লাইফ সাপোর্টে ফকির আলমগীর
করোনায় আক্রান্ত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের শারীরিক অবস্থার অবণতি হয়েছে। তাঁকে এখন ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। আজ রাত ১০টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব।
সাড়ে ১০টার দিকে মাশুক জানান, কিছুক্ষণ আগে তাঁর বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪৫–এ নেমে আসে। যার কারণে চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশন নেওয়ার পরামর্শ দেন। ভেন্টিলেশনে নেওয়ার পর থেকে ফকির আলমগীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০–এ উন্নীত হয়েছে। সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়েছেন মাশুক।
এর আগে মাশুক জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবার ফুসফুস ৬০ শতাংশ সংক্রমিত। স্বাভাবিক নিয়মে তাঁকে খাবার খাওয়ানো যাচ্ছে না। নল দিয়ে তরল খাবার দিতে হচ্ছে।
ঢাকার গুলশানের একটি হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভর্তি করা হয় করোনায় আক্রান্ত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। তার আগে কয়েক দিন ধরে ফকির আলমগীর জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। সেদিনই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর তাঁকে গ্রিনরোডের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাঁকে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাশুক আলমগীর জানিয়েছেন, তাঁর বাবার ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুই ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীতচর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তাঁর।
ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।