শারীরিকভাবে ভালো ফেরদৌসী রহমান, মনটা বিষণ্ন
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বাসা থেকে বের হন না বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। কখনো কখনো ঘরের জানালা খুলতেও ভয় পান তিনি। করোনার সংক্রমণের কারণে পরিবারের পাশাপাশি অন্যদের সুরক্ষার কথা ভেবে সচেতন থাকছেন তিনি। টিকা নেওয়ার জন্য দুবার বাসা থেকে বাইরে বেরিয়েছিলেন। শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও মনটা ভীষণ ভার হয়ে আছে এই জ্যেষ্ঠ শিল্পীর।
বাড়িতে যেন সময় কাটতেই চাইছে না ফেরদৌসী রহমানের। মন বসাতে পারছেন না পড়া বা লেখায়। তিনি বলেন, ‘সময় যে কীভাবে কাটছে, বলে বোঝাতে পারব না। অনেক দিন ধরে বই লিখছিলাম, কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে লেখায়ও মন বসাতে পারছি না। কদিন আগে শুনলাম, করোনায় কবরীও চলে গেল, মিতা হক মারা গেল! খুব কষ্ট পেলাম। আরও কতজনের অসুস্থতা। এসব মনে হতেই, মনটা আরও বিষণ্ন হয়ে উঠছে। কোথাও যাচ্ছি না, বাসায় কাউকে আসতেও বলছি না। এতে যে যার মতো সুরক্ষিত থাকবে।’
করোনার টিকা দেওয়া শুরু হতেই প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ফেরদৌসী রহমান। সপ্তাহ তিনেক হলো দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন। শারীরিকভাবে ভালোই আছেন ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে কত দিন প্রাণভরে আকাশ দেখি না। বাইরে বের হতে পারি না। কদিন ধরে আবার অসহ্য গরম পড়ছে। এর মধ্যে আবার ভূমিকম্পও হলো। চারদিকে কী যে শুরু হলো। কোথায় যেন পড়ছিলাম, সৃষ্টিকর্তা তাঁর পৃথিবী ফেরত চেয়েছেন। তিনি যা চাইবেন, সেটাই তো হবে। আমাদের তো কিছুই করার নেই।’
মানুষের নানামুখী দুর্দশায় মনঃকষ্টে আছেন ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেন, ‘অদৃশ্য এক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি আমরা। এই যুদ্ধ মানুষকে দুর্বল করে দেয়, মানসিক শক্তি নষ্ট করে দেয়। গানের যত শক্তিই থাকুক, মানসিক শক্তি হারানো মানুষের মনকে গান প্রফুল্ল করতে পারে না। হয়তো শিল্পী হিসেবে আমি নিজে গান করে সময় পার করতে পারব, শান্তি পাব। কিন্তু এই অবস্থায় শারীরিক, মানসিক অবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে কষ্টে আছে মানুষ। গরিবের সংখ্যা বাড়ছে। কাজে থাকা মানুষগুলো কাজ হারাচ্ছে। মানুষ মিউজিক করে শান্তি থেকে। এখন তো অশান্তির সময়। খালি পেটে গান–কবিতা কিছুই বের হবে না।’
সময় কাটাতে ফেরদৌসী রহমান কখনো পড়ছেন বই, দেখছেন সিনেমা, শুনছেন গান। তবু যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি। ‘বই পড়ি, তবে মনোযোগ দিতে পারি না। লিখতে পারি না। মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত। কাল কী হবে বুঝতে পারছি না। দিনটাই শুরু হয় মৃত্যুর খবর পেয়ে, আতঙ্ক নিয়ে। টেলিভিশন অন করলেই ভাবতে থাকি, না জানি আজ কোন পরিচিতজনের মৃত্যুর খবর শুনতে হবে’, দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলেন এই শিল্পী।