মুশফিক, নিলয়, হিমিদের ‘লাল নানা’ আর নেই

লাল নানাকে হঠাৎ হারিয়ে শোকে বিহ্বল মুশফিক, নিলয়, হিমিরা
ছবি: ফেসবুক

‘লাল নানা আর নেই, এটা ভাইতেই পারছি না। বিশ্বাসই হচ্ছিল না। শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছি।’ কথাগুলো বললেন অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। সাত দিন আগেও এই লাল নানা তাঁকে ফোন দিয়ে অভিনয়ের কথা জানিয়েছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন একসঙ্গে অভিনয়ের।

সেই লাল নানাকে হঠাৎ হারিয়ে শোকে বিহ্বল মুশফিক, নিলয়, হিমিরা। গতকাল সন্ধ্যা ছটার দিকে অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। চার দিন আগেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিল।

তিনি শুটিংয়ের সহকর্মী ও কলাকুশলীদের কাছে লাল নানা নামেই পরিচিত ছিলেন। মুশফিক জানান, অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমায় ভুগছিলেন। বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। তিন দিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় জানাজা শেষে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মুশফিক আর ফারহান ও আলাউদ্দিন

‘কঞ্জুস’, ‘কঞ্জুস-২’, ‘মায়া’, ‘নীড়’, ‘হৃদয়জুড়ে তুমি’, ‘বিয়ে করবই’, ‘অপেক্ষা’সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। বেশির ভাগ সময় তাঁকে দেখা যেত মুশফিক–নিলয়দের নাটকে। এ জন্য একাধিকবার তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আলাউদ্দিন।
দাফন শেষে মুশফিক জানান, দীর্ঘ চার বছর ধরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক থেকেই তাঁকে নানা ডাকা শুরু করেন। গড়ে ওঠে আত্মিক সম্পর্ক। এই অভিনেতা ফিরে গেলেন চার বছর আগে। ‘সেদিন অনেক গরম পড়েছিল। আমি শুটিংয়ের মেকআপ রুম থেকে বাইরে এসে দেখি বয়স্ক এক মুরব্বি একা একা বসে আছেন। দীর্ঘ সময় ধরেই তাঁকে একই জায়গায় বসে থাকতে দেখলাম। পরে জানতে পারি তিনি কাজি চরিত্রে অভিনয় করবেন। পরে তাঁকে অনেক বলে কয়ে মেকআপ রুমে নিয়ে গেলাম। সেই থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক।’ বলেন মুশফিক।

নিলয় ও আলাউদ্দিন লাল

সেদিন মুশফিক জানতে পারেন এই অভিনেতা পারিশ্রমিক হিসেবে খুব সীমিত টাকা পান। সেই টাকা দিয়েই পরিবারের জন্য বাজার করবেন। চার বছর আগে তাঁর বয়স ছিল ৭৮ বছর। এমন বয়সে তাঁকে আয় করে চলতে হয়। মূলত আলাউদ্দিন আগে গাড়ির মেকানিক থাকলেও সেই কাজটা বাদ দিয়ে টুকটাক অভিনয়ের ওপরই ভরসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এই লাল নানা।

মুশফিক বলেন, ‘তিনি একসময় থিয়েটার করতেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানলাম তিনি শুধুই কাজির চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে কথা শুনে মনে হলো তিনি সুযোগ পেলে ভালো অভিনয় করতে পারবেন। আমার আরেকটি নাটকে ভালো একটি চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দিই। এরপরে একাধিক নাটকে অভিনয় করেন। তাঁকে সহযোগিতায় মোশাররফ ভাই, নিলয়, তৌসিফ—সবাই এগিয়ে আসে। একসময় পাসিং চরিত্র থেকে ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হিসেবে তাঁর পারিশ্রমিক বাড়ে। এই টাকায় মোটামুটি তিনি চলে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাদের সবার ওপর খুবই খুশি হয়েছিলেন। দর্শক তাঁকে চিনতে শুরু করেছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে অভিনয় নিয়েই শেষ দিনগুলোতে খুশি ছিলেন।’

হিমি ও আলাউদ্দিন লাল
ছবি: ফেসবুক

শুটিংয়ে তিনি সবার সঙ্গে দ্রুত মিশতে পারতেন। মানুষ হিসেবে ছিলেন খুবই আমুদে। এ কারণে সবাই তাঁকে নানা ডাকা শুরু করেন। একসময় তাঁর নামই হয়ে যায় লাল নানা। অভিনেত্রী জান্নাতুল হিমি বলেন, ‘তিনি খুবই ভালো মানুষ। মিশুক প্রকৃতির। দেখা যায়, যাঁরা একটু সিনিয়র, তাঁদের সঙ্গে স্বভাবতই শুটিংয়ে কম কথা হয়। সেখানে নানা ছিলেন খুবই সাদামাটা ও শিশুদের মতো। অনেক মজার মানুষ। সারাক্ষণ আমাদের আমোদে রাখতেন। এক সপ্তাহ আগেও আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। বয়স হয়েছিল, কিন্তু তিনি যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন এটা বুঝতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগেই নানার মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়ে ছিল। তিনি ফেসবুকে দেখেও ছিলেন। এটা নিয়ে মন খারাপ করেছিলেন।

লাল নানাকে হারিয়ে শোকে অভিনেতা নিলয় আলমগীর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘লাল নানা আপনাকে অনেক মিস করব। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন, আমিন।’ এই অভিনেতা চার বছর ধরে একাধিকবার অসুস্থ হলে পাশে দাঁড়ান নিলয়, ফারহানসহ অনেকে। অভিনেতা আলাউদ্দিন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

আলাউদ্দিন লাল
ছবি: ফেসবুক