৬২টা নাটকের ভিউ কোটির উপরে কে এই অভিনেতা
একটা সময় ছিল, গভীর রাতে শুটিং শেষে মন খারাপ করে বাসায় ফিরতেন মুশফিক আর ফারহান। কারণ, শুটিংয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেকআপ নিয়ে বসে থাকাটাই সার হতো তাঁর। কারণ, তাঁর চোখের সামনে অভিনেতারা শুটিং শেষ করে একে একে বাড়িতে ফিরে যেতেন। কিন্তু তাঁর ডাক আর পড়ত না। ভাবতেন, হয়তো শেষ দৃশ্যে ডাকা হবে। সেই সুযোগও অনেক সময় মিলত না। শুধু তা–ই নয়, কখনো কখনো তাঁকে শুনতে হতো, কাজ থেকে বাদ পড়েছেন। কখনো পরিচালকের কথার সঙ্গে কাজের মিল পেতেন না।
শুরুতে সহযোগী চরিত্রের কথা বলা হলেও শেষে দেখা যেত, চরিত্রটা বলার মতোই না। কষ্ট পেলেও এমন সব ঘটনা থেকেই প্রেরণা নিতেন তিনি। নতুন একটি ভোরের অপেক্ষা করতেন। সব সময়ই মনোবল ছিল, নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাসই তাঁকে টিকিয়ে রেখেছে। আর এই জোরেই গত ঈদে ছোট পর্দার অন্যতম আলোচিত অভিনেতা হয়ে উঠেছেন মুশফিক আর ফারহান।
ঈদে প্রচারিত হওয়া কাজগুলোর মধ্যে ফারহানের চরিত্রগুলো সহজেই আলাদা করা যায়। কোনো নাটকে তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, কোনোটায় এলাকার মাস্তান, গ্রামের বখাটে যুবক, নেতা বা প্রেমিক। এসব নাটক প্রশংসার পাশাপাশি পেয়েছে ভিউ। ঈদে তাঁর অভিনীত ‘খোট’ নাটকটির ভিউ ৮৫ লাখ। ‘পোস্টম্যান’ ও ‘নেভার সিরিয়াস’ দেখা হয়েছে ৫৭ ও ৫০ লাখের বেশি। তাঁর বেশির ভাগ নাটকই ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর ৬২টি নাটকের প্রতিটির গড় ভিউ কোটির বেশি।
শুটিংয়ের শুধু চরিত্রের বৈচিত্র্যই নয়, লোকেশনেরও বৈচিত্র্য থাকে। অনেক অভিনয়শিল্পী ঢাকার বাইরে অভিনয় করতে চান না, সেখানে ফারহানকে দেশের নানা প্রান্তে ছুটতে দেখা যায়। একটা নাটক যেখানে দুই দিনে শেষ করা যায়, সেখানে চার থেকে সাত দিন সময় নিয়েও কাজ করেছেন মুশফিক। তার ফলও পাচ্ছেন। পরিচালক–প্রযোজকদের কাছে তাঁর চাহিদা এখন তুঙ্গে।
এই অভিনেতা বলেন, ‘আক্ষেপ নাটকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পেয়েছি। ভক্তরা তো ভালোবাসেনই, এই নাটকের জন্য অনেক সহকর্মীও আমাকে ভালোবাসা জানিয়েছেন।’ চরিত্রটি তৈরির পেছনের গল্পও শোনালেন তিনি, ‘এই চরিত্রের জন্য আমাকে গবেষণা করতে হয়েছে। এমন একজন মানুষ কীভাবে হাঁটেন, চলেন, তা দেখতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে এমন একজন মানুষের খোঁজ পেয়েছিলাম। সেই ব্যক্তির সঙ্গে বসেছি। কথা বলেছি। তাঁকে পর্যবেক্ষণ করেছি। দাঁতের আলাদা ডিজাইন করতে হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম কেউ যেন আমাকে চিনতে না পারেন। প্রস্থেটিক মেকআপের সাহায্য নিতে হয়েছে।’
শুধু এবারই প্রথম নয়, এর আগে ‘কঞ্জুস’ নামের নাটকে একটা কৃপণ চরিত্রের প্রস্তুতির জন্য তিনি তাঁর নানিবাড়ি এলাকার একজনের সহযোগিতা নিয়েছেন। তিনিও ছিলেন কৃপণ। একফাঁকে নিজের অভিনয়দর্শনটাও শোনালেন মুশফিক আর ফারহান, ‘আমার কোনো তাড়াহুড়া নেই। দর্শকদের কাছে মনে থাকার মতো চরিত্রে অভিনয় করে যেতে চাই।’
আগামী ঈদের জন্য শতাধিক চিত্রনাট্য হাতে পেয়েছেন এই অভিনেতা। এর মধ্যে গল্প, চরিত্র ও লোকেশনের বৈচিত্র্য রয়েছে—এমন ছয়টি কাজ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একই চরিত্র বারবার করতে চাই না। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। একটি শটের জন্য ঢাকার বাইরে চলে যাই। একটি শটের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিই।’ ‘ব্লেড’ নামের একটি নাটকে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেই নাটকে জিহ্বার ওপর ব্লেড ঘোরাতে হয়। আবার একটি নাটকে জেলের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে গভীর সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে হয়েছে। এবার ‘আক্ষেপ’ নাটকে সুকু চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে পায়ের লিগামেন্ট ছেঁড়ার দশা হয়েছিল।
প্রতিদিনই এখন শুটিং থেকে ফিরে নিজের মুখোমুখি হন মুশফিক আর ফারহান। এ যেন প্রতিদিনের সংগ্রাম। মুশফিক বলেন, ‘একটি কাজ দিয়ে অভিনেতা হতে চাইনি। ছোট ছোট কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছি। এখন হয়তো শুটিং শেষে নতুন কাজ নিয়ে ভাবতে হয় না। কিন্তু বাড়ি ফিরলে যখন মা বলেন, “তোর ওই নাটকে অভিনয় ভালো হয়েছে”, গল্প নিয়ে কথা বলেন, নারী চরিত্র নিয়ে কথা বলেন, তখন আরও ভালো কাজের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। মনে হয়, কাল থেকে আরও ভালো কাজ করতে হবে।’