দেশের প্রতিটি দুর্যোগে তিনি গান বেঁধেছেন
বাংলা গণসংগীতের ইতিহাসে শিল্পী ফকির আলমগীরের নাম স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু বাংলাদেশের গণসংগীতের চর্চা ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, গণসংগীত ও দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি জানিয়ে ফকির আলমগীরকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ শিল্পী ফকির আলমগীর স্মরণসভা আয়োজন করে। ফকির আলমগীর ছিলেন এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
গত ২৩ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিরকালের জন্য তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। স্মরণসভার শুরুতেই জানানো হয়, অতিমারির কারণে এত দিন বাংলা গণসংগীতের এই প্রাণপুরুষের স্মরণে কোনো আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এখন জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথমেই তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তাঁর সুর করা ও সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘মানুষের মাঝে বসবাস করি মানুষে মিলেছে ঠাঁই’ গানটি সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী।
আলোচকেরা বলেন, মূলত কবি নজরুল ইসলামের হাত দিয়েই বাংলা গণসংগীতের সূচনা হয়েছিল। পরে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (আইপিটিএ) মাধ্যেম গণসংগীত বিকশিত হয়। মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন–সংগ্রামে গণসংগীত বিশেষ ভূমিকা রাখে। আইপিটিএর গানের ধারায় বাংলাদেশে নতুন সংযোজন করেছিলেন ফকির আলমগীর। তিনি দেশের সাধারণ মানুষের সুখ, দুঃখের কথা তাঁর গানে তুলে এনেছেন। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেলসন ম্যান্ডেলা, পল রবসনহ বহু ব্যক্তিত্বকে নিয়ে গান করেছেন। অন্যদিকে, দেশের প্রতিটি দুর্যোগে তিনি গান বেঁধেছেন। দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের কণ্ঠসৈনিক অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের ফকির আলমগীর গভীরভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতেন। স্বাধীনতা পদক পাওয়া তাঁর ন্যায্য অধিকার।’
বক্তারা বলেন, ‘পূর্বসূরিদের সম্মান জানানোর ব্যাপারে তিনি ছিলেন দ্বিধাহীন। আচার-ব্যবহারে ছিলেন শিশুর মতো। গানকে ভালোবেসে একটা জীবন কাটিয়ে দিলেন। গানই ছিল তাঁর প্রাণ। মানুষের জন্য গান—এ বিশ্বাসে তিনি ছিলেন অটল।’
আলোচনায় অংশ নেন নাট্যজন আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, কবি মুহম্মদ সামাদ, গোলাম কুদ্দুছ, ঝুনা চৌধুরী, হাসান আরিফ, আহমেদ গিয়াস প্রমুখ। পরিবারের পক্ষে স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন কাজী মিজানুর রহমান। সঞ্চালনা করেন মানজার চৌধুরী। আলোচনার মধ্যে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা ফকির আলমগীরের সুর করা গণসংগীত পরিবেশন করেন। স্মরণসভা উপলক্ষে এখানে ৬ নম্বর গ্যালিরে ফকির আলমগীরের জীবন ও কর্মের নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।