ভ্রমণ, নাটক আর চলচ্চিত্র নিয়ে অপূর্ব

গত বছরের শেষ দিকে ‘পথে হলো দেরী’ নাটক দিয়ে আলোচনায় ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। একই সময়ে প্রকাশিত হয়েছে অপূর্ব অভিনীত ইউটিউব ফিল্ম ‘ডার্ক জাস্টিস’-এর ট্রেলার। এদিকে গত ২৮ ডিসেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন অপূর্ব। গত মঙ্গলবার সেখান থেকেই ক্যারিয়ার ও নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে বিনোদন

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শাম্মা দেওয়ানকে বিয়ে করেন অপূর্ব। গত ৩১ ডিসেম্বর ছিল তাঁর স্ত্রীর জন্মদিন। বিশেষ দিনটি উদ্‌যাপন করতে ২৮ ডিসেম্বর উড়াল দিয়েছেন দুবাইয়ের উদ্দেশে। ভ্রমণপিপাসু এই অভিনেতা এবারই প্রথম স্ত্রীসহ দুবাইয়ে গেলেন। জানালেন, দারুণ সময় কাটছে তাঁদের। বিয়ের পর এবার তাঁর স্ত্রীর তৃতীয় জন্মদিন। অপূর্ব বললেন, ‘তিন বছর কীভাবে পার হলো, টেরই পেলাম না। সময় কত দ্রুত যায়। এক সপ্তাহের বেশি এখানে আছি। ঘোরাঘুরি চলছে।’

অপূর্ব। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে

ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে অপূর্বকে সবচেয়ে বেশি টানে প্রকৃতি। তবে মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও মন্দ লাগছে না। কথায় কথায় বললেন, ‘দুবাই তো ম্যান মেইড সিটি। এখানেও যা যা দেখার, দেখছি। ঘুরছি। সমুদ্রসৈকতগুলো বেশ ভালো লাগছে। পাম আইল্যান্ডেও ছিলাম।’ ভ্রমণ বরাবরই অপূর্বর পছন্দ। কথায় কথায় সেটাও মনে করিয়ে দিলেন এই অভিনয়শিল্পী। বললেন, ‘ঘোরাঘুরি খুব উপভোগ করি। বিখ্যাত সব জায়গা এক্সপ্লোর করি। স্থানীয় খাবারের সঙ্গে পরিচিত হই; সেখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। এবার তো সাফারিতে গিয়েছিলাম। মরুভূমির মধ্যে এমন অনেক কিছু দেখলাম, যা আগে দেখা হয়নি। ভ্রমণ মনকে চাঙা করে; আগে চিকিৎসকেরা বলতেন না, “হাওয়া বদল”। ভ্রমণ আসলেই তা-ই। কাজ করতে করতে একঘেয়েমি ও ক্লান্তি এলে ভ্রমণ নিমেষেই নতুনভাবে মন ও শরীর সতেজ করে দেয়। আবার কাজকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্যম দেয়।’

আরবের খাবারদাবার অপূর্বর বরাবরই দারুণ লাগে। তাই তো দুবাইয়ে সেই খাবারের স্বাদ নেওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেননি। বললেন, ‘ওদের বারবিকিউ খুব এনজয় করি। ওটাই আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগছে আরকি।’ তবে অপূর্বর মতে, ভ্রমণের জন্য সব সময় বিদেশ হতে হবে, এমনটা মোটেও নয়। ছোট্ট একটি চা-দোকানের সামনেও এক কাপ চা খেয়ে দারুণ একটা আড্ডা একজন মানুষকে চাঙা করতে পারেন। বললেন, ‘আমি সব সময় বলি, ভ্রমণে জায়গাটা ব্যাপার নয়। অনেক দামি জায়গা অনেক সময় ভালো লাগে না। ভ্রমণে সঙ্গী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যার সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া; তার সঙ্গে রাস্তার পাশে আড্ডা দিচ্ছি, চা খাচ্ছি এতেও দশটা দেশ ঘোরার চেয়ে বেশি আনন্দ হয়। আসল কথা হচ্ছে, যার সঙ্গে ঘুরছি, তার মনমানসিকতা কেমন, অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে, এটাই ম্যাটার করে।’

‘পথে হলো দেরী’র দৃশ্য। ছবি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে

প্রসঙ্গ ‘পথে হলো দেরী’
জাকারিয়া সৌখিন পরিচালিত ‘পথে হলো দেরী’ নাটকটি বছরের শেষ দিকে বেশ আলোচনায় এসেছে। এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে অপূর্বও নতুন করে আলোচনায়। নাটকের ‘রোমান্টিক বয়’ অপূর্ব যেন এই নাটকে আরও বেশি রোমান্টিক হয়ে ধরা দিলেন। এই নাটক প্রসঙ্গে অপূর্ব বললেন, ‘বেশ ভালোবাসা ও সাড়া পাচ্ছি। দেখতে ভালো লাগবে (ফিল গুড) কনটেন্ট তো। সবাই আনন্দ নিয়ে দেখেছেন। পুরো টিম অনেক পরিশ্রম করেছি। খুব সুন্দর কিছু জায়গা দেখানোর চেষ্টা করেছি। কক্সবাজারকে অন্যভাবে দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

সাধারণত নাটকে কক্সবাজার সমুদ্রটা দেখানো হয়। এটাতে অন্য এক কক্সবাজার দেখানো হয়েছে। এই নাটকের জন্য নির্জন, কিছুটা বিচ্ছিন্ন জায়গা চেয়েছি, যেখানে লোকজন কম থাকেন। যতটা ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন, ততটাই গেছি; শুটিংয়ের জন্য সমুদ্রের গভীরেও যাওয়ার চেষ্টা ছিল। এ ছাড়া সংলাপ, গল্পও ভালো ছিল; গানটাও দারুণ। মানুষের কাছ থেকে খুব ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।’ অনেক অনেক ধরনের কথা বললেও এর মধ্যে কিছু কিছু কথা অপূর্বকে নাড়া দিয়েছে। অনেকে বলছেন, ব্যস্ততার কারণে সাধারণত পুরো নাটক টেনে টেনে দেখা হয়। কিন্তু এটা টানা বসে দেখেছেন; একটা সেকেন্ডও চোখ সরাননি। দর্শকের এ কথাগুলো অপূর্বর ভালো লেগেছে।

এবার ‘পথে হলো দেখা’
‘পথে হলো দেরী’ নাটকটির জন্য টানা ১১ দিন শুটিং করেছেন অপূর্ব। জানালেন, বেশ বড় আয়োজনে  কাজটি হয়েছে। সামনের ভালোবাসা দিবসে যে নাটকটি আসবে, সেটি আরও বড় আয়োজনে হবে। একই পরিচালকের এ নাটক নিয়েও বেশ আশাবাদী অপূর্ব। জানালেন, এটি আসলে ত্রয়ী নাটকের অংশ; প্রথমটি ‘পথে হলো পরিচয়’, দ্বিতীয়টি ‘পথে হলো দেরী’, শেষটি ‘পথে হলো দেখা’। অপূর্ব বললেন, ‘নাটকে এমনটা সচরাচর হয় না। সৌখিন এটাই ভেবেছে, যেটা হয়নি আগে। আমার সঙ্গেও যখন ভাবনাটা শেয়ার করেছে, বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে।’

অপূর্ব। ফেসবুক থেকে

প্রসঙ্গ ‘ডার্ক জাস্টিস’
নাটকের পাশাপাশি অপূর্ব ওয়েব ফিল্মেও অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত ওয়েব ফিল্ম প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার তাঁকে একটি ইউটিউব ফিল্মে দেখা যাবে। এটি পরিচালনা করেছেন তপু খান। অপূর্বকে নিয়ে তিনি বানিয়েছেন ‘ডার্ক জাস্টিস’। প্রকল্পটি নিয়ে অপূর্ব বললেন, ‘এটাও বেশ বড় আয়োজনে করা হয়েছে। আশা করি ভালো লাগবে। সম্পাদনা চলছে। পরিচালক তপু খান অনেক সুন্দরভাবে কাজটা করার চেষ্টা করেছেন।’

চলচ্চিত্র-ভাবনা
দুই দশকের বেশি অভিনয়জীবন অপূর্বর। এই দীর্ঘ সময়ে একটি মাত্র চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। গ্যাংস্টার রিটার্নস নামের সেই ছবির অভিজ্ঞতা অপূর্বর জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। তবে এরপর তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রযোজক পরিচালক চলচ্চিত্র বানানোর আগ্রহ প্রকাশের খবর শোনা গেছে। এবার কথা প্রসঙ্গে বোঝা গেল, সেই আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। শোনা যাক অপূর্বর মুখে, ‘সময়ে সব উত্তর দেবে। যখন চলচ্চিত্র হবে, তখন তো জানবে সবাই। আমার খুবই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা। ছবি নিয়ে আমাদের আলোচনা সব শেষ। এখন শুধু বাস্তবায়ন বাকি। তবে এখনই এসব নিয়ে মুখ খুলতে চাই না। যখন পুরোপুরি নিশ্চিত হবে, তখন অবশ্যই জানাব।’

কলকাতায় অপূর্ব। ভাস্কর মুখার্জি

স্বপ্ন নয়, বাস্তব
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিশ্ববাজারে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমাও তাঁদের অস্তিত্বের ব্যাপারটি জোরেশোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যার সর্বশেষ প্রমাণ প্রিয়তমা ও সুড়ঙ্গ। ছবি দুটি নিয়ে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাগৃহেও ভিড় দেখা গেছে। এসব সবাইকে আশাবাদী করছে। চলচ্চিত্রেও বিনিয়োগ বাড়ছে। বিষয়টি অপূর্বও মনে করছেন। তিনি বললেন, ‘গোটা ইন্ডাস্ট্রি, দেশের মানুষ ও প্রবাসীরা একটা বিষয় অনুভব করছেন, সবাই মিলে খুব ভালো কিছু করার চেষ্টা করছেন। দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষও সাড়া দিচ্ছেন। আমাদের ছবির অনেক বড় বাজারও আছে। আমাদের এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে, একটা ফিল্ম একটা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। ফিল্মের ভালো হলে আমার দেশই এগিয়ে যাবে। আমাদের দেশ থেকে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের মতো একজন পরিচালক কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আসরে জায়গা করে নিয়েছে। একদিন না একদিন আরও অনেক বড় কিছুও বাস্তবায়িত হবে। মেধাবী পরিচালক, মেধাবী অভিনয়শিল্পী—সবই আমাদের আছে। এখন শুধু সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। এটা ব্যবসায়িক বড় বাজার। শতকোটি টাকার বাজার। সবাইকে তাই সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।’