বাদশাকে আমি চিনতামই না: রতন কাহার
>সনি মিউজিকের ব্যানারে বলিউড র্যাপার বাদশার সংগীতায়োজনে ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি নতুন করে ‘গেন্দা ফুল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি জানেনই না এই গানের গীতিকবি রতন কাহার। কষ্ট আছে, আছে অভিমানও। প্রথম আলোর সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় ছোট ছেলে শিবনাথ কাহারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সিউড়ির বাড়ি থেকে কথা বলেন ৮৫ বছর বয়সী এই গীতিকবি।
সাক্ষাৎকার: মনজুর কাদের, ঢাকা
কেমন আছেন?
বয়স হয়েছে। এই বয়সে যতটা ভালো থাকা যায় আরকি।
পুরো পৃথিবী করোনার সংক্রমণে থমকে গেছে। আপনার ওখানকার কী অবস্থা?
আমাদের এখানে করোনা সংক্রমণ এখনো কম। তবে লোকজন বাড়ি থেকে খুব একটা বের হচ্ছে না। আমার যেহেতু বয়স হয়েছে, তাই বাড়িতে থাকছি।
আপনার লেখা ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি ‘গেন্দা ফুল’ শিরোনামে বলিউড র্যাপার বাদশা নতুন করে গেয়েছেন। এই গানটি প্রকাশের আগ পর্যন্ত নাকি আপনার কোনো অনুমতি নেয়নি?
আমি জানতামই না। গান তৈরির আগে নয়, এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছ থেকে এই গান নিয়ে কোনো ধরনের অনুমতি নেইনি। তবে গানটি নিয়ে এ রকম ঘটনা এবারই যে প্রথম ঘটেছে তা কিন্তু নয়। অনেক বছর আগেও গানটি নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।
নতুন করে গানটি প্রকাশিত হওয়ার খবর কীভাবে জানলেন?
যেদিন ছেড়েছিল, তার পরদিনই গানটির কথা জানতে পারি। হঠাৎ করে দেখলাম, টেলিভিশনে ‘গেন্দা ফুল’ গান বাজছে। একটু অবাক হই এই ভেবে, কীভাবে কী হয়ে গেল।
বাদশাকে কি আপনি চিনতেন?
বাদশাকে আমি চিনতামই না। এই গানের পর তাকে প্রথম দেখেছি, নাম শুনেছি।
গানটি শোনার পর কেমন লেগেছে...
নিজের লেখা গান শুনতে ভালো লাগবে না? আমরা তো বাঙালি, আমাদের মনটা অনেক বড়। আমরা সরলও। এত বছর পর আবার যখন গানটি শুনলাম, ভালো লেগেছে। কিন্তু বাংলার মধ্যে হিন্দি ও ইংরেজি মিশিয়ে যা করা হলো, তা নিয়ে কী বলব বুঝতে পারিনি। কী আর করা। এভাবে উপস্থাপনে কষ্ট পেয়েছি। যেভাবে গানটি তৈরি করেছে, সেটা সত্যি ভালো লাগেনি।
আপনি বলেছিলেন ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি নিয়ে এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে...
এই গানটি আমি তৈরি করি ৪৮ বছর আগে। তৈরির পর আমি নিজেই গানটি আকাশবাণীতে গেয়েছিলাম। সে সময় গানটি অবশ্য জনপ্রিয়তা পায়নি। আমার মামার একটি গানের দল ছিল, সেখানে এই গান সবাই মিলে গাইতাম। তখন স্বপ্না চক্রবর্তী নামের একজন গানটি লিখে নেন। আর ১৯৭৬ সালের দিকে প্রথমবারে মতো তিনি ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি রেকর্ড করলে ছড়িয়ে যায় সবার মুখে মুখে। সেদিনই আমি এই গান নিয়ে দুঃখ পাই। কারণ, গানে গীতিকার হিসেবে আমার নাম উল্লেখ না করে ‘প্রচলিত গান’ লেখা হয়! আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন প্রতিবাদ করেছিলাম কারণ দৌড়ানোর মতো সময় ছিল। রেকর্ডিং যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমার কথা তাঁরা আমলে নেননি। আমাকে বলেছিল, যেন ‘প্রচলিত গান’ বিষয়টি মেনে নেই। ওটাই ছিল ‘বড় লোকের বিটি লো’ নিয়ে প্রথম কষ্ট পাওয়া।
এবারও কাছাকাছি ঘটনা ঘটল, আপনার চাওয়া কী?
কী–ইবা চাইতে পারি, আমাকে আমার স্বীকৃতিটা দিলেই খুশি। এই সময়ে এসে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে তো সামনের দিনে কেউ জানবে না। গানের ইতিহাস বদলে দেওয়ার মতো।
আপনার পরিবারের খবর বলুন
স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সংসার।
বাংলাদেশে কখনো আসা হয়েছে আপনার?
না, কখনো আসা হয়নি। তবে বাংলাদেশের লোকগানের ভান্ডার সমৃদ্ধ এটুকু জানি।
আপনার বয়স ৮৫, গান লেখার চর্চাটা কি এখনো চলছে?
এক জীবনে গান লেখাটাই তো আমাকে সবার কাছে বাঁচিয়ে রেখেছে। আজকে বাংলাদেশ থেকে যে ফোন করেছেন, এটাও তো গানের কারণে। তবে এটা ঠিক, আগের মতো শারীরিক সেই শক্তি নেই, তাই কম লিখছি।