পরিচালক ও নায়িকার অন্য রকম যাত্রা
এক দশক ধরে নাটক ও টেলিছবি বানিয়ে হাত পাকানো সঞ্জয় সমদ্দারের এবার বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হলো। দেশের ছবি দিয়ে নয়, কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ‘মানুষ’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক হলো তাঁর। এদিকে নায়িকা হিসেবে যাঁকে এতদিন দেখা গেছে, সেই বিদ্যা সিনহা মিমকে দেখা গেল অতিথি চরিত্রে। পরিচালক ও নায়িকা এই দুজনের অন্যরকম কলকাতা যাত্রা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
মাস দুয়েক আগে বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত ‘অন্তর্জাল’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পায়। আবারও প্রেক্ষাগৃহে এসেছে মিমের ছবি। ‘মানুষ’ নামের সেই ছবি গতকাল ভারতের দুই শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বলে জানালেন পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার। এর মধ্যে বাংলা ভাষায় ১১৮ ও হিন্দিতে ১৩০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের অনেকে কলকাতায় প্রচারে সরব থাকলেও মিমকে সেখানে দেখা যায়নি। তবে খোঁজখবর সবই রাখছেন বলে জানালেন মিম।
গতকাল সন্ধ্যায় যখন মিমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন একটি পণ্য প্রতিষ্ঠানের ফটোশুটে ব্যস্ত। তাঁরই ফাঁকে কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘পরিচালকসহ সবার কাছ থেকে শুনছি, হাউসফুল যাচ্ছে। ভীষণ ভালো লাগছে। আমার না যেতে পারার কারণ, আগে থেকেই বেশ কয়েকটি শিডিউল চূড়ান্ত ছিল। তবে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলছি, যেভাবে যতটা সম্ভব।’
মিমের টলিউডে যাত্রা শুরু ‘ব্ল্যাক’ ছবি দিয়ে। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন সোহম। এরপর ‘ইয়েতি অভিযান’, ‘সুলতান দ্য স্যাভিয়ার ’ও ‘থাই কারি’ নামের আরও তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কলকাতায় নিজের পঞ্চম সিনেমা মানুষ–এ নিজের চরিত্র নিয়ে মিম বলেন, ‘ছবিতে আমার চরিত্রের নাম মন্দিরা। একজন পুলিশ অফিসার। আগে “পরাণ”-এর অনন্যা, “দামাল”-এর হোসনা চরিত্রের যেমন ভিন্নতা আছে, ঠিক একইভাবে এখানে মন্দিরা চরিত্রেরও ভিন্নতা রয়েছে।’
২০০৭ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হন মিম। পরের হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘আমার আছে জল’ দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন। তবে ১৫ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে কোনো ছবিতে তাঁকে অতিথি চরিত্রে দেখা যায়নি।
‘মানুষ’–এ অতিথি চরিত্রে হাজির হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জানালেন, চরিত্রের গুরুত্ব ছাড়াও পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার ও নায়ক জিতের কারণে রাজি হয়েছেন। মিম বলেন, ‘দুই বাংলায় প্রথমবার কোনো সিনেমায় অতিথি চরিত্রে আছি। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাপী অনেক তারকা স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্সে থাকেন। তার বাইরে গল্প ভালো লেগেছে। আমার চরিত্রটাও দুর্দান্ত। জিৎদার প্রোডাকশনে আগেও কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতাও দারুণ। পরিচালক আবার আমার বাংলাদেশের, তাঁর সঙ্গে বোঝাপড়াও ভালো। যখন সঞ্জয়দা বলছিলেন, মিম এটা করো। ভালো কিছু হবে। তোমার চরিত্রটাও খুব সুন্দর। তাই আগপিছ না ভেবে হ্যাঁ বলে দিয়েছি।’
বাংলাদেশেও ছবিটি মুক্তির সম্ভাবনা আছে বলে জানালেন মিম। এদিকে মিমের সঙ্গে একাধিক পরিচালক নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে আলাপ করছেন। তবে কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত করেননি বললেন। মিম কথায় কথায় এ–ও বললেন, ‘এখন তিনি পান্না কায়সারের জীবনী নিয়ে তৈরি “দিগন্তে ফুলের আগুন” ছবির ডাবিং নিয়ে ব্যস্ত আছেন। চলছে বেশ কিছু পণে৵র প্রচারণার কাজ, যেসব পণ্য প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত আমি।’
জিৎ প্রযোজিত ও অভিনীত ‘মানুষ’ ছবির পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার এক দশক আগে ‘ভালোবাসার সমীকরণ’ নামের নাটক নির্মাণ করে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। এরপর শতাধিক নাটক নির্মাণ করেন তিনি। ‘ট্রল’ নামের একটি ওয়েব ফিল্মও বানিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ বানিয়েছেন চরকির ওয়েব ফিল্ম ‘দাগ’। তবে স্বপ্ন দেখতেন বড় পর্দায় নিজের কাজ দেখার। গত বছর ‘মানুষ’ পরিচালনার মধ্য দিয়ে তা শুরু হয়।
গতকাল মুক্তির পর চলচ্চিত্র পরিচালক শব্দটি যুক্ত হয়ে গেল নামের পাশে। দেশের বাইরে দিয়ে শুরু হওয়ায় আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত সঞ্জয় বললেন, ‘সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি। প্রথম সিনেমা। সবার ভালোও বলছে, যা আমার জন্য অনেক সম্মানের। কলকাতার একজন সুপারস্টার আমাকে ডেকেছেন, গল্প শুনেছেন, এরপর সুযোগ দিয়েছেন। আমারও চেষ্টা ছিল, কাজটি যদি ভালো করতে পারি, দেশের আরও দশজন পরিচালক কাজ করার সুযোগ পাবেন। শিল্পীদের কোনো সীমানা হয় না।’
‘মানুষ’ ছবির মুক্তি উপলক্ষে গত সপ্তাহ থেকেই ভারতে আছেন সঞ্জয় সমাদ্দার। কয়েক দিন ধরে কলকাতায় ছবির প্রচারে থাকা পরিচালক আজ ঢাকায় ফিরবেন বলে জানালেন। সঞ্জয় জানালেন, খুব শিগগির দেশেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। সেই ছবি নিয়ে এরই মধ্যে কয়েক দফা মিটিংও সেরেছেন। তবে সবকিছু চূড়ান্ত না করে এখনই কিছু বলতে চাইছেন না। ‘মানুষ’ সিনেমায় মিম ও জিৎ ছাড়াও অভিনয় করেছেন জিতু কমল, সুস্মিতা চ্যাটার্জি, সৌরভ চক্রবর্তী প্রমুখ।