লোপেজ–ভক্তদের অম্ল–মধুর অভিজ্ঞতা
চলতি সপ্তাহটা জেনিফার লোপেজের ভক্তদের জন্য অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার। এক দিনে তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা অ্যাটল্যাস নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে, অন্যদিকে তাঁর বহুল প্রতীক্ষিত কনসার্ট স্থগিত করা হয়েছে।
জেনিফার লোপেজ সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে গান, অভিনয় সমান দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অনেক সিনেমা করেছেন, যেগুলো নিজেই ভুলে যেতে চাইবেন, দাগ কাটতে পারেনি এমন গানের সংখ্যাও কম নয়; তবু গত তিন দশকে তিনি যে পপ কালচারের অন্যতম মুখ, তা কে অস্বীকার করবে!
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের দর্শকের কাছে পরিচিতি পান ‘অ্যানাকোন্ডা’ সিনেমা দিয়ে, কাছাকাছি কয়েক বছরে তাঁর ‘সেলেনা’, ‘আউট অব সাইট’ সিনেমাগুলোও জনপ্রিয়তা পায়। যা তাঁকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া লাতিন অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি দেয়। পরে ‘মেড ইন ম্যানহাটান’, ‘শ্যাল ইউ ড্যান্স’, ‘মনস্টার-ইন-ল’-এর মতো রোমান্টিক কমেডি সিনেমাতেও অভিনয় করেন।
একই সঙ্গে চলে তাঁর গানের ক্যারিয়ারও। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম অব দ্য ৬’। এরপর ‘জে লো’, ‘দিস ইজ মি...দেন’, ‘রিবার্থ’ অ্যালবামগুলো গায়িকা হিসেবে তাঁকে সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দেয়। তাঁর গানে ক্ষমতায়ন, যৌনতা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিচ্ছেদ—সবই উঠে এসেছে। লাতিনো পপ সংগীত জনপ্রিয় করার পেছনেও রয়েছে তাঁর বড় অবদান। ২০১০ সালের পর গান, অভিনয়ে মনোযোগ কমিয়ে ব্যবসায় মন দেন লোপেজ।
লোপেজ এখন আলোচনায় গত ২৪ মে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘অ্যাটলাস’ দিয়ে। গতকাল পর্যন্ত নেটফ্লিক্সের ইংরেজিভাষী সিনেমার টপ চার্টের শীর্ষে ছিল ব্র্যাড পেটন পরিচালিত সিনেমাটি। সায়েন্স ফিকশন অ্যাকশন ঘরানার এ সিনেমাটিতে লোপেজ ছাড়াও আছেন সিমু লিউ, স্টারলিং ব্রাউন। অভিনয়ের সঙ্গে সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজকও লোপেজ। ছবিটি মুক্তির আগে চলচ্চিত্রবিষয়ক গণমাধ্যম ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাউন জানান, সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য লোপেজকে সাহায্য করেছেন তাঁর স্বামী বেন অ্যাফ্লেক। অভিনয়ের প্রস্তুতি থেকে শুরু ডাবিং—সব ক্ষেত্রেই সাহায্য করেছেন বেন। সমালোচকের ‘গড়পড়তা’ রিভিউ সত্ত্বেও সাধারণ দর্শকেরা বেশ পছন্দ করেছেন ছবিটি। নেটফ্লিক্সের তালিকার শীর্ষে জায়গা পাওয়া তাঁরই প্রমাণ।
সিনেমাপ্রেমী দর্শকের জন্য ‘অ্যাটলাস’ সুসংবাদ বয়ে আনলেও লোপেজের গানের ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ। বিরতির পর চলতি মাসের ২৬ তারিখ ‘দিস ইজ মি...নাউ’ কনসার্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার এই সংগীত সফর বাতিলের ঘোষণা দেয় আয়োজক লাইভ নেশন এন্টারটেইনমেন্ট। বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, জেনিফার লোপেজের ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে ‘দিস ইজ মি...লাইভ’ কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে। জেনিফার এই সময় তাঁর সন্তান, পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। যাঁরা আগেই কনসার্টের টিকিট কেটেছিলেন, তাঁরা অর্থ ফেরত পাবেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। ভক্তদের উদ্দেশে জেনিফার লোপেজের বার্তাও তুলে ধরা হয়। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের মন ভেঙে গেছে জানি। কিন্তু এ ঘোষণা দিতে আমার হৃদয়ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, পরেরবার সব পুষিয়ে দেব। ভালোবাসি সবাইকে।’
গান, সিনেমা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে লোপেজ আলোচনায় বেন অ্যাফ্লেকের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে। দুই মাস ধরে তাঁদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন চাউর হয়েছে। এই গুঞ্জনের মূল কারণ, প্রকাশ্যে দীর্ঘদিন একসঙ্গে দুই তারকার দেখা পাননি ভক্তরা। তবে সম্পর্ক নিয়ে বেন বা লোপেজ কেউই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি। গত মাসে এক অনুষ্ঠানে বিচ্ছেদ নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গেলে তাঁকে থামিয়ে উল্টো লোপেজই প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘আপনারা তো এ বিষয়ে আরও ভালো জানেন।’ পরে অবশ্য একসঙ্গে তাঁদের দেখা যায়; সন্তানের গ্র্যাজুয়েশন পার্টিতে হাজির হন তাঁরা। ২০০২ সালে ‘গিগলি’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় এই যুগলের সাক্ষাৎ। এরপর ২০০৩ সালে তাঁদের বাগদান হয়। তবে এর পরের বছর তাঁদের বাগদান ভেঙে যায়। যা ছিল সে সময়ের সবচেয়ে চর্চিত খবরগুলোর একটি। ২০০৪ সালে গায়ক মার্ক অ্যান্থনিকে বিয়ে করেন লোপেজ। ২০১৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাঁদের দুই সন্তান আছে।
অন্যদিকে ২০০৫ সালে অভিনেত্রী জেনিফার গার্নারকে বিয়ে করেছিলেন বেন। ২০১৮ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বেন ও গার্নার জুটির তিন সন্তান আছে। তবে সময়ের ফেরে আরও দুই দশক পর এক হন এই তারকা জুটি। ২০২২ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়ের পর নিজের ওয়েবসাইটে লোপেজ লিখেছিলেন, ‘বিয়েটা করেই ফেললাম। ভালোবাসা সুন্দর। ভালোবাসা উদার। ২০ বছর পর আমাদের ভালোবাসা পরিণতি পেল।’