‘কিশোর খুবই কষ্ট পেয়েছিল’: লিপিকা এন্ড্রু

প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রুকে কখনোই সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়নি। শিল্পী নিজেও তাঁর পরিবারকে এসব থেকে দূরে রাখতেন। শিল্পীর মৃত্যুর দেড় মাস পর দুঃখ নিয়ে ফেসবুকে কিছু কথা লিখেছেন তিনি। জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী শিল্পী এন্ড্রু কিশোর সুযোগসন্ধানীদের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন। কিশোর আমাকে বলেছিল, ‘আমি এত অসুস্থ না হলে কোনো দিন বুঝতেই পারতাম না যে মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে, আমার জন্য এভাবে দুই হাত বাড়িয়ে দেবে।’

মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানে এন্ড্রু কিশোর ও লিপিকা এন্ড্রুপ্রথম আলো

প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রুকে কখনোই সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়নি। শিল্পী নিজেও তাঁর পরিবারকে এসব থেকে দূরে রাখতেন। শিল্পীর মৃত্যুর দেড় মাস পর দুঃখ নিয়ে ফেসবুকে কিছু কথা লিখেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এসব লিখতে তিনি বাধ্য হয়েছেন।

সেই লেখায় লিপিকা এন্ড্রু জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী শিল্পী এন্ড্রু কিশোর সুযোগসন্ধানীদের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন। শিল্পীর মৃত্যুর পর কেউ নিজেকে ছাত্র বা শিষ্য হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছেন। লিপিকা এন্ড্রু লিখেছেন, ‘কিশোরের কোনো ছাত্র বা শিষ্য ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে একজন নিজেকে তাঁর শিষ্য বলে প্রচার করতে লাগল। কিশোর ফোন করে তাকে বকা দিয়েছিল, বলেছিল কথাটা না লিখতে। কিন্তু সে তা শোনেনি। কিশোর খুব কষ্ট পেয়েছিল এবং অসন্তুষ্ট ছিল। সে নিজেকে এন্ড্রুর শিষ্য পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত ইউটিউবে ভুয়া ভিডিও ক্লিপ আর খবর দিয়ে চলেছে। মানুষ এসব ভুয়া খবর কতটুকু বিশ্বাস করছে, সেটাও বোঝার উপায় নেই। কিশোর একজন সত্যিকারের শিল্পী। একজন শিল্পীর যে গুণগুলো থাকা প্রয়োজন, তার প্রায় সবগুলোই ওর মধ্যে ছিল।’

পরিবারের সঙ্গে এন্ড্রু কিশোর
সংগৃহীত

এন্ড্রু কিশোরের ফেসবুক পেজে স্ত্রী লিপিকা লেখেন, ‘ভেবেছিলাম আর কিছু লিখব না। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন খবর দেখে না লিখে থাকতে পারলাম না। কিশোর বেঁচে থাকতে যারা কিছু বলার সাহস পায়নি, আজ তারা অবলীলায় যা ইচ্ছা তাই বলছে। কিশোর যাদের স্নেহ করত বা শ্রদ্ধা করত, তারা কি সুন্দর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে বা লিখেছে। যেমন ১. আগের দিন কফিন বানাতে বলল। ২. মায়ের পাশে সমাহিত হতে চাই। ৩. বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ৪. মুক্তিযোদ্ধাদের গান শোনাত ইত্যাদি ইত্যাদি। ইউটিউবে তো ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি। বিয়ে, ছেলে, মেয়ে, বাড়ি, গাড়ি, টাকা, সম্পত্তি নিয়ে মনগড়া গল্পের খবর আর ভিডিওর প্রতিযোগিতা চলছে যেন। খুব অবাক হয়েছি। মিথ্যা খবর বানিয়ে কার কী লাভ হচ্ছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান নাকি সামাজিকভাবে লাভবান, ঠিক জানি না।’

প্রসঙ্গক্রমে এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে এই শিল্পীর চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছিল প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা। যার ২৪ শতাংশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার, ৩২ শতাংশ তাঁদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন, আর সবচেয়ে বেশি, ৪৪ শতাংশ দিয়েছিল দেশ ও বিদেশের অগণিত শিল্পী, ভক্ত, অনুরাগী। যারা অন্তর থেকে চেয়েছিল, কিশোর সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসুক। জীবনের একেবারে শেষ দিকে এন্ড্রু কিশোর তাঁর স্ত্রীকে নিজের তৃপ্তির কথাও জানিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘কিশোর আমাকে বলেছিল, আমি এত অসুস্থ না হলে কোনো দিন বুঝতেই পারতাম না যে মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে, আমার জন্য এভাবে দুই হাত বাড়িয়ে দেবে। দেশে ফিরে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাবে বলে অনেক কিছু ভেবে রেখেছিল। ভাবনাগুলো ভাবনাই থেকে গেল।’