বাজে কথার গান গেয়ে শ্রোতার রুচি নষ্ট করতে চাই না
নবাব এলএলবি সিনেমার টাইটেল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন পান্থ কানাই। এর মধ্য দিয়ে কয়েক বছরের বিরতি ভাঙলেন তিনি। কাজে ফেরাসহ নানা প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
প্রশ্ন :
কেমন আছেন, কী অবস্থা?
কোনো অবস্থা নাই। এখন তো কোনো অনুষ্ঠান নাই। দেশ ও পৃথিবীর অবস্থাটাই যেন কেমন হয়ে গেছে। কী যে করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।
প্রশ্ন :
তাহলে তো মনে হয় একটু কঠিন সময় পার করছেন?
সত্যি বলতে, জীবন খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সামনে যে কী হবে, ভাবতে পারছি না। রেকর্ডিং একেবারেই কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম করে নতুন গান করছে না। কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান ইউটিউবের জন্য গান বানায়, কিন্তু কাজের আগেই শুকনো কণ্ঠে জানায়, বাজেট নাকি নেই। সিনেমা কমে গেছে, সিনেমার গান তো আরও কমেছে। পেশাদার শিল্পী হওয়ায় চিন্তায় আছি।
প্রশ্ন :
ঘর–সংসার চলছে কেমন?
সংসার চলে যাচ্ছে। ডাল-ভাত কোনোমতে জুটে যায়। কিন্তু এটার নাম কি চলা? আমাদের চলা হচ্ছে, গান–বাজনা করতে পারাটা। গান–বাজনা করতে না পারায় নিশ্বাসটা যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন তো নিজের সন্তানকে শিল্পী বানানোর সাহসও পাচ্ছি না।
প্রশ্ন :
আপনার একমাত্র রুটিরুজি কি গান?
আমি ইচ্ছা করেই সংগীতকে রুটিরুজি হিসেবে নিয়েছি। চাকরিবাকরি করতে কোনো দিনই ভালো লাগেনি, করিওনি। আর ব্যবসা আমার দ্বারা হবে না, ব্যবসাটা আমি বুঝিও না। সংগীত আমার আত্মা ও দেহের খোরাক।
প্রশ্ন :
আপনার ছেলে-মেয়ে কজন?
আমার তিন ছেলে। বড় ছেলে ক্লাস এইটে, মেজটা ফোরে, ছোটটা দেড় বছরের।
প্রশ্ন :
করোনার এই সময়টা কাটছে কীভাবে?
গান আর সংসার নিয়েই আমি থাকি। খুব জরুরি না হলে ঘর থেকে বের হই না।
প্রশ্ন :
অনেক দিন পর সিনেমার জন্য গান গাইলেন?
তা ৪-৫ বছর তো হবেই। বহুদিন পর একটা সুন্দর গানে ফিরলাম, মনটাও ভালো। নিজের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করিনি, তাই এত বছর গান করিনি। এমনিতে আমি উল্টাপাল্টা কথার গান কখনোই গাই না। আপস করলে তো এত বছরে অসংখ্য গান ঝুলিতে থাকত।
প্রশ্ন :
‘নবাব এলএলবি’ ছবির টাইটেল গানের কোন বিষয়টা আপনাকে আকর্ষণ করেছে?
গানের কথাগুলো আমাকে আকর্ষণ করেছে। গানের ডেমো শোনার পরই মনে হয়েছে, এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। কথা ও সুরের ডেমো শুনেই রক্ত গরম হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন :
গানটি গাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো কারণ ছিল?
আরেকটা কারণ ছিল। চলচ্চিত্রে আমি ১৫-২০টির মতো গান গেয়েছি। পর্দায় কয়েকজন জনপ্রিয় তারকা এসব গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন। কিন্তু কখনোই শাকিব খানের লিপে আমার কোনো গান যায়নি। ভাবলাম, আমাদের জনপ্রিয় নায়ক, তাঁর লিপে এত সুন্দর একটি গান করার সুযোগ হাতছাড়া করার মানে হয় না।
প্রশ্ন :
নতুন অনেকে গাইছেন। তাঁদের গান শোনার সুযোগ হয়?
নতুনদের গান খুবই ভালো লাগে। কারও কারও গান তো কলিজায় দাগ কেটে যায়। তবে তাদের বলব, প্রচারের আলো পেয়ে প্র্যাকটিস ছেড়ে দিয়ো না। সংগীত কিন্তু আজীবনের সাধনা। দেখা যাচ্ছে, খুব ভালো ভালো ছেলেমেয়ে প্রচার পেয়ে খুশি হয়ে যাচ্ছে। পরে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন :
আপনার গানের সংখ্যা এত কম কেন?
গানের কথা ভালো লাগে না, তাই। বাজে কথার গান গেয়ে শ্রোতার রুচি নষ্ট করতে চাই না। শ্রোতার রুচি নষ্ট করার জন্য দায়ী শিল্পীরাও। আজকাল তো আবার ফেসবুকের লাইক-ফলোয়ার দেখে শিল্পী নির্বাচন করা হয়। আমাকে এমনও শুনতে হয়েছে, ‘আপনার তো ফেসবুক ফলোয়ার কম, আপনাকে গান গাওয়ালে রিস্ক হয়ে যায়!’ তখন আমি বলি, ‘আমার কাছে আপনাকে আসতে বলেছে কে?’
প্রশ্ন :
সাধারণত কোনো গান গাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা প্রাধান্য দেন?
কথা, সুর ও সংগীতায়োজন, তিনটাই ভালো লাগতে হয়। হয়তো কথা বা সুরের ওপর এদিক–সেদিক হয়েছে, তবে গানের কথায় কোনো দিন আপস করিনি। গীতিকবিতা পছন্দ না হলেও আমি কখনোই গান গাই না।
প্রশ্ন :
অনেক দিন ধরে শুনছিলাম, গানের অ্যালবাম প্রকাশ করবেন?
এখন কি আর অ্যালবাম বের হয়? আমার ইউটিউব চ্যানেলটা মনিটাইজ করে সেখানে সব গান ছাড়ব। অনেক গান তৈরি করে রেখেছি।