খরচ কমাতে তৎপর
গত বছরও একটি নাটক বিক্রি করা যেত দুটি জায়গায়। শুরুতে টেলিভিশনে, তারপর ইউটিউবে। এখানেই শেষ নয়। নাটকের চটুল অংশ বা গান কেটে কেটে আবার পোস্ট করা যেত ফেসবুক পেজে। এখন সেই সুযোগ সীমিত। কারণ, টেলিভিশন নিজের নাটক নিজেই বানিয়ে নিচ্ছে। আর নির্মাতাদেরও দেওয়া হচ্ছে না অনলাইনে সেসব বিক্রির অধিকার। আয় কম হচ্ছে বলে ইউটিউবভিত্তিক প্রযোজকেরা এখন তৎপর নিজেদের নাটকের খরচ কমাতে। কম খরচে কি মানসম্মত নাটক বানানো সম্ভব?
নাটক বানাতে সবচেয়ে বেশি খরচ চলে যেত বড় তারকাদের সম্মানীর পেছনে। বিজ্ঞাপন নেওয়ার পরও তিন জায়গায় বিক্রি করা গেলে সেই খরচ উঠে আসত মুনাফাসহ। এখন সেখানে বাদ সেধেছে টেলিভিশনের সোশ্যাল মিডিয়া শাখা। নিজেদের বানানো নাটক প্রচারের পর প্রতিটি চ্যানেল এখন নিজেদের ইউটিউব-ফেসবুকে নিজেদের কনটেন্ট প্রকাশ করে, বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে। আর আয় কমে যাওয়ায় ইউটিউবের প্রযোজকেরা ভাবছেন নাটকের বাজেট কমিয়ে দেওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ন্যূনতম বাজেটে নাটক বানাতে শুরুও করেছেন কেউ কেউ। খরচ কমাতে তুলনামূলক কম সম্মানীর অভিনয়শিল্পীদের দিয়ে নাটক বানাচ্ছেন তাঁরা। সিএমভির কর্ণধার শাহেদ আলী বলেন, ‘টেলিভিশনের এই উদ্যোগের কারণে আমাদের হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। আমরাও হয়তো কৌশল বদলাব।’
তবে খরচ কমানোর ব্যাপারটি স্বীকার করছেন না কোনো প্রযোজকই। তাঁদের বক্তব্য, মানের সঙ্গে আপস করলে বিজ্ঞাপন আসবে না। তাই চাপ নিয়ে হলেও তাঁরা পর্যাপ্ত খরচ করেই মানসম্মত নাটক বানানোর চেষ্টা করছেন।
আসা যাক খরচের ক্ষেত্রগুলোতে। বর্তমান সময়ে দ্বিতীয় সারির অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নাটক বানালে ইউটিউবে যে ভিউ হয়, প্রথম সারির শিল্পীদের ক্ষেত্রে সেই ভিউ খুব বেশি নয়। এই দিক থেকে খরচের অনুপাতে আয়ও মন্দ নয়। ধরা যাক, নিশো বা অপূর্বর নাটকে যে ভিউ হয়; তৌসিফ, জোভান, নিলয়, ফারহানদের ক্ষেত্রে সেই ভিউ প্রায় কাছাকাছি, কখনো সমান। সম্মানীর ব্যবধান সেখানে অর্ধেক বা তিন ভাগের এক ভাগ। তবে সিনেমাওয়ালার কর্ণধার মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘টাকা দিয়ে প্রথম সারির আর্টিস্ট নিলে দামি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। তুলনামূলক দ্বিতীয় সারির আর্টিস্ট নিলে কম দামের বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। অনলাইনের বিজ্ঞাপন নির্ভর করে টার্গেট অডিয়েন্সের ওপর। যেসব তারকার ফ্যান-ফলোয়ার বেশি, তাদের কনটেন্টে বিজ্ঞাপনও ভালো আসে।’
পর্দার নাটক নিয়ে দুই পক্ষের উদ্দেশ্য একই, অর্থ উপার্জন। অন্যদিকে দর্শকদের চাহিদা বিনোদনমূলক মানসম্মত নাটক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাভাষী অঞ্চলে ঢাকার নাটকের সমাদর রয়েছে। এটি তৈরি হয়েছে ইউটিউবভিত্তিক নির্মাতাদের কল্যাণে। কারণ, ভারতে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখা যায় না। তাই ইউটিউবভিত্তিক প্রযোজকদের উচিত নাটকের মানের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করা। এদিক থেকে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগ যতটা তৎপর, ততটা তৎপরতা ইউটিউব প্রযোজকদের নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো গল্প পড়ে বাছাই করে একটি কাজ করি। যাঁরা ইউটিউবের জন্য নাটক বানান, তাঁরা সেটা করেন না। যেকোনো গল্পে নাটক বানিয়ে ফেলেন। সেসব নাটকের প্রিভিউ হয় না, এমনকি স্পর্শকাতর দৃশ্য বা সংলাপ ছাঁটার তাগিদও থাকে না। শিল্পের ক্ষেত্রে এটি সঠিক পদ্ধতি নয়।’
তবে এ–ও ঠিক যে কম খরচেও মানসম্মত নাটক বানানো সম্ভব, সে জন্য চাই শক্তিশালী চিত্রনাট্য ও সুদক্ষ কুশলী। ইউটিউবে দেখানো হবে বলে নিম্নমানের কনটেন্ট প্রকাশ করা হবে, এ ধারণার পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করেন নাটকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।