ভাগ্যিস চা খেতে গিয়েছিলেন প্রান্তর
ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে চেয়েছিলেন প্রান্তর দস্তিদার। কিন্তু নিয়তি তাঁকে নিয়ে এসেছে অভিনয়ে। ‘তিথিডোর’, ‘নতুন প্রেমের গল্প’সহ পবিত্র ঈদুল আজহায় তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি নাটক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তরুণ এই অভিনেতাকে নিয়ে লিখেছেন লতিফুল হক
চায়ের আড্ডায় তো কত কিছুই হয়। তবে প্রান্তর দস্তিদারের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুই ঘটনার সঙ্গে চা-যোগ আছে। রাজধানীর নিকেতনের এক দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন তিনি, সব সময় যেমন যান। নির্মাতা গৌতম কৈরীর এক সহকারী সেখানেই দেখেন প্রান্তরকে। ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন নির্মাতাকে। প্রান্তর সেটা বুঝতেই পারেননি। নির্মাতার পছন্দ হয়। প্রান্তর অভিনয় করেন চরকির ওয়েব ফিল্ম ‘আন্তঃনগর’-এ। ব্যস, এভাবেই ক্যামেরার পেছনে কাজের স্বপ্নে বিভোর প্রান্তরের অভিনয়ের শুরু। ‘আন্তঃনগর’-এ তাঁর জুটি ছিলেন নিদ্রা নেহা। কাজ করতে করতে দুজনের প্রেম হয়, এরপর বিয়ে। চা খেতে গিয়ে অভিনয়ের সুযোগ আর সেই সূত্রে মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া—দুইই হয়েছে প্রান্তরের। তাই এ কথা বলাই যায়, ভাগ্যিস চা খেতে গিয়েছিলেন প্রান্তর!
চট্টগ্রামের ছেলে প্রান্তর ঢাকায় এসে ভর্তি হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবনে স্বপ্ন ছিল চিত্রনাট্য লেখার, নির্মাণের, সুযোগও মিলে যায়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আর পাঠশালার যৌথ উদ্যোগে একটি বৃত্তি পান। এটা ২০১৬-১৭ সালের ঘটনা। এই বৃত্তির আওতায় সহকারী পরিচালক হিসেবে ব্র্যাকের বিভিন্ন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, চিত্রনাট্য কর্মশালায় কাজ করেন। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে লাইন প্রোডিউসার, সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়মিত কাজ করেছেন। মধ্যে কিছুদিন ছিলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থাতেও। তবে ঘটনাচক্রে অভিনয়ে এসে এই পেশার প্রেমে পড়ে গেছেন প্রান্তর। সেটা কেমন, শোনা যাক তাঁর ভাষ্যেই, ‘আন্তঃনগর’-এ কাজ করতে করতেই মনে হয়, নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকলে যেমন সবকিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়, অভিনয়ের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। কেবল নিজের চরিত্র আর গল্পের মধ্যে থাকলেই হলো। সিনেমার কাজ শেষ হওয়ার পর অভিনয় মিস করছিলাম। এই উপলব্ধির পর সিরিয়াসলি অভিনয় নিয়ে ভাবতে শুরু করি।’
‘আন্তঃনগর’-এর পর বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্র ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। দেশের প্রখ্যাত এক নির্মাতার ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। অনুমতি না থাকায় সেটা প্রকাশ করলেন না। তবে গত ঈদ বলতে গেলে অভিনেতা হিসেবে চিনিয়েছে প্রান্তরকে। ভিকি জাহেদের আলোচিত কাজ ‘তিথিডোর’-এ ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তাঁকে দেখা গেছে ‘নতুন প্রেমের গল্প’, ‘তোমায় আমায় মিলে’ ইত্যাদি নাটকে।
গতকাল মুক্তি পাওয়া বঙ্গ অরিজিনালস ‘ইন আ সিচুয়েশনশিপ’-এও ছিলেন প্রান্তর।
ঈদে গৌতম কৈরী, মাবরুর রশিদ বান্না, ভিকি জাহেদসহ দেশের প্রথম সারির নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন প্রান্তর। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন এই তরুণ। প্রান্তর বলছিলেন, ‘শুরুর দিকে সবারই পরিচালকের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা উচিত। প্রত্যেক নির্মাতারই আলাদা কাজের ধরন থাকে। আমি নির্মাতার দর্শন বুঝে চেষ্টা করি চরিত্রটিকে ধারণ করতে। এ পর্যন্ত যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, সবাই খুব সাহায্য করেছেন।’
প্রান্তর অভিনয় শিখে আসেননি। কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে? জানান, কোনো চরিত্রের ধরন, হাঁটাচলা থেকে জীবনযাপন যদি তিনি ভিজ্যুায়ালাইজ করতে পারেন, তবে সেটা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সমস্যা হয় না। সে জন্য চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার পর বারবার পড়েন, যতটা সম্ভব চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেন। প্রান্তর মনে করেন, দীর্ঘদিন ক্যামেরার পেছনে কাজের অভিজ্ঞতা তাঁকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। ক্যারিয়ারের আরও পরের দিকে নির্মাণে ফিরতে চান তিনি, তবে আপাতত ধ্যানজ্ঞান শুধুই অভিনয়।
আলাপে আলাপে জানান, অভিনয়দক্ষতা বাড়াতে নিজের মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ‘প্রতিটি দিন নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছি। প্রচুর কাজ দেখছি, পড়ছি। কণ্ঠ নিয়ে অনুশীলন করছি। অনেকে আছেন সহজাত অভিনেতা, কাজটা তাঁদের জন্য সহজ। আমার ব্যাপারটা এমন নয়। আমি পরিশ্রম করেই একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই। নিজেকে সমৃদ্ধ করার এই প্রতিক্রিয়া, পরিশ্রম আমি উপভোগ করছি’, বললেন প্রান্তর।
আলাপে আলাপে চলে এল নেহার প্রসঙ্গ। নিজের ঘরেই যেহেতু এই পেশার আরেকজন আছেন, তাঁর সঙ্গে কি কাজ নিয়ে কথা হয়? প্রান্তর বলেন, ‘আমার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক ও, আবার ভালো হলে বেশি প্রশংসা নিদ্রাই করে। আমরা দুজনই পরস্পরের কাজ নিয়ে আলোচনা করি। এটা দুজনের জন্য ইতিবাচক।’ ‘আন্তঃনগর’-এ জুটি হয়েছিলেন দুজন, এরপর হয়েছেন বাস্তবেও। আবার কি তাঁদের একসঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে? হাসতে হাসতে প্রান্তর বললেন, ‘আশা করি, দেখা যাবে, কবে সেটা হবে, এখনই বলতে পারছি না। আমি তো খুব করে চাই।’