‘মায়া’ বাড়াতে আসছেন সারিকা
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা রায়হান রাফীর ওয়েব ফিল্ম ‘মায়া’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যাবে সারিকা সাবরিনকে। এ ছাড়া তিনি কাজ করেছেন পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সঙ্গেও। অভিনয়ের সঙ্গে চলছে উপস্থাপনাও। নানা প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের
সারিকার যখন সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের স্টুডিওতে। জানালেন, ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চার বছর ধরে এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন। তাই ভালোবাসা ও মায়া জন্মে গেছে। মায়ার কথা বলে নিজেই বললেন, ‘এখানেও মায়া! আসলে মায়া ছাড়া কি জীবন চলে! জীবনে মায়া দরকার।’ জীবনে আর কী কী দরকার? এমন প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে বললেন, ‘অনেক কিছুই তো দরকার।’
সঞ্চালনায় চার বছর
২০২০ সাল থেকে উপস্থাপনা করছেন। আগামী নভেম্বরে সঞ্চালনায় চার বছর পূর্ণ হবে। মাসে চারটি পর্ব সঞ্চালনা করেন তিনি, নভেম্বরে ১৯২ পর্ব উপস্থাপনা করবেন। ‘আমার আমি’ দিয়েই সারিকার সঞ্চালনায় অভিষেক। শুরুতে অবশ্য রাজি ছিলেন না। অনুষ্ঠানের তৎকালীন প্রযোজক সাজ্জাদ হুসাইনের উৎসাহে শুরু করেছিলেন। এখনকার প্রযোজক তাহমিনা মুক্তাও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ‘আমি আসলে মনে করেছি, দিস ইজ নট মাই কাপ অব টি। পরে যখন শুরু করলাম, প্রযোজক খুব সহযোগিতা করেছেন। অনুষ্ঠানে এমন অনেক অতিথির সঙ্গে দেখা হয়, যাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা নয়। আমাদের তো সাধারণত নাটকের মানুষের সঙ্গে কাজ হয়। উপস্থাপনার কারণে সংগীত, চলচ্চিত্রের সামনের ও পর্দার পেছনের সবার সঙ্গে দেখা হয়। নতুন প্রজন্ম, আমাদের প্রজন্ম বা আমাদের আগের প্রজন্ম—ঘুরেফিরে অনেকের সঙ্গে গল্প হচ্ছে। ভাবনার আদান–প্রদান হচ্ছে। সবার জীবনের গল্প শুনছি, অনেক কিছু শিখছি। সামনাসামনি বসে আরেকজনের জীবনদর্শন, মত-দ্বিমত যখন শুনছি, তখন সেটা আমাকে মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করে।’ বলেন সারিকা।
প্রিয় উপস্থাপক
দেশে সারিকার প্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত। সারিকার মতে, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি “ইত্যাদি” দেখে। ঈদ কিংবা অন্য যেকোনো উপলক্ষ বা সময়ে টিভির সামনে বসে অনুষ্ঠানটি দেখার ব্যাপারটাই অন্য রকম ছিল। ওই সময় বিনোদনের এত মাধ্যমও ছিল না। হানিফ সংকেতের কথা বলার স্টাইল, অনুষ্ঠানের কনটেন্টেও থাকত শিক্ষণীয় ব্যাপার, যা আমাদের প্রজন্ম মনে রেখেছি। শুধু কি তাই, এই একটি অনুষ্ঠান অনেক শিল্পীর জীবনও পাল্টে ফেলেছে। তখন তো দর্শক হিসেবে দেখেছি, ওইটার প্রভাব আসলেই অন্য রকম।’
দেশের বাইরেরও কয়েকজন উপস্থাপকের উপস্থাপনা সারিকার ভালো লাগে। তাঁদের মধ্যে স্টিভ হার্ভি, এলেন ডিজেনারেস, জিমি ফ্যালন অন্যতম।
‘মায়া’র টানে
সারিকাকে প্রথম ওয়েবে দেখা যায় অ্যানথোলজি সিনেমা ‘ক্যাফে ডিজায়ার’-এ। রবিউল আলম রবির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত ছিল বলে জানালেন সারিকা। কারণ হিসেবে বললেন, ‘নির্মাতা হিসেবে যেমন দুর্দান্ত, তেমনি খুবই ধীরস্থির ও শান্ত একজন পরিচালক।’ রবির সঙ্গে ওয়েব ফিল্মের আগে নাটকের শুটিংও করেছেন সারিকা। তখনো বোঝাপড়া দারুণ ছিল বলে জানালেন এই তারকা।
‘ক্যাফে ডিজায়ার’-এর সঙ্গে মায়ায় অভিনীত চরিত্রটির একটা মিলও আছে বলে জানালেন সারিকা, ‘আমার চরিত্রের নাম ছিল সায়রা, দারুণ একটা চরিত্র। একজন নারীর জীবনকে প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে ‘মায়া’ ওয়েব ফিল্মেও ব্যাপারটি একই। আমাদের এখানকার গৃহবধূ বা একজন নারীর জার্নির গল্প।’ ‘মায়া’তে প্রথমবারের মতো রায়হান রাফীর সঙ্গে কাজ করলেন তিনি।
রাফীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সারিকা বললেন, ‘কাজ করতে গিয়ে শিল্পীর সঠিক যে সম্মান, কমফোর্ট জোন দিতে হয়, তিনি সেটা ভালোভাবে মাথায় রেখে কাজ করেন। শুটিংয়ের আগেও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন। টিমটাও বেশ গোছানো।’
ছয় বছর পর বন্ধুর দেখা
‘মায়া’ সারিকার দ্বিতীয় ওয়েব ফিল্ম হলেও চিত্রনায়ক ইমনের প্রথম। সিনেমাটিতে ‘মায়া’ চরিত্রে সারিকা আর ‘রাহাত’ চরিত্রে ইমন অভিনয় করেছেন। একটা সময় ইমন-সারিকা দুজন অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। কাজ করেছেন বিজ্ঞাপনচিত্রেও। দুজনের মধ্যকার বন্ধুত্বও ছিল চমৎকার। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছর পর মায়া দিয়ে দুজনের দেখা হয়েছে।
সারিকা বললেন, ‘কাজ তো হয়নি, এমনকি আমাদের যোগাযোগও ছিল না। কথা বলার পর যখন শুনলাম সহশিল্পী ইমন, অবাক হলাম। কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতাও ভালো। দুই চরিত্রের রসায়ন দর্শকের ভালো লাগবে। শুটিংয়ের সময় বলেছি, এবার নতুন এক ইমনকে দেখতে পাবে দর্শক। অভিনয়ে অনেক পরিণত হয়েছে। পরিচালকও তেমনটাই বলেছেন।’
প্রসঙ্গ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ সম্প্রতি সারিকাকে নিয়ে একটি প্রকল্পের শুটিং শেষ করেছেন। এটি সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম, নাকি ওয়েব সিরিজ, সে ব্যাপারে যাঁরা শুটিং করেছেন, কেউ জানেন না! সারিকাও তেমনটাই জানালেন।
কাজটি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, সাদের এই কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানি না।’ সাদের সঙ্গে আগে দুটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করেছেন সারিকা। সেই কাজের অভিজ্ঞতা বেশ ভালো। এ কারণেই নতুন কাজের প্রস্তাব পেয়ে না করেননি। তাঁর ভাষ্যে, ‘পরবর্তী সময়ে সাদের অন্য একটা কাজের কথা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। আফসোস ছিল। পরে এই কাজের প্রস্তাব যখন এল, দ্বিতীয় কোনো চিন্তা করিনি। চরিত্র কী, তা নিয়েও ভাবিনি। কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, সে প্রচণ্ড পরিশ্রমী একজন নির্মাতা।’