২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি, আবার দেখবে আপিল কমিটি

‘শনিবার বিকেল' সিনেমার একটি দৃশ্যছবি : সংগৃহীত

শনির দশা যেন কিছুতেই কাটছে না। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে একের পর এক নাটকীয়তার অবতারণা ঘটছে। প্রায় চার বছর ধরে সেন্সর বোর্ডে ঝুলে থাকা সিনেমাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনার মধ্যে ২১ জানুয়ারি সিনেমাটি দেখেছে সেন্সর বোর্ডের আপিল কমিটি।
আপিল কমিটির সদস্যদের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আসে, সিনেমাটি মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়াকে চিঠি পাঠানো হবে। ঢাকার হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে নির্মিত বলিউডের সিনেমা ‘ফারাজ’ মুক্তির দিনেই ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির পরিকল্পনা করেছিলেন প্রযোজক ও নির্মাতা। অপেক্ষার এক সপ্তাহ পেরিয়ে দেড় সপ্তাহে গিয়ে ঠেকলেও চিঠি হাতে পাননি প্রযোজক।

দুই সপ্তাহের মাথায় চিঠি পেলেন প্রযোজক, তবে সেই চিঠি খুব একটা আশাজাগানিয়া নয়। বহুল আলোচিত সিনেমাটি নিয়ে আপিল কমিটি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি, সিনেমাটি আবার দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপিল কমিটি। কার্যত আবারও পেন্ডুলামের মতো ঝুলে গেল সিনেমাটির ভাগ্য।
প্রযোজককে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আপিল কমিটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, সিনেমাটি পুনঃপরীক্ষণ করতে হবে। সেই মোতাবেক প্রযোজককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নাম না প্রকাশের শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, সিনেমাটি নিয়ে আপিল কমিটি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় সিনেমাটি আবার দেখতে চেয়েছেন। এই দফায় দেখার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

শনিবার বিকেল চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য
ছবি : সংগৃহীত

গত রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন প্রযোজক আবদুল আজিজ; সিনেমায় কোনো দৃশ্য কর্তন করতে বলা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, কোনো কর্তনের নির্দেশনা পাননি তাঁরা। আপিল কমিটি ২১ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি দেখবে বলে জানালেন আবদুল আজিজ, তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিনেমা দেখার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেন্সর আপিল কমিটিতে সংসদ সদস্য ও অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত সদস্য হিসেবে ও সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সদস্যসচিব হিসেবে আছেন।
গত ২১ জানুয়ারি শুনানিতে সিনেমার প্রযোজক, নির্মাতা বক্তব্য শোনেন, এরপর আপিল কমিটির সদস্য শ্যামল দত্ত দাবি করেছিলেন, সিনেমাাটি মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই। তার দুই সপ্তাহের মাথায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানাল, সিনেমাটি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শ্যামল দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মতামত দিয়েছিলাম, এই ছবি আটকানোর কিছু নেই। আবার কেন দেখতে হবে, সেটা আমি বুঝছি না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

২০১৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে প্রদর্শনের পর সিনেমাটি জনসাধারণের মাঝে প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে মত দিয়েছিল সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা। সিনেমাটি নিয়ে জটিলতা কোথায়—তা সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও সেন্সর বোর্ডের বরাতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, সিনেমাটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ওপর নির্মিত হয়েছে। সেখানে দেশের সামরিক, পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবের সদস্যরা যে জীবন দিয়ে অসহায় জিম্মিদের উদ্ধার করেছেন, দুজন পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন, সেটিই অনুপস্থিত। সে জন্য এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে।

শনিবার বিকেল চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য
ছবি : সংগৃহীত

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড প্রতিবেদনে সিনেমাটিতে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মানুষের প্রাণ রক্ষায় জীবনদানের বিষয়টির অনুপস্থিতি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, অপরাধ ও আইনহীনতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অশ্লীল সংলাপ নিয়ে সদস্যরা মতামত দেন। ’
‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে নির্মাতা, শিল্পীরা সোচ্চার। সংবাদ সম্মেলন করে সিনেমার সেন্সর ছাড়পত্র দাবি করেছিলেন তাঁরা। সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব আছেন অনেকে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন