মাশরাফি জুনিয়র: নতুন মাইলফলকের সামনে
বাংলা টিভি নাটকের মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে ‘মাশরাফি জুনিয়র’। ২৬ মার্চ দীপ্ত টিভিতে নাটকটির এক হাজারতম পর্ব প্রচারিত হবে। এমন একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত নাটকটির নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরা।
‘মাশরাফি জুনিয়র’-এর নির্মাতা সাজ্জাদ সুমন বলেন, বাংলাদেশি টিভি দর্শকদের বড় একটি অংশ ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিপুল দর্শক দেশীয় চ্যানেল দীপ্ত টিভিতে ‘মাশরাফি জুনিয়র’ দেখছেন কিংবা অন্য কোনো নাটক দেখছেন। বাংলা নাটকে এটা অবশ্যই একটি মাইলফলক।
গ্রামের এক কিশোরী মেয়ে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো হতে চায়। এ জন্য দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই ও নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে স্বপ্নপূরণে অবিচল মেয়েটি। সেই মেয়েকে কেন্দ্র করেই নাটকটির গল্প এগিয়ে যায়, তৈরি হয় নানা রহস্য, সন্দেহ, জটিল ও কুটিল পরিস্থিতি।
মনি চরিত্রে নাটকটির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করছে নবম শ্রেণিপড়ুয়া কিশোরী সাফানা নমনি। সে বলে, ‘আমি অনেক লাকি। ‘মাশরাফি জুনিয়র’ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সেটা অভিনয় হোক বা ক্রিকেট। আমার প্রথম নাটকে দর্শকদের এত ভালোবাসা পাব, এটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।’
সাফানা নমনির বিপরীতে আয়ান চরিত্রে অভিনয় করে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন তরুণ অভিনেতা সোহেল তৌফিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সোহেল তৌফিক বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার মায়ের চোখ অপারেশনের জন্য ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে যাই। সেখানকার নার্স ও স্টাফরা নাটকের আয়ান হিসেবে আমাকে চিনতে পারেন। সবাই আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেন ও সেলফি তোলেন। পরে তাঁরা আমাকে হাসপাতালের কাজেও সহযোগিতা করেন। এ ঘটনায় আমি অভিভূত হয়েছি।’
হাজার পর্ব ছোঁয়ার আগে ধারাবাহিকটি নিয়ে যখন আলোচনা, তখন প্রশ্ন ওঠে, এর আগে আর কোনো ধারাবাহিক নাটক হাজার পর্ব ছুঁয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আলাপ হয় নাট্যনির্মাতা হারুন রুশোর সঙ্গে। তিনি অলসপুর নাটকের সন্ধান দেন। সেই সূত্রে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ‘অলসপুর’ নাটকের পরিচালক আল হাজেন বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাঁর নাটকটি আরটিভিতে প্রচারিত হয়েছে। ১ হাজার ৫৬ পর্ব হওয়ার পর নাটকটি শেষ হয়েছে।
নির্মাতা আল হাজেন আরও বলেন, ‘যেকোনো ধারাবাহিকের জন্য এক হাজার পর্ব স্পর্শ করা নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকটি এক হাজার পর্ব প্রচারিত হতে যাচ্ছে জেনে ভালো লাগছে। টিভি ধারাবাহিক নাটকে এটিও একটি ইতিহাস।’
‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য সম্পাদনা করছেন আহমেদ খান হীরক। চিত্রনাট্য লিখছেন আসফিদুল হক। সংলাপ সাজান মো. মারুফ হাসান। আবহ সংগীত করেছেন আশু চক্রবর্তী। বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, গোলাম ফরিদা ছন্দা, চিত্রলেখা গুহ, সমু চৌধুরী, শহীদুল আলম সাচ্চু, রোজী সিদ্দিকী, দীপা খন্দকার, মনিরা মিঠু, শেহজাদ ওমর, মিতুল রহমান, মাইশা মাসফিকা তানিসা, আফ্রি সেলিনা, মিম চৌধুরী, জুয়েল জহুর, কাজী শিলা প্রমুখ। নাটকটি প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটায় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হয়।
নাটকটি বাণিজ্যিকভাবেও সফল উল্লেখ করে দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘নাটকটির দর্শকচাহিদা বেশ ভালো। দেশে এখন যতগুলো ধারাবাহিক চলছে, এর মধ্যে ‘মাশরাফি জুনিয়র’-এর দর্শক সর্বোচ্চ। অনলাইন থেকেও ভালো রেভিনিউ হচ্ছে। নাটকটির নির্মাণ খুবই চমৎকার। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পীরাও বেশ ভালো কাজ করছেন।’
৯ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দীপ্ত টিভি ভবনের ষষ্ঠতলায় গিয়ে দেখা যায়, শুটিং সেটে চিত্রলেখা গুহ সংলাপ বলছেন, তা ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর গোলাম ফরিদা ছন্দার অভিনয় ধারণ করা হয়। পাশে বসে থেকে তা পর্যবেক্ষণ করছিলেন নির্মাতা। সেখানে আলাপকালে নাট্যকার সাজ্জাদ সুমন বলেন, পাঁচ বছর আগে শুরুর দিকে নাটকটি যে পরিমাণ দর্শক দেখেছেন, যেমন জনপ্রিয় ছিল, এখনো তেমনই জনপ্রিয় আছে। দুই বাংলাতেই নাটকটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কলকাতার অনেক দর্শক নাটকটি দেখেন। বেশ কয়েকবার নাটকটি শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু দর্শকদের চাহিদা, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউবে ভিউয়ের পরিমাণ দেখে নাটকটি শেষ করতে পারেননি। আর এখন সফলভাবে হাজার পর্ব ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মাইদুল ইসলাম। ব্যস্ততার কারণে টিভিতে নাটকটি দেখার সুযোগ পান না। তবে ইউটিউব থেকে নিয়মিত নাটকটি দেখেন। নাটকটি তাঁর বেশ ভালো লাগে। সব পর্বই দেখেছেন বলে জানান তিনি।
দীর্ঘ পর্বের টিভি ধারাবাহিক নাটকের তালিকায় ‘মান অভিমান’, ‘গুলশান এভিনিউ’, ‘শান্তি মলম ১০ টাকা’ ও ‘পালকি’ উল্লেখযোগ্য। নাট্যকার ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘কোনো নাটক এক হাজার পর্ব হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেই নাটকটি এত দূর পর্যন্ত এসেছে। এ জন্য দীপ্ত টিভি, নাটকটির নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’