বরের সাজে জাঁকজমক শুটিংয়ে কেটেছিল তাঁর শেষ দিনটা
অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকের নেমে এসেছে টালিউডে। গতকালও যে মানুষ এসেছিলেন শুটিং করতে, যিনি সবার সঙ্গে সস্নেহ কথা বলেছেন। শুটিংয়ে অংশ নেবেন বলে বরও সেজেছিলেন। সেই অভিনেতা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। তাঁকে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না গতকাল শুটিংয়ে থাকা সহকর্মীরা।
শুটিংয়ে কখনো দেরি করেন না অভিষেক। তাই কিছুটা অসুস্থ শরীর নিয়েই গতকাল শুটিংয়ে হাজির হয়েছেন এই নব্বইয়ের দশকের সুপরিচিত নায়ক। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। শুটিংয়ে গিয়ে যথারীতি মেকআপ নেন। পোশাক পরেন। কিন্তু শরীর সায় দেয়নি। ভেবেছিলেন, কিছুটা বিশ্রাম নিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। পাশে থাকা সোফায় শুয়ে পরেন অভিষেক। কী থেকে কী হয় ভেবে শুটিংয়ের অনেকেই বলেছিলেন হাসপাতালে যেতে। ঠিক হয়ে যাবে, নিজেই তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলেন। পরে অবস্থা আরও খারাপ হলে বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতেই চিকিৎসা নেন। নিজের বাড়িতেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শুটিংয়ে থাকা রূপঙ্কর বাগচী নামের একজন ভারতীয় গণমাধ্যম জি ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, ‘শুটিংয়ের একজনের ওপর অনেক মানুষের কাজ নির্ভর করে। সবার কথা ভেবেই হয়তো তিনি গতকাল শুটিংয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে কাজ করার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাঁর দৃষ্টিতে ছিল অদ্ভুত এক চাহনি। আমরা ভেবেছিলাম, দাদার হয়তো খাওয়াদাওয়ার সমস্যা হয়েছে। এখনো ভাবতে পারছি না, গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে (অভিষেক চট্টোপাধ্যায়) দেখলাম, জাঁকজমকপূর্ণ ধুতি-পাঞ্জাবি পরে আছেন। মেকআপ নিয়ে বসেছিলেন। সেই জীবন্ত মানুষটাই আজ নেই। এটা কোনোভাবেই ভাবতে পারছি না।’
সেদিন শুটিংয়ে অনেকের মধ্যে আরও ছিলেন জিতু কামাল। তিনি অভিনেতা অম্বরিশ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে আগেই শুনেছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের শরীর খারাপ। গতকাল শুটিংয়ে অভিষেককে কেমন দেখেছেন, এমন প্রশ্নে জিতু বলেন, ‘ওনার (অভিষেক চট্টোপাধ্যায়) শরীর খারাপ খারাপ ছিল। গতকাল আমাদের একটি বিশেষ এপিসোড ছিল। মিঠুদা বর সেজে এসেছিলেন, স্ত্রী কনে সেজেছিলেন। কিন্তু শেষবার মঞ্চে উঠে যেতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত প্রোডাকশন গাড়ির ব্যবস্থা করল, তাঁকে কাঁধে হাত দিয়ে তুললাম, তখনো ভাবতে পারিনি এই অবস্থা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ফেক নিউজ ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। সত্যিই ভাবা যাচ্ছে না এখনো, মিঠুদা আর নেই।’
কলকাতার চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি ছিলেন সবার প্রিয় ‘মিঠুদা’। অভিনয় ছিল তাঁর প্রাণ। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। গতকাল বুধবার ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসার রিয়েলিটি শো ইসমার্ট জোড়ির সেটে ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিনে শুটিং করে যেতে পারেননি অভিষেক। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।