রাষ্ট্রের সম্মানে তাঁদের প্রতিক্রিয়া

এ বছর দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তাদের মধ্যে ৭ জন বিনোদন অঙ্গনের

‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মা গো’সহ বহু গানের লেখক নজরুল ইসলাম বাবুকে এ বছর দেওয়া হচ্ছে একুশে পদক। তবে মরণোত্তর। ১৯৯০ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে তিনি চলে যান। গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তবে এত দিন রাষ্ট্রীয় এ সম্মাননা পাননি বলে আক্ষেপ ছিল তাঁর ভক্ত ও পরিবারের। মৃত্যুর ৩২ বছর পর রাষ্ট্রের এ সম্মান পেলেন তিনি। শিল্পকলা, সংগীত ও অভিনয়ে যাঁরা পেলেন একুশে পদক, তাঁদের কেউ পেয়েছেন মরণোত্তর, কেউ কেউ এখন অসুখে পর্যুদস্ত, কেউ থাকেন পরবাসে। তবে রাষ্ট্রের এ সম্মানে তাঁরা সন্তুষ্ট। দেশ ও নিজ নিজ ক্ষেত্রের সহযাত্রীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিল্পী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

নজরুল ইসলাম বাবু

‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপ্নের রাত’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’সহ বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন নজরুল ইসলাম বাবু। একুশে পদক পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার বলেন, ‘দেশ–বিদেশে তাঁর গানগুলো সব সময়ই বাজতে থাকে। এ সম্মাননা তিনি আরও আগে পেলে ভালো লাগত। অনেক দেরিতে হলেও তাঁকে এ সম্মান দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’ অভিনয়ের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা পেয়েছেন খালেদ মাহমুদ খান। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খালেদ খান ‘যুবরাজ’ নামে পরিচিত। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক। তাঁদের একমাত্র মেয়ে ফারহিন খান জয়িতা জানান, বাবার একুশে পদক পাওয়ার খবরে সম্মানিত বোধ করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে মায়ের কয়েকটি পুরস্কারপ্রাপ্তি আমরা উদ্‌যাপন করতে পারিনি। তিনি বেঁচে থাকলে এবার হয়তো অন্য রকম কিছু হতো। তবু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে বাবার প্রাপ্তি আমরা উদ্‌যাপন করব।’

মাসুম আজিজ
ছবি: সংগৃহীত

৩টি কেমো, ১৩টি রেডিও থেরাপি নিয়েছেন ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা মাসুম আজিজ। নিজের আনন্দের জন্য ৫০ বছর ধরে থিয়েটার ও টেলিভিশনে অভিনয় করছেন তিনি। কেবল থিয়েটারের সঙ্গে থাকবেন বলে জীবনে বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। বিনিময়ে কিছুই চাননি তিনি। একুশে পদক তাঁর জন্য বাড়তি প্রাপ্তি। মাসুম আজিজ বলেন, ‘মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে ভাবতেই চোখে জল চলে আসে। এই আনন্দ রাখার জায়গা নেই আমার। শুধু নাটকের সঙ্গে থাকা ছাড়া জীবনে আমি কিচ্ছু চাইনি। এই পুরস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত বছর লাইফ সাপোর্টে ছিলেন নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহ। ৭০ বছর বয়সী এই শিল্পীকে এ বছর শিল্পকলায় দেওয়া হলো একুশে পদক। রাষ্ট্রীয় এই সম্মাননা পাওয়ার খবরে আনন্দিত এই শিল্পী। ভাঙা ভাঙা স্বরে মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৬০ বছর ধরে এই অঙ্গনে কাজ করেছি। যাঁদের সঙ্গে এত দিন কাজ করেছি, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

মাহমুদুর রহমান বেণু
ছবি: প্রথম আলো

সংগীতে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন মাহমুদুর রহমান বেণু। তারুণ্যে গানই ছিল তাঁর জীবন। মুক্তিযুদ্ধের তথ্যচিত্র মুক্তির গান–এ তাঁকে দেখেছে মানুষ। একুশে পদক পাওয়ার খবরে আনন্দিত ৭৯ বছর বয়সী এই শিল্পী। প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। আমি একটু প্রচারবিমুখ মানুষ। কী পেলাম, এ নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। বিদেশে যখন যেখানেই থাকি, মনটা পড়ে থাকে দেশে। গত দুই বছর দেশে আসতে পারিনি বলে মনটা ভীষণ খারাপ। এ বছর অবশ্যই দেশে আসব। ইতিমধ্যে টিকিটের তারিখ এগিয়ে নিয়েছি।’ সুইজারল্যান্ডে থাকেন আরেক শিল্পী ইকবাল আহমেদ। একুশে পদকের তালিকায় নিজের নাম দেখে কেমন লেগেছে তাঁর? জেনেভা থেকে এই শিল্পী বলেন, ‘আমার মনে পড়ে গেল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দিনগুলোর কথা। যে যাঁর সক্ষমতা নিয়ে সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলাম, দেশ স্বাধীন করেছি। আজ নিজের দেশের স্বীকৃতি পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে।’

আফজাল হোসেন
ছবি : কবির হোসেন

অভিনয়ে অবদানের জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন আফজাল হোসেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বললেন, ‘খুশি হয়েছি। এতকাল সবার সঙ্গে কাজ করে সমৃদ্ধ হয়েছি, পরিশীলিত হয়েছি। আমি যে কাজ করেছি, সেসব তো আর একা করা যায় না। আমি বিশ্বাস করি, আজ আমার যতটুকু আনন্দ, আমার সহকর্মীরাও ততটাই আনন্দিত।’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।