'আমার জীবনটা জেলখানার মতো'
‘আমার জীবনটা জেলখানার মতো’—বলেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গত ২০ মে রাজধানীর আফতাবনগরে বাসায় প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে ২০১২ সালে আমাকে যুদ্ধাপরাধীর ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছিল। সাহসিকতার সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলখানার গণহত্যার সম্পূর্ণ ইতিহাস সম্পর্কে। আর ওই গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে আমি একজন। হত্যা করা হয়েছিল একসঙ্গে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে। কিন্তু এই সাক্ষ্যের কারণে আমার নিরপরাধ ছোট ভাই মিরাজকে হত্যা করা হবে, তা কখনো ভাবিনি। সরকারের কাছে বিচার চেয়েছি, বিচার পাইনি। ছয় বছর ধরে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় গৃহবন্দী থাকি, একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। কোনো বাড়ির মালিক আমাকে বাসা ভাড়া দিতে চায় না। যেখানে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিলাম, সেই মগবাজারের বাসা ছেড়ে আমি এখন আফতাবনগরের এই বাসা ভাড়া নিয়েছি।’
এর আগে গত ১৬ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল লিখেছিলেন, ‘একটি ঘরে ছয় বছর গৃহবন্দী থাকতে থাকতে আমি আজ উল্লেখযোগ্যভাবে অসুস্থ। আমার হার্টে আটটা ব্লক ধরা পড়েছে। এখন ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় গৃহবন্দী থাকি, একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। এ এক অভূতপূর্ব করুণ অধ্যায়।’
নানা বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন, ‘আরেকটু বড় পরিসরে যদি একটা সরকারি ঘর পেতাম। আমাকে তো ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। একটা ঘর পেলে সেই ঘরে অন্তত একটা স্কুল করেও তো জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম। দেশের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে আমাকে বাড়িওয়ালাদের বাঁকা চোখে থাকতে হয়। আমি দেশের জন্য, সরকারের জন্য এত কিছু করেছি, ভাইকে হারালাম, শেষ পর্যন্ত আমিও মরতে যাচ্ছি। সরকারের তরফ থেকে আপনারা কি আমাকে একটা ঘর দিতে পারেন না?’
নিজের আয়ের উৎস নিয়ে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন, ‘আমার যত সঞ্চয় ছিল, এই ছয় বছরে সব শেষ। গত মাসে উত্তরায় আমার যে তিন কাঠা জমি ছিল, সেটাও বিক্রি করে দিয়েছি। যেহেতু আমরা অনেক লোক একসঙ্গে থাকি, ছয়জন পুলিশ, ওদের দেখাশোনা করা, খাওয়াদাওয়া করতে বাবুর্চি লাগে। আমরা বাবা-ছেলে দুইটা রুমে থাকি। পুলিশ সদস্যরা থাকে ড্রয়িংরুমে। আমি কোনোভাবে ৩৫ হাজার টাকা ঘরভাড়া দিয়ে চলছি। সবকিছুর বিল আছে। আমাদের সবার জন্য প্রতিদিন কাঁচাবাজারই লাগে এক হাজার টাকার। মাসে সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। গান গেয়ে এক কোটি টাকা জমিয়েছিলাম। ছয় বছরে জমানো টাকা শেষ। সম্মানের সঙ্গে যাতে বাঁচতে পারি, তাই জমিটাও বিক্রি করে দিয়েছি, যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (৬৩) আর নেই। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি আফতাবনগরে নিজ বাসায় মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর ছেলে সামির আহমেদ জানান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল অনেক দিন থেকেই অসুস্থ। তিনি হৃদ্রোগে ভুগছিলেন। তাঁর হার্টের ধমনিতে আটটা ব্লক ছিল। গত বছর মে মাসে রিং পরানো হয়। ইদানীং তাঁর শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছিল না। সমস্যা হচ্ছিল। গতকাল সোমবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যেতে পারেননি।