ঘরে বসে দেখা যাচ্ছে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের ছবিগুলো
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব জমে উঠছে ধীরে ধীরে। ১৬ জানুয়ারি থেকে চলছে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ২০২১। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ), বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স এবং সীমান্ত স্কয়ার সিনেপ্লেক্সে চলছে চলছে উৎসবের সিনেমা।
উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার দিনই লাগ ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ভেলকিতে দেখা যাচ্ছে সিনেমাগুলো। সকাল ৮টায় সিনেমাগুলো আপলোড করে দেওয়া হয়। তখন থেকে রাত ১২টা—এই ১৬ ঘণ্টায় দেখা যায় সিনেমাগুলো। উৎসব চলবে ২৪ তারিখ পর্যন্ত। ২৪ তারিখ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত দেখা যাবে শেষ দিনে উৎসবে প্রদর্শিত ছবি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারই প্রথম অনলাইনে উৎসবের চলচ্চিত্র দেখার ব্যবস্থা করেছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। লাগ ভেলকি নামে একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে যে কেউ দেখতে পারেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আলোচিত এই চলচ্চিত্রগুলো, তবে এর জন্য প্রতি ছবির জন্য ৫০ টাকা খরচ করতে হবে।
এদিকে গতকাল ২০ জানুয়ারি ‘সত্যজিৎ রায়: জাতীয় নাকি বৈশ্বিক’ বিষয়ে সেমিনারে অনলাইনে যোগ দেন শর্মিলা ঠাকুর, বর্ষীয়ান অভিনেতা ধৃতিমান চ্যাটার্জি।
তিনি বলেন, ভারতের গণ্ডি ছাপিয়ে সত্যজিৎ রায় বাংলা ভাষার নির্মাতা। তিনি চাইলেই অন্য ভাষায় সিনেমা বানাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে বাংলাকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে গেছেন। শর্মিলা আরও বলেন, ‘সে সময় রায় সাহেব অতটা অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন না। একটা শট দুই থেকে তিনবারের বেশি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। এত সীমাবদ্ধতার ভেতরেও শ্রম আর মেধা দিয়ে তিনি মাস্টারপিস বানিয়েছেন। সত্যজিৎ রায়কে দেশ বা সময়ের বেড়ায় আটকে রাখা যাবে না। তিনি সব দেশের, সব সময়ের।’
কলকাতা থেকে বর্ষীয়ান অভিনেতা ধৃতিমান চ্যাটার্জি বলেন, ‘সত্যজিৎ রায় কোনো নির্দিষ্ট জাতিসত্তার নন, তিনি সারা বিশ্বের জন্য চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক দৃষ্টান্ত’। ধৃতিমান বলেন, সত্যজিৎই একমাত্র নির্মাতা যিনি সিনেমায় রাজনীতিকে এত জীবনঘনিষ্ঠ করে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমার শুটিংকালের নানা পরিস্থিতি নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
সাংসদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর জানান, ‘পথের পাঁচালী’ তাঁকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে ‘মহানগর’ সিনেমা দেখার জন্য সেই বালক বয়সে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নীলফামারী থেকে ঢাকা এসেছিলেন। ১৯৭২ সালে যখন ঢাকার পল্টন ময়দানে সত্যজিৎ এসেছিলেন, তাঁকে একনজর দেখার জন্য লক্ষাধিক মানুষ এসেছিল।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। প্রবন্ধে থেকে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জীবন যে মসৃণ কোনো পথ নয়, বরং খাড়া পাহাড়ি ঢালের মতো বন্ধুর, সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র সেই শিক্ষাই দেয়।’ সেমিনারে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রজীবন, জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আরও কথা বলেন বিচারপতি রিফাত চৌধুরী এবং চলচ্চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ।
ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বরাবরের মতো থাকছে এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরামা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলেড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ও উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগ। তবে উৎসবে এবারই প্রথম যুক্ত হচ্ছে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ও ‘ট্রিবিউট’ নামে আরও দুটি নতুন বিভাগ, যা এবারের উৎসবকে আরও উচ্চতর মাত্রা দেবে বলে আশা করেন উৎসব পরিচালক।
এবারের উৎসবে মোট ৭৩টি দেশের ২২৬টি চলচ্চিত্র অংশগ্রহণ করছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন মঞ্চ (মুক্তমঞ্চ), স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় সিনেমাগুলো দেখা যাবে। উৎসব চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক পরিবেশনার কাজ করে আসছে।