নতুন ফেলুদাকে নিয়ে ‘হত্যাপুরী’তে সন্দীপ

কলকাতার একটি রেস্তোরাঁয় ফেলুদার নতুন ছবি ‘হত্যাপুরী’ সম্পর্কে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়ভাস্কর মুখার্জি

সত্যজিৎ রায়ের প্রখ্যাত চরিত্র ‘ফেলুদা’কে নিয়ে নিয়মিতই চলচ্চিত্র নির্মাণ করে আসছিলেন সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়। ২০১৬ সালে ‘ডাবল ফেলুদা’র পর আর ফেলুদাকে নিয়ে সিনেমা বানাননি তিনি। এর অন্যতম কারণ ফেলুদা ও জটায়ু চরিত্রে অভিনেতা নিয়ে জটিল। ‘জটায়ু সংকট’-এ আগে থেকেই সন্দীপ সিনেমার জন্য ফেলুদার এমন উপন্যাস বেছে নিচ্ছিলেন, যেখানে জটায়ুর উপস্থিতি নেই। ‘ফেলুদা’ পাওয়া নিয়ে ঝামেলা চলছিল আগে থেকেই। এই চরিত্রে আগে দেখা গেছে আবীর চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু আবীর ‘ব্যোমকেশ’ করায় তাঁকে নিয়ে আর ‘ফেলুদা’ করতে চাননি সন্দীপ। শেষ ছবিতে এই চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন। ‘ডাবল ফেলুদা’র কয়েক বছর নতুন ফেলুদা, নতুন জটায়ু খুঁজে পান পরিচালক। কিন্তু তখনই শুরু হয় করোনা মহামারি। এখন করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ফের ‘ফেলুদা’ ছবির নির্মাণকাজে নেমে পড়েছেন সন্দীপ রায়।

গতকাল দক্ষিণ কলকাতার একটি রেস্তোরাঁয় ফেলুদার নতুন ছবি ‘হত্যাপুরী’ সম্পর্কে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে পরিচালক সন্দীপ রায়ের সঙ্গে ছিলেন ছবির কলাকুশলীরা।

সংবাদ সম্মেলনে সন্দীপ বলেন, ‘পাঁচ বছর পর আবারও বড় পর্দায় ফিরেছে “ফেলুদা”
ভাস্কর মুখার্জি

সন্দীপ রায় বলেন, তাঁর বাবার আমলের ফেলুদার এখন অনেকেই নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে নতুনদের নিয়ে ‘হত্যাপুরী’ তৈরি করছেন। এরই মধ্যে ছবির শুটিংও শুরু হয়ে গেছে কলকাতায়। এরপর হবে ওডিশার পুরীতে।
তবে এই ছবিতে ফেলুদা হচ্ছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। তপসে আয়ুশ দাস। জটায়ু হচ্ছেন অভিজিৎ গুহ। অভিজিৎ মাঝেমধ্যে টুকটাক অভিনয় করলেও টালিউডের পরিচালক হিসেবেই বেশি পরিচিত। ছবিতে আরও আছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, ভরত কল, সাহেব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সন্দীপ বলেন, ‘পাঁচ বছর পর আবারও বড় পর্দায় ফিরেছে “ফেলুদা”। একদিকে এই গল্প নিয়ে ছবি “হত্যাপুরী” করতে গিয়ে আমি আনন্দিত, ঠিক তেমনি এত দিন পর ছবি করতে গিয়ে নার্ভাসও লাগছে। করোনা সম্পূর্ণ বিদায় না হওয়ায় ভেবেচিন্তে এমন গল্প বাছলাম, যাতে আউটডোর শুটিং করা সহজ হয়।’

ফেলুদার এই সিনেমায় দেখা যাবে তোপসে আর জটায়ুকে নিয়ে যান পুরীতে ফেলুদা। যাওয়ার পর সমুদ্রপারে মৃতদেহ আবিষ্কার করেন। জানা যায়, মৃতদেহটি নেপালের রূপচাঁদ সিংয়ের। কিন্তু কীভাবে মৃতদেহটি সমুদ্রে ভেসে এল? ছুটি কাটানো বাদ দিয়ে রহস্য উন্মোচনের জন্য জড়িয়ে পড়েন ফেলুদা। ছবিটির রূপসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন পরিচালকের স্ত্রী ললিতা রায়।

ফেলুদার এই সিনেমায় দেখা যাবে তোপসে আর জটায়ুকে নিয়ে যান পুরীতে ফেলুদা
ভাস্কর মুখার্জি

সন্দীপ রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘হত্যাপুরী’ গল্পটি সত্যজিৎ যখন লিখছিলেন, তখনকার কোনো স্মৃতি মনে পড়ে কি না। উত্তরে সন্দীপ বলেন, ‘সে রকম কিছু মনে পড়ছে না। তবে গল্পটা সে সময় পুজোর “সন্দেশ” পত্রিকায় বের হয়েছিল। সেটা মনে পড়ে। পুরী আমাদের সবার কাছে খুবই পরিচিত এবং প্রিয় জায়গা, সেটা মাথায় রেখেই এই গল্প নিয়ে শুরু করলাম শুটিং।’

১৯৭৪ সালে ‘সোনার কেল্লা’ ও ১৯৭৯ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’—ফেলুদার প্রথম দুই প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তোপসে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, জটায়ু হয়েছিলেন সন্তোষ দত্ত।
২০০৩ সালে সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’, ২০০৭ সালের ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ এবং ২০০৮ সালে ‘টিনটোরেটোর যীশু’ ছবিতে ফেলুদা হয়েছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, তোপসে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও জটায়ু ছিলেন বিভু ভট্টাচার্য।

এই ছবিতে ফেলুদা হচ্ছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
ভাস্কর মুখার্জি

এ ছাড়া ২০১০ সালে সন্দীপ রায় ‘গোরস্থানে সাবধান’ এবং ২০১১ সালে ‘রয়েলবেঙ্গল রহস্য’-তে তিন চরিত্রে দেখা যায় সব্যসাচী চক্রবর্তী, সাহেব ভট্টাচার্য ও বিভু ভট্টাচার্যকে। ২০১৪ সালে সন্দীপে ‘বাদশাহী আংটি’-তে দেখা যায় নতুন ফেলুদাকে। তখন ফেলুদা ও তোপসে হয়েছিলেন আবীর চট্টোপাধ্যায় ও সৌরভ দাস। এরপর আবীর ব্যোমকেশ হওয়ায় ২০১৬ সালে ‘ডাবল ফেলুদা’-তে আবারও ফেলুদা হয়েছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। তোপসে চরিত্রে দেখা যায় সাহেব ভট্টাচার্যকে।
‘হত্যাপুরী’ এ বছরের ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা।