নীরবেই চলে গেলেন অভিনেত্রী শ্রীলা
‘চোখের বালি’র ডাবিংয়ে ঐশ্বরিয়ার রাইয়ের কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। পর্দায় তাঁর অভিনয়ের দাপটও ছিল দেখার মতো। কিন্তু বরাবরই আলোচনার বাইরে ছিলেন। প্রয়োজনে পাওয়া গেলেও বিনোদন দুনিয়ার আয়োজনে তাঁকে দেখা যেত না। শনিবারের বিকেলে নীরবেই চলে গেলেন অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃণাল সেনের হাত ধরে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন এ অভিনেত্রী।
মৃত্যুর পর যেন জানান দিয়ে গেলেন তিনি ছিলেন। শ্রীলার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিনোদন অঙ্গনে। অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ছবি দিয়ে স্মৃতিচারণা করছেন অনেকেই। বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিন বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন গুণী এ অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন পরিবার। শনিবার রাতেই কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় অভিনেত্রীর।
কলকাতার গণমাধ্যম আনন্দবাজারের খবর অনুযায়ী, গত বছর নভেম্বর মাসে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় অভিনেত্রীর। তখন বাড়িতেই ছিলেন অভিনেত্রী। সর্বশেষ ১৩ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজারহাটের টাটা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি ছিলেন শ্রীলা। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
শেষবার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পালান’ সিনেমায় শ্রীলাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। তবে পর্দার বাইরে শেষবার তাঁকে দেখা যায় গত বছর আলিপুর জেল মিউজিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে।
শৈশবেই বাবা রামচন্দ্র মজুমদারকে হারিয়েছিলেন শ্রীলা। মা ননী মজুমদার একাই বড় করে তোলেন শ্রীলাকে। তিনিই যেন ছিলেন অভিনেত্রীর একমাত্র বন্ধু। স্কুলে পড়াকালীনই বাচিকশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন শ্রীলা। তাঁর কণ্ঠ শোনা যেত একাধিক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে। অভিনয় টানত না তাঁকে, নেপথ্যে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল তাঁর।
নাটকের মহড়ায় শ্রীলার অভিনয় দেখেই তাঁকে নিজের সিনেমার অভিনেত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মৃণাল সেন। সেটা ১৯৮০ সালের কথা। মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ ছবির মাধ্যমে যাত্রা শ্রীলার। তার পর থেকে একের পর এক ছবিতে নিজের অভিনয়গুণে মুগ্ধ করে গিয়েছেন অভিনেত্রী। কাজ করেছেন ‘এক দিন প্রতি দিন’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’-এর মতো উল্লেখযোগ্য ছবিতে। শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল, নাসিউরুদ্দিন শাহর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় কাজ করেছেন ‘আরহণ’, ‘মান্ডির’ মতো ছবিতে।
পর্দায় অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চেও সাড়া ফেলেছিলেন শ্রীলা। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নহবত’ নাটকে শ্রীলার অভিনয় নজর কেড়েছিল। বাণিজ্যিক ধারার ছবিতেও কিন্তু শ্রীলার অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। অঞ্জন চৌধুরীর ‘পূজা’ ছবিতে শ্রীলার অভিনয় মনে ধরেছিল দর্শকের। তেমনি হরনাথ চক্রবর্তীর ‘প্রতিবাদ’ ছবিতেও শ্রীলা সমান নজর কেড়েছেন। এই দুই ছবির হাত ধরেই গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
শেষ কয়েক বছর কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলা। অসুস্থতার কারণেই হয়তো পর্দায় শ্রীলাকে কম দেখা গেছে। তবে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি কতটা দক্ষ ছিলেন, তা আর প্রশ্ন রাখে না। সংগত কারণে অভিনেত্রীর কাছের মানুষেরা অনেকেই মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের বিনোদন দুনিয়ায় তাঁর প্রাপ্য জায়গাটি কখনো পাননি তিনি।