কোনো সুস্থ মানুষ কি চল্লিশবার ফোন করতে পারেন

‘আমার ঠিকানা তুমি’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

‘চল্লিশবার কখনো একজন সুস্থ মানুষ আরেকজন মানুষকে ফোন দিতে পারেন?’ দূরের যাত্রায় সামনের সিটে যে দুজন সহযাত্রী ছিলেন, তাঁদের বয়স ত্রিশের মধ্যে। কেউ কাউকে চল্লিশবার কল দিতে পারেন কি পারেন না—বিষয়টি নিয়ে তর্ক করছিলেন দুজনে। প্রশ্নটির উৎস একটি নাটকের সংলাপ। যেখানে দেখা যায়, নায়িকা ‘অনি’ নায়ক ‘রাহুল’কে রাগী স্বরে এই সংলাপ বলেন।

শেষ পর্যন্ত সহযাত্রী দুজন কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারবেন কি না, জানা যায়নি; কিন্তু নাটকটির দৃশ্য নিয়ে, সংলাপ নিয়ে দর্শকেরা যে কথা বলছেন, ফেসবুক রিলে নাটকটির দৃশ্য ঘুরেছে; এর কারণ কী? কেন দর্শক নাটকটি পছন্দ করলেন?

রাহুলকে বলা অনির আরও কিছু কথা উল্লেখ করা যাক। ‘আমি স্টুপিড, আমার সমস্যা, আমি তোমাকে অ্যাটেনশন দিছি। তোমার মতো এ রকম ২০টি ছেলে আমার পেছনে পড়ে আছে আমার অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। আমি যদি এখনই বলি, তারা সবাই এখানে চলে আসবে…আমি স্টুপিড যে আমি তোমাকে অ্যাটেনশন দিয়েছি। তোমার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। তোমাকে আমি টাইম দিয়েছি। তোমার সঙ্গে আমি আড্ডা দিয়েছি। বিকজ আই ফেল্ট লাইক ইউ আর এ নাইস পারসন।’ ‘আমার ঠিকানা তুমি’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

‘আমার ঠিকানা তুমি’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

অনির এই বক্তব্য কেউ কেউ যেমন পছন্দ করছেন, আবার কেউ অপছন্দও করেছেন। তবে পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টা যতটা না নাটকের ক্ষেত্রে, তার চেয়ে বেশি বাস্তবিকভাবে। কারণ, কথাগুলো কমবেশি সবার কানে ঘুরেফিরে হয়তো এসেছে। এই যে সংলাপে বাস্তবতা উঠে এসেছে, এ কারণেই কি নাটকটি দর্শককে আকর্ষণ করল?

নাটকটির গল্প কি একতরফা ভালোবাসার? গল্পের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু কি আছে? রাহুল গ্রামের ছেলে। পরিবার আছে গ্রামে। পড়ালেখা শেষ করে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত সে। তানিয়া নামের একটি মেয়েকে সে ভালোবাসত; কিন্তু তানিয়া বিয়ে করে দূরে সরে যায়। বিচ্ছেদ হয় তাদের। অপর দিকে অনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। আবীর নামের একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার; কিন্তু আবীরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়। তারপর রাহুল ও অনি কাছাকাছি; কিন্তু ভালোবাসার প্রসঙ্গ উঠলে অনি বারবারই বলে, রাহুলকে সে ভালোবাসে না। এভাবে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে গল্প এগোতে থাকে।

‘আমার ঠিকানা তুমি’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

নাটকটিতে রাহুল চরিত্রে পার্থ শেখ ও অনি চরিত্রে নওবা তাহিয়া অভিনয় করেছেন। নাটকে রাহুলের সঙ্গে অনির ব্যবহার অনেকের মন খারাপের উদ্রেক করেছে। তেমনই ভালো লাগার শিহরণও দিয়েছে কোনো কোনো দৃশ্যে।

রাহুলের কাছে ফোন করে বাবা যখন বন্ধকি জমি ছাড়ানোর জন্য টাকার কথা বলেন, একই সময়ে অনি দামি উপহার কিনে দেওয়ার চাপ দেয়; তখন নাটকটি প্রেমের গল্প থেকে মধ্যবিত্ত তরুণের জীবনের গল্পে রূপ নিয়েছে। এই যে দৃশ্যপরম্পরায় একজন মধ্যবিত্ত তরুণের জীবনের সংকট আর সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে, হয়তো সে কারণেই নাটকটি দর্শকের ভালো লেগেছে।

‘আমার ঠিকানা তুমি’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

নাটকের গল্পে অনি কি রাহুলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়, এমন প্রশ্নও ঘুরেফিরে এসেছে অনেক দর্শকের মনে। এর কারণও আছে। বসের সামনে থাকলেও রাহুলকে তার ফোন ধরে কথা বলতে হবে। যে কারণে কাজে ভুল হওয়ায় রাহুলের চাকরিও চলে যায়। তা ছাড়া দেখা করার কথা থাকলে কোনো কারণে দেরি হয়ে গেলে অনি তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলেছে।

আরও পড়ুন

অনি কথায় কথায় রাহুলকে বলেছে, সে তার কেউ না। সে ভালোবাসে না। সত্যিই কি অনি রাহুলকে ভালোবাসেনি? এটা কি একতরফা ভালোবাসার গল্প? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে দেখে নিতে পারেন ‘আমার ঠিকানা তুমি’ নাটকটি। নির্মাতা পথিক সাধন। পার্থ শেখ ও নওবা তাহিয়া ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিলি বাশার, আনোয়ার শাহী, সোমা পারভিন, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।