১৮ দিন পরে তাসরিফের মুখে হাসি ফুটল
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে একটি প্রশ্নই হাজারবার শুনতে হচ্ছে তরুণ গায়ক তাসরিফ খানকে—ভক্তদের উৎকণ্ঠার সেই প্রশ্ন হলো, ‘ভাই, আপনি কেমন আছেন? দূর থেকে আপনার সুস্থতার জন্য দোয়া ও ভালোবাসা, আপনি সুস্থ হয়ে আমাদের মধ্যে ফিরে আসুন।’ সামান্য কয়টি শব্দের এই প্রশ্ন তাসরিফকে অসুস্থতার কথা ভুলিয়ে দেয়। ভক্তদের অন্য রকম এই ভালোবাসা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে বেঁচে থাকতে। ভক্তদের হাজারো প্রশ্নেই খুঁজে পান মনের জোর। সেই ভক্তদের জন্য সুখবর জানালেন। ১৮ দিন পরে মুখে হাসি ফুটল তাসরিফের।
তাসরিফদের মিরপুরের বাসায় বেশ কদিন ধরেই সেই আগের মতো হাসিখুশি ভাব ছিল না। তাঁর মা–বাবাসহ অন্যদের একমাত্র চিন্তা ছিল তাসরিফের সুস্থতা নিয়ে। তাসরিফও মাঝেমধ্যে ভেঙে পড়লেও সেটা কাউকে বুঝতে দিতেন না।
নিজেই চেষ্টা করতেন শক্ত থাকার। সেই তাসরিফকে নিয়েই পরিবারের সবার মুখে একটু একটু করে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন অনেকটাই সুস্থ। বলা যায়, ৭০ ভাগ সেরে উঠেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল দ্রুত সেরে উঠব। সেটাই হচ্ছে। চিকিৎসকেরাও আশাবাদী, আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠব। তাঁরা জানিয়েছেন, আর ১০–১৫ দিন লাগবে পুরো সুস্থ হয়ে উঠতে। এখন আর চিন্তা করছি না। সেরা চিকিৎসা পেয়েছি। এটাই আমার জন্য স্বস্তির খবর।’
গত মাসে হঠাৎ করেই তাসরিফের ফেসিয়াল প্যারালাইসিস ধরা পড়ে। তার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। তবে আশাবাদী ছিলেন আবার গান নিয়ে, সামাজিক কর্ম নিয়ে শিগগির ফিরবেন।
এখনই গান নিয়ে না ফিরলেও আপাতত সামাজিক কর্ম নিয়ে ফিরেছেন এই গায়ক। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করেন নিয়মিত অসুস্থসহ নানা ধরনের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কখনো ফান্ড গঠন করে, কখনো নিজেই আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থাকেন। তাসরিফ খুশি মনে বলেন, ‘এখনই গান করব না। আগে সুস্থ হয়ে উঠি। তবে আমার সোশ্যাল অ্যাকটিভিটি এখন চলছে।’ তিনি আরও জানালেন, আগে মতো আর মুখ বাঁকা নেই। এখন হাসতেও পারছেন। সব ঠিক থাকলেও আগের মতো পুরো উদ্যমে ফিরবেন তাসরিফ। তাঁর আগে নিয়মিত চিকিৎসা পর্ব শেষ করতে হবে।
তাসরিফ নিয়মিত মিরপুর থেকে সাভারের একটি ফিজিও সেন্টারে গিয়ে থেরাপি নিচ্ছেন। সপ্তাহে বৃহস্পতি–শুক্রবার বাদে বাকি পাঁচ দিন চিকিৎসা নিতে ছুটতে হয়। এর আগে ৫ মার্চের দিকে রাতে খেয়ে কুলি করতে গিয়ে তরুণ জনপ্রিয় গায়ক তাসরিফ খান বুঝতে পারেন, তিনি ঠিকমতো কুলি করতে পারছেন না। তার মুখ থেকে পানি অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। মুখের এক পাশে কিছুটা বাঁকা, সোজা হচ্ছিল না। ভয় পেয়ে যান তিনি। বাসায়ই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানতে পারেন তিনি ‘ফেসিয়াল প্যারালাইসিস’-এ আক্রান্ত।
‘কুঁড়েঘর’ নামে তাসরিফ খানদের একটি ব্যান্ড আছে। ২০১৭ সাল থেকে ব্যান্ডটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ‘আমি মানে তুমি’, ‘ব্যাচেলর’, ‘ময়না রে’সহ ৯০টির বেশি মৌলিক গান রয়েছে। তিনি দেশ ও দেশের বাইরে কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। রোজার আগপর্যন্ত নিয়মিত কনসার্ট থাকলেও অসুস্থতার কারণে সব বাতিল করেন। সুস্থ হলে ঈদের পরে তাঁর গান নিয়ে ফেরা কথা রয়েছে। গত বছরের জুনে সিলেটের বন্যাদুর্গত বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। সেই লাইভ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সে সময় কোটি টাকার বেশি ফান্ড সংগ্রহ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘বাইশের বন্যা’ নামের একটি বই লিখেছেন তিনি। বইটি নিয়েও তাঁর ভক্তদের মধ্য সাড়া পড়ে।