মাইকেল জ্যাকসন কেন অনন্য?
পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন মারা গেছেন ১০ বছর হয়ে গেল। এখনো তাঁকে নিয়ে বিশ্বের অগণিত মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কারণ, গানের ভুবনে তিনি অনন্য।
মাইকেল জ্যাকসন মারা যান ২০০৯ সালের ২৫ জুন। তাঁর বয়স তখন ৫০। বেঁচে থাকলে এ বছর ৬১ বছরে পা দিতেন তিনি। জীবন তাঁকে হাত ভরে দিয়েছিল ঐশ্বর্য। পেয়েছিলেন ১৫টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। লাখো ক্যাসেট আর সিডি বিক্রি হয়েছে তাঁর। মাইকেল জ্যাকসন শুধু গান-গাওয়া তারকা ছিলেন না; তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেতা। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি বদলে দিয়েছিলেন সংগীতবিশ্ব।
মাইকেল জ্যাকসন দাঁড়িয়েছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। ১৯৮২ সালে তাঁর ‘বিলি জিন’, এরপর ‘থ্রিলার’ তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল কোন উচ্চতায়, সে কথা সবাই জানে। নতুন করে সেসব বলা নিরর্থক। শুধু বলে রাখা ভালো, মিউজিক ভিডিও কেমন হওয়া উচিত, সেটা বুঝি ‘থ্রিলার’ হাতে–কলমে দেখিয়ে দিয়েছিল। ১৪ মিনিটের এই ভিডিও তৈরি করতে খরচ হয়েছিল তখনকার সময়ের পাঁচ কোটি ডলার। জ্যাকসনের ‘মুনওয়াক’-এর কথাও নিশ্চয়ই অনেকের মনে পড়ে যাবে। আর হ্যাঁ, তাঁর কনসার্টগুলো ছিল দেখার মতো। একদিকে জ্যাকসন গাইছেন গান, অন্যদিকে দর্শক-শ্রোতার দল যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। উন্মাদের মতো আচরণ করছে তারা। কেউ কেউ উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে!
নাহ! মাইকেল জ্যাকসন একটা ব্যাপার ছিল বটে! তাঁর কনসার্টের ব্যাপারে দুটো কথা বলা যাক। বিশ্বজুড়ে বিশাল মাপের কনসার্টের জন্যও মাইকেল জ্যাকসনকে স্মরণ করতে হবে। ১৯৯২ সালে ‘দ্য ডেনজারাস ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ চলেছিল পাঁচ মাস ধরে। এই সময়ের মধ্যে জ্যাকসন করেছিলেন ৬০টি কনসার্ট।
মৃত্যুর আগে জ্যাকসনের মাথায় সে রকমই একটি ভাবনা এসেছিল। ভেবেছিলেন, কনসার্ট নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়বেন বিশ্ব সফরে। প্রথম ১০টি কনসার্ট থেকে আয় করবেন পাঁচ কোটি ডলার। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তার আগেই জীবনকে বিদায় জানান তিনি।
মৃত্যুর ১০ বছর পর একটি তথ্যচিত্রে নোংরাভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই পপ তারকাকে। তাঁর বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়নের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’। জ্যাকসন তত্ত্বাবধায়কেরা মনে করেন, তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য বহু বছর আগে মীমাংসিত একটি ঘটনাটিকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে এইচবিও।
২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় ৪ ঘণ্টার এ তথ্যচিত্র। কথিত আছে, মাইকেল জ্যাকসন ৭ ও ১০ বছরের দুই শিশুকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। তাঁরা এখন তিরিশের যুবক। ওয়েড রবসন একজন কোরিওগ্রাফার আর জেমস সেফচাক একজন টিভি অভিনেতা। কেবল তাঁদের ভাষ্য নিয়ে নির্মিত হয়েছে ওই তথ্যচিত্র।
২০০৩ সালে মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সে বছর পুলিশ তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি ‘নেভারল্যান্ড’-এ তল্লাশি চালায়। খামারবাড়িটির নামানুসারে তথ্যচিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। জ্যাকসনের তত্ত্বাবধায়কদের দাবি, তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠরা সেখানে উপেক্ষিত। তথ্যচিত্রটি একপেশে। জ্যাকসন কখনোই শিশুদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন না।
তথ্যচিত্রটি টেলিভিশনে প্রচারের পর থেকে জ্যাকসনের গান অনলাইনে বিক্রি ও শোনায় ভাটা পড়েছে। প্রায় ৪ শতাংশ কমে গেছে অ্যালবাম বিক্রি। অনলাইনে তাঁর অডিও-ভিডিওর চাহিদা কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এমনকি রেডিওতে তাঁর গান প্রচার কমে গেছে ১৩ শতাংশ।
বেশ কয়েকবার দাম কমিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না মাইকেল জ্যাকসনের আলোচিত সেই খামারবাড়িটি। ২০১৫ সালে বিক্রির জন্য নেভারল্যান্ড র্যাঞ্চের দাম চাওয়া হয়েছিল ১০ কোটি ডলার। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে দাম কমিয়ে একবার সেটি করা হলো ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার, পরে মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ ডলারে সেটি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নেভারল্যান্ড নামটি বদলে নতুন করে এর নাম রাখা হয়েছে সাইকেমোর ভ্যালি র্যাঞ্চ। খামারবাড়িটির যৌথ মালিকানায় রয়েছে দ্য সান্তা বারবারা ও ক্যালিফোর্নিয়া হাউস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।
জ্যাকসনের মৃত্যুর আগে ২ হাজার ৭০০ একরের ওই খামারবাড়িতে অনেক কিছু সংযোজন করা হয়। সেখানে আছে রেললাইন, অগ্নিসহায়তা কেন্দ্র, বিস্তীর্ণ বাগানসহ আরও নানা কিছু। ১৯৮২ সালে বিরাট এই বাগানবাড়ির স্থাপত্যশৈলীর নকশা করেছিলেন রবার্ট অলটেভার্স। ১৯৮৯ সালে জ্যাকসন এটি কিনেছিলেন ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। তারপর নিজের মতো করে তিনি সেটার নকশা বদলে নেন। বাড়িটির মূল দালানে আছে ছয়টি শোয়ার ঘর, নয়টি বাথরুম, একটি মাস্টার বেডরুম, দুটি মাস্টার টয়লেটসহ একটি চিলেকোঠা। ভেতরে লেক, সুইমিং পুলসহ খেলার ব্যবস্থা ছাড়াও আছে একটি বড় থিয়েটার হল। সূত্র: হলিউড রিপোর্টার, পিপল, ফোর্বস, বিবিসি