টিকে থাকার লড়াইয়ে কণ্ঠশিল্পীরা
কেউ বাধ্য হয়ে কাজে নেমেছেন, কেউ পরোয়া করতে চাননি করোনাভাইরাসের। মঞ্চে পরিবেশনা বন্ধ বলে থেমে নেই বাংলাদেশের সংগীতশিল্পীরা। তাঁদের অনেকেই ঘরে বসে গান করছেন এত দিন। সম্প্রতি সতর্কতার সঙ্গে অনেকেই গিয়ে ঢুকছেন স্টুডিওতে। গান যাঁদের পেশা, টিকে থাকার লড়াইয়ে তাঁরা অগ্রসর হচ্ছেন ধীরে ধীরে।
চলতি মাস থেকে দেশের বিনোদন অঙ্গনের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ছোট ও বড় পর্দার শুটিংয়ে এখন বাধা নেই। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলছে নাটকের জোরদার শুটিং। গত তিন মাস সংগীতাঙ্গনের বেশ কিছু কাজ হয়েছে ঘরে বসে। অনেক সুরকার, শিল্পী মুঠোফোনে গান রেকর্ড করে অনলাইনে পাঠিয়েছেন শব্দপ্রকৌশলীদের কাছে। সেগুলো ঘরে বসে সম্পাদনা বা প্রয়োজনীয় অন্য কাজগুলো করেছেন ধাপে ধাপে। বেশির ভাগ গানই ছিল করোনাকেন্দ্রিক, সচেতনতামূলক। গানের দল চিরকুট ঘরে বসে গান করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে মানুষকে। চালু করেছে 'আলোর গান' নামের এক কর্মসূচি। এত দিন ঘরে বসে গাইলেও গানের মানুষেরা একে একে ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে স্টুডিওগুলো খুলেছে। কানে হেডফোন পরে শিল্পীরা দাঁড়িয়েছেন মাইক্রোফোনের সামনে।
প্রায় তিন মাস পর নতুন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ন্যান্সি। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসে চারটি গানের রেকর্ডিং করলেন তিনি। ন্যান্সি জানান, প্রথম সপ্তাহে গায়েনবাড়িতে দুটি, স্টুডিও জয়াতে একটি গান করা হয়েছে। কদিন আগে ফোকাস মাল্টিমিডিয়াতে আরেকটি গান করেছেন তিনি। ন্যান্সি বলেন, 'তিন মাস ঘরে বসে ছিলাম। এখন সবকিছু খুলে দিয়েছে সরকার। নাটক-সিনেমার শুটিং শুরু হয়ে গেছে। আমরা কণ্ঠশিল্পীরা বসে থেকে কী করব? কাজ তো করতেই হবে।' তবে সর্বোচ্চ সতর্ক তিনি। নিজের গাড়িতে করে নিরাপত্তার সঙ্গে বের হয়েছেন। স্টুডিওতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে দেখা হবে, তাঁদের কেউ আক্রান্ত নন বা করোনার কোনো লক্ষণ নেই তাঁদের। তিনি বলেন, স্টুডিওর সুবিধা হচ্ছে, নাটকের শুটিংয়ের মতো সেখানে বেশি লোক থাকে না।
এরই মধ্যে স্টুডিওতে বেশ কয়েকটি গানের রেকর্ডিং করেছেন দিনাত জাহান মুন্নী। তিনি বলেন, 'সরকারি চাকরিজীবীরা সাবধানতা অবলম্বন করে অফিস করছেন। আমার পেশা গান, আমিও সাবধানতার সঙ্গে গানের কাজে বাইরে বেরিয়েছি। ঘরে বসে থাকলে এই শহরে আমার জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা দেবে কে?'
বহুদিন পর শওকত আলী ইমনের সুরে স্টুডিওতে গিয়ে গান করেছেন ডলি সায়ন্তনী। ইমন বলেন, 'করোনাকালে এটি প্রথম কাজ আমার। করোনা শিগগির যাবে, এ রকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই নিজেদের রুটি-রুজি টিকিয়ে রাখতে কাজ শুরু করে দিয়েছি।' সম্প্রতি ফোকাস স্টুডিওতে দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বেলাল খান ও সালমা। বেলাল খান বলেন, 'গত তিন মাস কোনো আয় নেই। কিন্তু বাড়িভাড়া, অফিসভাড়া, গাড়ির ড্রাইভারের বেতন দিতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কাজে নামতে হচ্ছে।'
জীবন ও দেশের প্রতি মায়া আছে এ শিল্পীদের সবারই। সবাই জানিয়েছেন, মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাঁরা। কারও সঙ্গে কথা বলছেন মাস্ক পরেই। আর হাত না ধুয়ে ভুলেও কেউ নাক-মুখ বা চোখে হাত দেন না। এ ছাড়া স্টুডিওগুলো জীবাণুমুক্ত করার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক স্টুডিওর পরিচালকেরা। সুরকার ও গায়েনবাড়ি স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী মীর মাসুম জানান, স্টুডিওর সিঁড়ি থেকে শুরু করে ভেতরটা দিনে দুবার জীবাণুমুক্ত করেন তিনি। এ ছাড়া আপাতত সেই সব শিল্পীর সঙ্গেই কাজ করছেন, যাঁরা তিন মাস ঘরেই ছিলেন।
করোনাকে উপেক্ষা করে শিল্পীদের কাজ শুরু করা প্রসঙ্গে এমআইবির সভাপতি শাহেদ আলী বলেন, মনে হচ্ছে করোনা অনেক দিন থাকবে। এর মধ্য দিয়েই নিরাপদে কাজ করতে হবে। শিল্পীরা অনেক দিন বসে আছেন। তাঁদের জীবন-সংসারও তো চলতে হবে। কাজ না করলে, আয় না করলে তাঁরা চলবেন কীভাবে? সবাইকেই ধীরে ধীরে কাজে নামতে হবে।