২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সিনেমার অর্থ জোগাতে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে

সত্যজিৎ রায়ছবি: ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট

উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তখনো সিনেমার যোগসূত্র ঘটেনি। একটি প্রকাশনী সংস্থায় পেশাদার চিত্রকর হিসেবে কাজ করছিলেন, ভালোই চলছিল দিনকাল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ বইয়ের চিত্রকর্ম করতে গিয়ে বইটির প্রতি মুগ্ধতা জন্মে সত্যজিতের। তখনই ভেবেছিলেন, কখনো সিনেমা নির্মাণ করলে এই বইটিই বেছে নেবেন তিনি।

১৯৪৭ সালে একটি ফিল্ম সোসাইটি করেন সত্যজিৎ। দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখে চলচ্চিত্রের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৪৮ সালের দিকে ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন।

‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার দৃশ্যধারণে
ছবি: ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট

সেই চিত্রনাট্য নিয়ে কলকাতার প্রতিষ্ঠিত প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকলেন তরুণ সত্যজিৎ। কেউই কিনতে রাজি হলেন না। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, যেকোনোভাবে সিনেমার কাজ শুরু করবেন। কারণ, সিনেমার কিছু ফুটেজ দেখাতে পারলে প্রযোজকদের সিনেমাটি সম্বন্ধে ধারণা দেওয়া যাবে, অর্থাভাবে সিনেমাটি শেষ করা যাচ্ছে না।

১৯৭০ সালে লেখক ফোক ইসাকসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনেমাটি নিয়ে কথা বলেছেন সত্যজিৎ রায়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে সত্যজিৎ রায় বলেন, ‘আমার বিমা পলিসি থেকে কিছু অর্থ পেয়েছিলাম। সেই অর্থেই সিনেমার দৃশ্যধারণ শুরু করলাম। অল্প সময়ের মধ্যেই তহবিলে টান পড়ে। এরপর আমার কিছু বই, রেকর্ড ও স্ত্রীর (বিজয়া রায়) গয়না বিক্রি করেছিলাম। তখনো আমার চাকরিটা ছিল, সেখান থেকে বেতনবাবদ কিছু অর্থ হাতে পেলাম।’

সেই অর্থেই ক্যামেরা ভাড়া করে কাজ শুরু করলেন সত্যজিৎ, চালিয়ে গেলেন শুটিং। শুটিং বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর আবার অর্থাভাবে গুটিয়ে ফেলতে হয়। এবার কী করবেন? বন্ধক রাখার মতো কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই সংসারে।
প্রায় এক বছর দৃশ্যধারণ বন্ধ থাকল। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা, আশার কোনো খবর মিলছে না। তখনই বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরিটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু তাঁর মন পড়ে আছে চলচ্চিত্রে। এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ ঘটে তাঁর। তিনি সিনেমাটির প্রযোজনায় এগিয়ে এলেন।
১৯৫৫ সালে ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তির পর প্রথম দুই সপ্তাহ খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। তৃতীয় সপ্তাহে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়েন দর্শকেরা। সমালোচকদের পাশাপাশি দর্শকমহলে প্রশংসিত হয়েছে সিনেমাটি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি নির্মাতাকে।

সত্যজিৎ রায় বলেন, ‘টানা ছয় সপ্তাহ সিনেমাটি চলার পর সিনেমাটির হল বাড়ে। আরও সাত সপ্তাহ ধরে সিনেমাটি প্রদর্শনের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিনেমায় বিনিয়োগের অর্থ উঠে আসে। এরপর লাভ করতে থাকে সিনেমাটি।’
প্রায় চার দশকের ক্যারিয়ারে ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’সহ বেশ কয়েকটি প্রশংসিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্ম নেওয়া এ নির্মাতা পৈতৃক ভিটা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের মসূয়া গ্রামে।
বেঁচে থাকলে ১০২ বছর পেরিয়ে ১০৩ বছরে পা রাখতেন এ নির্মাতা। একাধারে তিনি নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্পনির্দেশক, সংগীত পরিচালক ও লেখক। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন