মনে হয়, সে এক রূপকথার কাহিনি। সবে শেষ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। বিধ্বস্ত দেশ গড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঠিক সে সময় এক হ্যাংলা তরুণের কণ্ঠে ভেসে এল, ‘আলাল দুলাল’ কিংবা ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’। চমকে উঠল দেশ। আরে! সংগীতের রাজ্যে এ কোন রাজপুত্রের আবির্ভাব হলো? শুদ্ধ সংগীতের অনুসারীরা তাঁকে অগ্রাহ্য করল, কিন্তু জনে জনে ছড়িয়ে পড়লেন আজম খান তাঁর স্টাইল আর সংগীত নিয়ে। হয়ে উঠলেন পপসংগীতের বাংলাদেশি আইডল।
কী ছিল আজমের কণ্ঠে? খুব যে চর্চিত কণ্ঠ, তা তো নয়। তবে কেন হাজার হাজার মানুষ গিয়ে হাজির হতো তাঁর কনসার্টে? ‘আলাল কই’ চিৎকারের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে গিয়ে কেন কেঁদে ফেলত ভালোবাসার উত্তেজনায়? শ্মশ্রুমণ্ডিত, বাবরি চুলের মায়াময় চোখের অধিকারী এই গায়ক কী করে জিতে নিলেন কোটি হৃদয়, তা আজও বিস্ময় জাগায় মনে। ২০১১ সালের এই দিনে চলে গেছেন আজম খান, কিন্তু আজও হয়ে আছেন তারুণ্যের প্রতীক। বাঁধভাঙা তারুণ্যের জোয়ারে আজম খানই মন্ত্রণাদাতা।
দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন আজম খান। মৃত্যুর উৎসবে হাজির হওয়া ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের শুনিয়েছেন গান। যোদ্ধারা হয়েছেন অনুপ্রাণিত। স্বাধীন দেশে কত মানুষই তো কত রকমভাবেই না আখের গুছিয়ে নিল! কিন্তু আজম খান সে পথে পা বাড়াননি। তারুণ্যের প্রতীক এই মানুষটির কাছে যে গেছে, সে-ই বুঝেছে তাঁর বিশাল শরীরে স্পন্দিত হচ্ছে এক শিশুর হৃদয়। তাই অল্প নিয়েই তুষ্ট ছিলেন আজম খান।
পপসম্রাট, আমরা আপনাকে ভুলিনি। আজ আপনার প্রয়াণ দিবসে আপনার ভাষাতেই জানিয়ে দিই, ‘জীবন চলিয়া যাবে এমনি/বয়ে চলে স্রোেতাধারা যেমনি’ কথাটি খাঁটি, কিন্তু সেই স্রোেতাধারার প্রতিটি কম্পনে থাকবেন আপনি। থাকবেনই।
আপনাকে অভিবাদন, হে পপসম্রাট!