সংগীতজীবনের শুরু থেকেই শ্রোতাদের সঙ্গে একের পর এক নতুন কণ্ঠশিল্পী পরিচয় করিয়ে দেন হাবিব ওয়াহিদ। সংগীতশিল্পী ন্যান্সির জনপ্রিয়তাও তাঁর মাধ্যমেই। এমনকি এই শিল্পীর মেয়ে রোদেলার প্রথম মৌলিক গানের সংগীত পরিচালক হাবিব। এবার নতুন আরও এক কণ্ঠশিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এই গায়ক-সুরকার ও সংগীত পরিচালক। দোলা ফারুক নামের সেই কণ্ঠশিল্পী ও হাবিবের নতুন একটি গান প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি হাবিবের ইউটিউবে গানটির লিরিক্যাল ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ‘কেন আজও মন’ গানের কথা লিখেছেন অমিতা কর্মকার, সুর ও সংগীত হাবিব ওয়াহিদ। কে এই দোলা? হাবিবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগটা কীভাবে হয়েছিল তাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৩ জুন হাবিব তাঁর ফেসবুক ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ‘কেন আজ মন’ গানটি প্রকাশ করেন। দোলাও তাঁর ফেসবুকে গানটির প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। হাবিবের সুর ও সংগীতে গাইতে পারাটাকে স্বপ্নপূরণ হয়েছে। একটা সময় শুধু ডেমো গানে কণ্ঠ দিতেন দোলা।
তিন বছর ধরেই বিভিন্ন শিল্পী গানের চূড়ান্ত কণ্ঠ দেওয়ার আগে ডেমো দেওয়ার কাজটি করতেন তিনি। কিন্তু হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কীভাবে হাবিবের সঙ্গে দোলার পরিচয় ঘটে? ‘হাবিব ওয়াহিদ স্যারের কিছু গান গেয়ে তাঁর ফেসবুক পেজের ইনবক্সে পাঠাতাম। এক বছর ধরে পাঠাচ্ছি। গত রোজার মধ্যে একদিন হঠাৎ করে উনার রিপ্লাই আসে। লিখলেন, হু ইজ দিস? বললাম, আমি দোলা। কাজ করতে চাই। গান গাইতে চাই। আপনার ফ্যান। আপনার সঙ্গেও কাজ করতে চাই। তিনি বললেন, কোনো গান রিলিজ হয়েছে কি না। বললাম আছে। এরপর রিলিজ হওয়া একটি গান পাঠাই। হয়তো স্যারের পছন্দ হয়। আমাকে বললেন, আমি তো নিউ সিঙ্গারদের কাজ করছি। শুনে আমিও আশাবাদী হলাম। স্যার হয়তো আমাকেও সুযোগ দেবেন। একটা সময় পুরো বিষয়টা কাকতালীয়ভাবে ঘটে গেল।’ বললেন দোলা ফারুক।
একটা সময় সুযোগ আসে হাবিবের সঙ্গে দেখা হওয়ার। এর আগেই তিনি জানিয়ে রাখেন, ভয়েজ টেস্ট নেবেন। অডিশন নেবেন। দোলা বললেন, ‘স্যার আমাকে বললেন, একটা গানের প্ল্যান করছি। তুমি অডিশন দিতে আসতে পারো। দু–তিন ধাপে আমার অডিশন হয়। এরপর ওই গানের জন্য আমার ভয়েজটা তিনি পছন্দ করেন। ঈদের আগে আমার আবার ফাইনাল এক্সাম ছিল। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গানটায় কণ্ঠ দিয়েছি। পুরোটা স্বপ্নের মতো ছিল আরকি।’
যার এত বড় ভক্ত, তার সঙ্গে দেখা হওয়া এবং তাঁর সঙ্গে গাইবার ব্যাপারটা কেমন ছিল জানতে চাইলে দোলা বললেন, ‘ওই যে বললাম, এখনো পুরো ব্যাপারটা স্বপ্নের মতো লাগছে। এই গানের কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। এটা তো স্যাড একটা রোমান্টিক গান। আমাকে স্যার বলেছিলেন, তোমার জীবনে যত কষ্ট আছে, সবকিছু মাথায় রেখে তুমি ভয়েজটা দিবা। আমি তো আসলে আরও অনেক জায়গায় ভয়েজ দিয়েছি কিন্তু এখানে ভয়েজ দিতে গিয়ে একদম নতুন অভিজ্ঞতা হলো। মিউজিক কম্পোজার অনেকেই হতে পারেন, কিন্তু মিউজিক ডিরেক্টর সবাই হতে পারেন না। তিনি আমার কাছ থেকে কাজটা আদায় করে নিয়েছেন। আমি টেনসড ছিলাম। এমনও হয়েছে, গাইতে গাইতে আই ওয়াজ ক্রাইং। কারণ, সবার লাইফে কিছু স্যাড পার্ট থাকে। গানটা গাওয়ার সময় আমারও সেটা চলে আসছে। একটা গান গাইবার জন্য যে পরিবেশ ক্রিয়েট করা দরকার, সেটা তিনি করে দিয়েছেন। এই গানটা আমার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে অনেক লাকি ফিল করছি।’
দোলা ফারুক ঢাকার একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। গান শিখেছেন ছোটবেলা থেকে। স্কুল ও কলেজজীবন কেটেছে ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি স্কুল ও কলেজে। গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবার দুই সন্তানের মধ্যে দোলা ফারুক ছোট। বড় ভাইও ব্যাংকার, মা গৃহিণী। টাঙ্গাইলের মেয়ে দোলার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাভারে। তবে এখন থাকছেন উত্তরায়। জানালেন, ডেন্টিস্ট না হলে পেশাদারভাবে গানই করতেন।
কথায় কথায় বললেন, ‘গান ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। দুজন ওস্তাদের কাছে গানের তালিম নিয়েছি। আমি মনে করি, মানুষের যখন শরীরের অসুখ হয়, তখন ডাক্তারের কাছে যায়। কিন্তু মনের অসুখ কোনো ডাক্তার সারতে পারেন না। গানই হচ্ছে বড় ওষুধ। দুটিই তাই সমানতালে চালিয়ে যাব। তবে আমার প্রধান পেশা অবশ্যই ডেন্টিস্ট। এত কষ্ট করে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। এত দূর আসতে পেরেছি। রেজাল্ট বেরোলোই তো ডক্টর। দুটিই চালিয়ে যেতে চাই।’