গালিগুলো মুছব না, পুরস্কার হিসেবে রেখে দিলাম: চঞ্চল চৌধুরী
দেশে যখন শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল, তখন চঞ্চল চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে। একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তাঁর সেখানে যাওয়া। একটা সময় শুনতে পান আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনার খবর। গত ১৭ জুলাই তাই ফেসবুকে আবেগঘন বার্তাও দিয়েছিলেন। সেখানে লিখেছিলেন, ‘সমাধানের অন্য কোনো পথ কি খোলা ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? বুকের রক্ত না ঝরিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করা যেত না? যা ঘটে গেল, এটা যেমন মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়, বিষয়টা তেমনি হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক ও সভ্যতাবহির্ভূত।’
ছাত্র ও জনতার ২৩ দিনের আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা গত সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বঙ্গভবন থেকেই হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ পর্বও সেরেছেন। নতুন সরকার গঠনের পর মন খারাপের খবর দিলেন দেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। জানালেন, তিনি মানসিকভাবে বেশ অস্বস্তিতে আছেন। কারণ, তাঁকে নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য লেখালেখির চর্চা হচ্ছে।
চঞ্চল চৌধুরী সেসব উল্লেখ করে নিজের ফেসবুক পেজ ও আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি চঞ্চল চৌধুরী বলছি। আমার নাম ব্যবহার করে কোনো বিদেশি/দেশি পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যদি কিছু লেখা হয়, তার দায় আমার নয়। কারণ, এখন পর্যন্ত আমি কোনো পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেইনি। আমি সাধারণ একজন শিল্পী। পেশাগত কারণ ছাড়া কোনো কিছুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার মায়ের চরম অসুস্থতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি সক্রিয় নই। দেশে শান্তি বিরাজ করুক, সকলের মঙ্গল হোক।’
ফেসবুকে এমন ঘোষণার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, কিন্তু ঘটেছে উল্টো। মন্তব্যের ঘরে নেতিবাচক মন্তব্যের ঢেউ। এসব মন্তব্য পড়ছেনও।
যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে জানালেন, কিছু মন্তব্য কয়েকবার পড়ছি। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, একটি মন্তব্যও মুছব না। ধরে নিলাম দেশের মানুষের কাছ থেকে এগুলো আমার শিল্পী জীবনের অন্যতম স্বীকৃতি। যাদের জন্য গত তিনটা দশক অক্লান্ত শ্রম, ঘাম, মেধা আর সততার ভেতর দিয়ে নিজেকে পরিচালিত করেছি। চাইলে এমপি-মন্ত্রী হতে পারতাম। হইনি। কারণ, এই মানুষের প্রিয় শিল্পী হয়ে মরতে চেয়েছি। গালির মাধ্যমে এখন আমি সেই স্বীকৃতি পাচ্ছি। গালিগুলো মুছব না, পুরস্কার হিসেবে রেখে দিলাম।’
চঞ্চল চৌধুরী জানালেন, মায়ের অসুস্থতার কারণে গত জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেসবুকে সক্রিয় নেই তিনি। তাই এর মধ্যে কিছু লেখার প্রশ্নও আসে না। তিনি বললেন, ‘আমার মা অনেক অসুস্থ। এর মধ্যে দেশে চলছিল আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, কারফিউ। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতেও পারছিলাম না। এর মধ্যে একদিন ভোরবেলা আমি ও আমার চিকিৎসক বড় ভাই বাড়িতে মায়ের কাছে ছুটে যাই। নিজে গাড়ি চালিয়ে ঢাকা থেকে পাবনায় যাই। ২ আগস্ট মাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরি। রক্তে সংক্রমণসহ মায়ের শরীরের নানা জটিলতা। মা বিছানায় শয্যাশায়ী, দাঁড়াতেও পারে না। দাঁড়ালে আবার বসতেও সমস্যা। কোনো ধরনের সেন্সও নেই।
চিকিৎসক বলে দিয়েছেন, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করতে। কিন্তু দেশের এমন পরিস্থিতিতে মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে কীভাবে কী হবে ভেবে বোনের বাসায় রেখে চিকিৎসা চালিয়েছি। একটা পর্যায়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। যে কারণে আমি বেশ কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় ছিলাম না, সেটা রাজনৈতিক কারণ যেমন, তেমনি মায়ের অসুস্থতারও। কিন্তু চার-পাঁচ দিন ধরে দেখছি, বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নজন আমাকে নানা লেখা পাঠাচ্ছেন। একটা বাংলায়, বিশ্লেষণধর্মী লেখা। ৩০ থেকে ৪০ লাইনের লেখা হবে। আজকে একজন পাঠাল, ইংরেজি ভার্সন। সেটাও আমার নাম করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে, যা আমার অবস্থানগত জায়গা থেকে আমার ভাবমূর্তির জন্য খারাপ। আমি মনে করি যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা থাকেন, তাঁরা ভাববেন যে এটা আমি লিখছি। এতে আমার প্রতি তাঁদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। কিন্তু এসব লেখা আমার নয়।’
একদম শেষে চঞ্চল বললেন, ‘আমি একজন শিল্পী। শিল্পীর বাইরে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। পেশাগত কারণ ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। আমি আমার পোস্টে পরিষ্কার করছি। এদিকে এসব লেখা অনেকে পড়ে আমাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। ফোন করে খোঁজখবরও নিচ্ছেন। তাঁদের সবাইকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমি ভালো আছি। আমি চাই, দেশে শান্তি বিরাজ করুক।’