে চাই।’ এক সময় অভিনয়ে শরীফুলের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। তার বাবা দোকান করা কমিয়ে দেন। ছেলেকে নিয়ে ছুটে চলেন ঢাকাসহ দেশের শুটিং ইউনিটে। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন তার বড় ভাই আরিফুল ইসলাম তাকে শুটিংয়ে নিয়ে আসেন। এখন তাকে কেন্দ্র করেই একাধিক গল্প হচ্ছে।
এখন শরীফুল নিয়মিত অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান। তার আয় দিয়েই চলে পরিবারের খরচ। এজন্য পরীক্ষা ছাড়া অভিনয়ে তেমন বিরতি দিতে পারেন না। তিনি জানান, নির্মাতারা ভালোবেসে তাকে ‘পেমেন্ট’ বেশি দেন। অভিনয়ের সব উপার্জন আগে বাবার কাছে দিত শরিফুল। ২০১৯ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক দিন এই খুদে শিল্পী শুটিংয়ে মন বসাতে পারেনি। এখন সব সে তুলে দেয় মায়ের হাতে। পরিবারের অনেক আর্থিক সংকট পূরণ করে তার অভিনয়ের এই টাকা। শরিফুলের ইচ্ছা বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। সমাজের মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করার জন্য কাজ করবে। ‘আয়নাবাজি’ সিনেমা কিংবা ঢাকা মেট্রো ওয়েব সিরিজসহ একাধিক কাজ দিয়ে তিনি দর্শকদের কাছে পরিচিতি বাড়িয়েছেন।