কণ্ঠ শুনে আপনাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে...
মুমতাহিনা টয়া: ঠিক বলেছেন। ১ আগস্ট থেকে আমি অসুস্থ। শুরুতে ডার্স্ট অ্যালার্জি। এর মধ্যে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। রাস্তায় ছিলাম, স্লোগান দিয়েছি। এরপর জ্বর–ঠান্ডা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করলাম। কোভিড বা ডেঙ্গু কিছু নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে থাকছি।
‘বাক্স্বাধীনতার জন্য লড়াই হলো, কিন্তু প্রয়োগ করা এখনো যাচ্ছে না।’ এমন পোস্ট লেখার কারণ বলবেন কি?
মুমতাহিনা টয়া: আমাদের দর্শক তথা দেশের মানুষ সব সময় নানা রকমের মতাদর্শের মধ্যে থাকেন। সকালেও একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, গতকাল (বৃহস্পতিবার) এবং গত কয়েক দিনে যা দেখছি, তা নিয়ে। যদিও আমি ওদের দোষ দেব না কারণ ওরা ছোট মানুষ, ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ধৈর্য হারাচ্ছে রাস্তাঘাটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে তল্লাশি করে না, ওরা সেভাবে করছে! একটা পর্যায়ে আমার কাছে বিষয়গুলো একটু বেশিই বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। গতকাল ধানমন্ডি ৩২ ঘিরে যা ঘটল, দুজন বয়স্ক মানুষকে কান ধরে ওঠবস করানো, সে যে–ই হোক। এরপর তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া! ভিন্নমতের মানুষকে দমন করার একটা মানসিকতা দেখেছি, যা থেকে আমরা মুক্ত হতে চেয়েছি। এ জন্যই সকালে ফেসবুকে লিখেছি, ‘একজন মিলেনিয়াল থেকে একজন জেন–জিকে একটা পরামর্শ, লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়ে যায়।’ ওই পোস্টের নিচে আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হলো। সবকিছু মিলিয়ে লেখা।
অনেকেই বলছেন যে সমালোচনা আরও কিছুদিন পর করলে ভালো হতো। কী মনে করছেন?
মুমতাহিনা টয়া: এমনটাও শুনছি। আরে ১৫ বছর আগে বলতে পারিনি, এই ভুলের কারণেই তো ব্যাপারটা ১৫ বছর গড়িয়েছে। ভুল শোধরানোর জন্যই তো আন্দোলন করেছি। এখন আমরা যদি শুরুতেই বলতে না পারি যে এখানে সমস্যা, ওখানে সমস্যা, এটা ঠিক নয়, ওটা ঠিক নয়, তাহলে ১৫ বছর পর আর বলা যাবে না। আমি মনে করি, সমস্যার কথা শুরু থেকেই বলতে হবে। কারণ, ভুল শোধরানোর এখনই সময়। তাই প্রথম দিন থেকেই বলার মানসিকতা থাকতে হবে। অনেকেই বলছেন, আপনারা ১০ দিন, ১৫ দিনও সময় দিচ্ছেন না, অথচ ১৫ বছর ধরে ওদের সহ্য করছেন, দালালি করছেন! ওদের পক্ষে ছিলেন। এটা আসলে ১০ কিংবা ১৫ দিনের ব্যাপার নয়, আমাদের মধ্যে যে হিংসাত্মক মনোভাব এখনো আছে, ওটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। তা না হলে তরুণ প্রজন্ম, তুমি বা তোমরা যেটার জন্য লড়াই করেছ, বাক্স্বাধীনতা ফিরে আসুক, অনিয়ম দূর হোক, সবাই শান্তিতে থাকুক, দুর্নীতিমুক্ত দেশ হোক; এখন তুমিই যদি স্বৈরাচারীদের মতো একই পথে হাঁটো, আমরা বলার পর যদি গ্রহণ করতে না পারো, তাহলে কেমনে কী? যে মানুষ তোমাদের ডাকে রাস্তায় নামলাম, তোমাদের সমালোচনা করায়, গালি খাচ্ছি তোমাদের। তাহলে কি আমরা চুপ করে বসে থাকব? আমার কথা হচ্ছে, আমি যা লিখছি, সেটা তোমাদের কাজের মাধ্যমে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করো। গালি দিতে পারো না, দালাল বলতে পারো না, ‘চুপ করো’ বলতে পারো না।
আরেকটা বিষয়। এত দিন যাঁরা চুপ ছিলেন, তাঁরা যে এখন বলছেন, তাতে দোষের কিছু দেখছি না। গর্তে ছিলেন নাকি? সুশীল সমাজ নাকি? এমন কথা বলতে পারি না। সুশীল সমাজটাকে গালি বানিয়ে ফেলছি। গঠনমূলক সমালোচনাও করতে পারছি না। আসলে আমরা এই ধরনের চর্চার মধ্যে অনেক আগে থেকেই আছি, বিশেষ করে নারী শিল্পীরা প্রতিনিয়ত কিছু বললেই নিগ্রহের শিকার হচ্ছি, একটা স্বাভাবিক ছবি পোস্ট করলেও অনেক আক্রমণাত্মক মন্তব্যের শিকার হচ্ছি। তারপরও আমি খুবই ইতিবাচক, মনে করছি, ভালো সময় আসবে। সবার মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
কাজের খবর বলুন।
মুমতাহিনা টয়া: আমি এক বছর ধরে নাটকে অভিনয় থেকে দূরে আছি। সিনেমার জন্য বলুন বা ওটিটির জন্য, অপেক্ষা করছি। আর দেখছি, কেমন কাজ হচ্ছে। কেমন কাজ দর্শকেরা পছন্দ করছেন, তা–ও বোঝার চেষ্টা করছি। আমি আসলে নিজেকেও বুঝতে চাই। এত বছর অভিনয় করছি, এটাকে আরও কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটাই ভাবছি। একাধিক ছবি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে তখন জানাব।