মা ও দুই ভাইকে নিয়ে বন্যার্তদের সাহায্যে ছুটছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ তোরসা

ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফটিকছড়ি যাওয়ার পথে তোরসাসহ অন্যরাছবি : তোরসার সৌজন্যে

স্কুলে পড়ার সময় বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা ছিল মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন রাফা নানজিবা তোরসার। লায়নস ইন্টারন্যাশনালের যুব সংগঠন লিও ক্লাবের হয়ে কাজটি করেছিলেন তিনি। এরপরও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এবার বন্যাদুর্গত এলাকা ফটিকছড়িতে সশরীর ত্রাণ বিতরণ করেছেন। মানুষের কষ্ট দেখে হয়েছেন আবেগাক্রান্ত। বন্যার্তদের সহযোগিতায় তোরসার সঙ্গে এ যাত্রায় তাঁর মা ছাড়া ছোট দুই ভাইও সঙ্গী। গতকাল শনিবার সারা দিন ফটিকছড়ির ভোজপুর, নারায়ণহাট, সুন্দরপুর ও উত্তর সুয়াবিলে ৩০০ পরিবারে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

আজ সোমবার দুপুরে কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ভোরবেলা বের হয়ে ত্রাণ বিতরণ শেষে চট্টগ্রাম শহরের প্রবর্তক মোড়ের বাসায় যখন ফেরেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে ১১টা। জানিয়ে রাখলেন, আগামী পরশুদিন তাঁদের টিম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যাবে, সেখানকার বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন।

ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফটিকছড়ি যাওয়ার পথে তোরসাসহ অন্যরা
ছবি : তোরসার সৌজন্যে

তোরসা জানালেন, ১৫ জনের একটা টিম রয়েছে তাঁর। ফটিকছড়িতে তাঁর যাওয়ার আগে টিমের অন্যরা কয়েক দিন ধরে নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি আর ফেনীতে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

বন্যাকবলিত এলাকায় একটু ভেতরের মানুষেরা ত্রাণসামগ্রী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জানিয়ে তোরসা বললেন, ‘গতকাল যাওয়ার পথে কিছুটা পথ মেঘলা, কিছুটা রোদও ছিল, সারা দিন বৃষ্টি হয়নি। আমরা সারা দিন যেখানে গিয়েছি, আগের দিন পর্যন্ত কোথাও গলাসমান, কোথাও কোমরসমান পানি ছিল। কিছু জায়গায় ঘরবাড়িতে গতকালও হাঁটুসমান পানি ছিল। আমরা দেখে বুঝতে পারছিলাম, কী অবস্থা ছিল। আমরা যাওয়ার পথে অনেকে ত্রাণ চেয়েছেন, আগেও হয়তো তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু পরে জানতে পারি, এলাকাগুলোর ভেতরের পরিবার ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাওয়াটা ভালো। আমাদের সঙ্গে ফটিকছড়ির স্থানীয় সাংবাদিকেরা ছিলেন, তাঁদের কারণে আমাদের পুরো কাজটা করতে সহজ হয়েছে।’

ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফটিকছড়ি যাওয়ার পথে তোরসাসহ অন্যরা
ছবি : তোরসার সৌজন্যে

তোরসা বললেন, ‘অনেকগুলো এলাকায় যাওয়ার সময় আমাদের বলা হয়েছে, ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই, ওখানে ত্রাণ পেয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, ভেতরের দিকে ত্রাণ খুব একটা পৌঁছাচ্ছে না। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ত্রাণ না পাওয়ার মধ্যে আছে উত্তর সুয়াবিলের ভেতরের সনাতনী পাড়া। হালদার বাঁধ প্রথম যেদিকে ভাঙে, সেটা ওদিকেই। আমাদের মনে হয়েছে, ওরা গতকালই প্রথম ত্রাণ পেয়েছে। আমরা ত্রাণ দিয়ে রাত সাড়ে আটটায় যখন ফিরছি, তখন আরেকটা টিম নৌকা নিয়ে ওদিকটায় যাচ্ছিল।’


লিও ক্লাবের হয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার কারণে যেকোনো দুর্যোগ বা অন্যায় হলে ঘরে বসে থাকতে পারেন না বলে জানালেন তোরসা। গত মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় বেশ সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

জানালেন, ঢাকায়ই ছিলেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখে চট্টগ্রামে ছুটে যান। তোরসা বলেন, ‘এসব আমার ভেতরে ন্যাচারালি কাজ করে। সমস্যা দেখলে কোনোভাবেই বাসায় বসে থাকতে পারি না। মাঠে গিয়ে কাজ করার প্রবণতা কাজ করে। এবারও বন্যার সময় আমার ফেসবুক ইনবক্সে অনেকে বলেছে, এটা পাচ্ছে না, ওটা পাচ্ছে না। এই সমস্যা, ওই সমস্যা। তারপর সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা মাঠে নেমে পড়ি।’

ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফটিকছড়ি যাওয়ার পথে তোরসাসহ অন্যরা
ছবি : তোরসার সৌজন্যে

ফটিকছড়িতে বন্যার কারণে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে এই উপলব্ধি হয়েছে তোরসার। বললেন, ‘আতঙ্কে যে মানুষেরা ত্রাণ একবার পেয়েছেন, তাঁরা আবার চাইছেন। যা বুঝতে পেরেছি, অনেকের মধ্যে আতঙ্ক, কবে কাটবে এই সংকট। নিজেদের বাঁচার নিশ্চয়তার তাগিদে এমনটা করছেন। চট্টগ্রামের এদিকটায় তো আসলে আগে কখনো এমন বন্যা দেখা যায়নি, কোনো অভিজ্ঞতাও নেই কারও। একেবারে সাধারণ মানুষেরা যেমন ত্রাণ নিতে আসছেন। মধ্যবিত্তরা সংকটে দেখলাম। তাই দিন আনে দিন খায় যারা, তারা একবারের জায়গায় দুবার নিলেও সমস্যা দেখিনি। এসব এলাকার বেশির ভাগই মাটির বাড়ি, কোথাও চুলা জ্বলছে না।’