অপুর স্মৃতিতে উজ্জ্বল দুর্গাদিদি
একদিন রেলগাড়ি দেখতে যাবি তো? অপুর প্রশ্নে মাথা নেড়েছিল দুর্গা। তবে জ্বর দুর্গাকে ছাড়েনি। অপুর আবদারও রাখতে পারেনি। দুর্গার আর রেলগাড়ি দেখা হয়নি। উপন্যাসের মতো চলচ্চিত্রেও কিশোরী দুর্গা মারা গেছে। কালজয়ী ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের দুর্গা চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্ত। আজ চিরতরে বিদায় নিলেন ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা। সিনেমায় দুর্গার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন ভাই অপু। সেই চরিত্র করেছেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রিয় দিদির মৃত্যুর পর মন খারাপ পর্দার সেই দুষ্টুমিষ্টি অপুরও।
পর্দার অপু ওরফে সুবীর ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে বলেন, ‘সকালেই খবরটা পেয়েছি। দিদি আর নেই। জানতাম, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন দিদি। কিন্তু তারপর এ রকম একটা খবর! মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে।’ দিদির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সুবীর বলেন, ‘আজকে বেশি করে “পথের পাঁচালী”র শুটিংয়ের দিনগুলো মনে পড়ছে।
আমার তখন মাত্র ৯ বছর বয়স। আর উমাদির ১৪ বছর। আমি তো শুটিংয়ের কিছুই বুঝতাম না। একসঙ্গে দুজনে শুটিং করছি। গড়িয়ার বোড়ালে শুটিং। ট্রেন দেখতে যাওয়ার দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল শক্তিগড়ের কাছে পালসিটে। আমাকে শুরু থেকে আগলে রাখতেন দিদি। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, খুনসুটি করতাম। আনন্দ করতাম। একেবারেই যেন ভাইবোন।’
সুবীর বললেন, ছবির মতোই শুটিং ফ্লোরেও উমা যেন আক্ষরিক অর্থেই আমার দিদির মতো হয়ে উঠেছিলেন। এরপর তো দুজনেরই বয়স হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গেছেন তাঁরা। মানুষ মনে রেখেছে দেখে খুব ভালো লাগা কাজ করত দুজনেরই।
সুবীর বলেন, ‘দিদির সঙ্গে শেষের দিকে আমার খুব বেশি দেখা হয়নি। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে “পথের পাঁচালী”র সঙ্গে জড়িত সবাইকে নন্দনে সংবর্ধনা দেওয়া হলো। ভেবেছিলাম, দিদির সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু দেখলাম, তিনি আসতে পারলেন না। জানতে পারলাম, শরীর খুবই খারাপ। এরপর আর সেভাবে দেখা হয়নি।’
সুবীর বলেন, ‘স্মৃতি অনেক সময়ই দুঃখের এবং বেদনার হতে পারে। এবার সেটাই হলো। একে একে “পথের পাঁচালী”র সবাই চলে যাচ্ছেন। একদিন আমিও চলে যাব। দিদির প্রতি আমার শ্রদ্ধা। আরও কিছুদিন তিনি থাকলে ভালো হতো। হয়তো আরও একবার আমাদের দেখা হতো। কিন্তু সেই সুযোগটা আর পাওয়া গেল না।’