সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে আলোচিত ও সমালোচিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের বিরুদ্ধে। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় তিনি সময় মিডিয়া লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী, প্রশাসন ও পরিচালন বিভাগের সৈয়দ আসাদুজ্জামান ঢাকার কলাবাগান থানায় হাজির হয়ে নোবেলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন।
ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে নোবেলের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করেন সময় টিভির সাংবাদিক আল কাছির। পরিচয়ের পর নোবেল সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ফোন কেটে দেন। তারপর ১২টা ৪৮ মিনিটে নোবেল নিজেই প্রতিবেদক আল কাছিরকে ফোন করে অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং তাঁকে জেলে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। শুধু তা–ই নয়, নোবেল সময় টেলিভিশনকে নিয়েও আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। এ সময় তিনি প্রথম আলো, চ্যানেল ২৪সহ ১০ সাংবাদিককে জেলে নেওয়ার হুমকিও দেন।’
হুমকি প্রদান করে সাংবাদিককে নোবেল বলেন, ‘নোবেলকে তুই চিনিস? নোবেল কী শিল্পী? নোবেল কিন্তু ক্যাডার।’ ফোনে নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার আপন শালা বলে উল্লেখ করেন নোবেল। শুধু তা–ই নয়, সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে প্রতিবেদককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসার হুমকি প্রদান করেন।’
সাধারণ ডায়েরিতে এ–ও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের জি বাংলার রিয়েলিটি শো থেকে আলোচনায় আসেন মাইনুল আহসান নোবেল। পরিচিতি পাওয়ার পর একাধিক বিতর্কের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, দেশের স্বনামধন্য সংগীতশিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে (নোবেল ম্যান) আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সম্প্রতি নগরবাউল জেমস, সুরকার ইথুন বাবু এবং সংগীতশিল্পী তাপসকে নিয়েও কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সবশেষ নোবেল তাঁর ফেসবুকে নিজের মৃত্যুতারিখ ঘোষণা করে স্ট্যাটাস দেন। পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে সময় টিভির নিজস্ব প্রতিবেদক আল কাছির বিষয়টি নিয়ে নোবেলের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ সোমবার দুপুরের পর নোবেলের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যস্ত পাওয়া যায়। বিকেল ৫টা ১৬ মিনিটে যখন কথা হয়, তখন তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিসের জিডি হইছে? ও জিডি–মিডি দেহে নেব নে।’ আপনি এখনো সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার কথা বলছেন। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরিচয় দিচ্ছেন। আরও কত কী বলছেন। আপনি কি মানসিকভাবে ঠিকঠাক আছেন? সুস্থ আছেন? এমন প্রশ্নে নোবেল বলেন, ‘আমি একদম ঠিকঠাক আছি। আমার ব্রেইন হানড্রেড পার্সেন্ট কাজ করতেছে।’
এদিকে সাংবাদিকের সঙ্গে নোবেলের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ সোমবার এ নিন্দা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাইনুল হাসান নোবেল সাংবাদিক আল কাছিরকে অপহরণের হুমকি দিয়েছেন। সময় টিভির সময় নিউজের সাংবাদিক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির এই সদস্যকে ১৬ তারিখ দিবাগত রাতে মুঠোফোনে হুমকি দেন নোবেল। যার তথ্যপ্রমাণ আল কাছিরের ফোনে ধারণ করা রয়েছে। সেই সঙ্গে নোবেল অশ্রাব্য ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করেন। নোবেলের এমন আগ্রাসী আচরণের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। নোবেলকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, কোনোভাবেই আপনার এমন আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে যদি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে এমন অন্যায় আচরণ করেন, তবে আপনাকে বয়কট করা হবে।’