কারও কেউ নইকো আমি...মারা গেছেন সেই অভিনেতা
সেই গানটির কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। কিশোর কুমারের গাওয়া গান, ‘কারও কেউ নইকো আমি কেউ আমার নয়, কোনো নাম নেইকো আমার শোনো মহাশয়...।’ ভারতীয় পরিচালক কনক মুখোপাধ্যায়ের ‘লালকুঠি’ ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছিল গানটি। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। কিশোর কুমারের কণ্ঠে সেই গানে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন বলিউডের ড্যানি ডেংজঙ্গপা। আর ছবিতে ড্যানির সঙ্গে সেই গানের দৃশ্যায়নে থাকা সেই শিশুশিল্পী সমীরকে ভুলে যাওয়ার কথা নয় দর্শকদের। ছবিতে সে ছিল ড্যানির ‘বন্ধু’।
সেই শিশুশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পার্থ মুখোপাধ্যায়। বড় হয়ে চলচ্চিত্র জগতে খুব বেশি প্রতিষ্ঠিত না হলেও টুকটাক কাজ করতেন। তবে একসময় এ জগৎ থেকে বিদায়ও নেন। ৫১ বছর বয়সে সম্প্রতি সৌদি আরবে মারা গেছেন তিনি। বর্তমানসহ বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, করোনার আগে কলকাতাতেই ছিলেন পার্থ। তবে করোনা–পরবর্তী টালিউডে সেভাবে কাজ পাচ্ছিলেন না। বেকার হয়ে গেল বছরের জানুয়ারিতে একটি কোম্পানির সুপারভাইজার হিসেবে সৌদি আরব যান। সেখানেই গত ১৩ ডিসেম্বর কাজ করতে করতেই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খবরটি এত দিন পরে কেন? তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়নি কেন? প্রয়াত এ অভিনেতার মেয়ে শ্রীতমা মুখোপাধ্যায় বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদককে জানান, অভিনেতার মা–বাবা এখনো জীবিত। সৌদি থেকে বাবার মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য কিছু জটিল আইনি প্রক্রিয়া ছিল।
তত দিন পর্যন্ত মেয়ে এবং অভিনেতার স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যেন প্রয়াতের মা–বাবার কানে মৃত্যুসংবাদ না পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত ২৬ ডিসেম্বর পার্থর নিথর দেহ কলকাতায় এসে পৌঁছায়। সেদিনই বিকালে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে প্রয়াত শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
‘লালকুঠি’র ছোট্ট সমীর হিসেবে দর্শকের মনে সাড়া ফেললেও পার্থর প্রথম কাজ তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ ছবিতে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘করুণাময়ী’ ছবিতে বিশ্বজিৎ ও সন্ধ্যা রায়ের বিকলাঙ্গ ছেলের ভূমিকায় পার্থর অভিনয় সবার নজর কেড়েছিল।
পরবর্তী সময় ৫০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—‘দর্পচূর্ণ’, ‘দিদি’ ‘ছুট’, ‘পরবেশ’,‘দাদু, নাতি ও হাতি’, ‘আবির’, ‘মমতা’, ‘বাবু মশাই’, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘লব কুশ’, ‘চিতা’, ‘অনুসন্ধান’, ‘অগ্রদানী’ প্রভৃতি। ‘লালকুঠি’ ছবির জন্য পেয়েছিলেন সেরা শিশুশিল্পীর বিএফজেএ (বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন) ও বাংলা চলচ্চিত্র প্রচার সমিতির পুরস্কার। পরবর্তী সময় দূরদর্শনে হিট মেগা ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি’তে পরিচালক ইন্দর সেনের সহকারী হয়ে কাজ করেছিলেন পার্থ। ‘পার্ক স্ট্রিট’ নামে একটি ছবিও পরিচালনা করেছেন তিনি।