‘দাঁড়ালে দুয়ারে’র আড়ালের গল্প
‘“বুকে তোমার রাখতে প্রিয়...” অংশটা যখন গাই, আমি জানি না কী যেন হয়েছিল! আমার এত কান্না পাচ্ছিল…! গানের মধ্যে ডুবে গিয়ে আমি শুধু কেঁদেছিই। এত আবেগ একটা গানে!’
নিজের গানের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বললেন কণ্ঠশিল্পী সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা। কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমের ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানের একজন শিল্পী তিনি।
‘গানটি তৈরি এবং দৃশ্যধারণের সময় আবেগের কান্নাকাটিই শুধু হয়নি, পুরোটা সময় মজার মজার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও গিয়েছি আমরা।’ এমনটাই বললেন এই গানের আরেক শিল্পী মুকুল মজুমদার ইশান।
লাজুক, স্বল্পভাষী ইশান ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানের নেপথ্যের কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘আমার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছিল সব সময়। অর্ণবদার সামনে গান করছি, ঠিকমতো গাইতে পারছি তো! কিন্তু এত অমায়িকভাবে বুঝিয়ে, আদর করে অর্ণবদা ও শুভেন্দুদা আমাকে দিয়ে গানটা করালেন, এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।’
কোক স্টুডিও বাংলার সংগীতায়োজক সংগীতশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব জানান, ‘কোক স্টুডিও সিজন টুর জন্য আমরা কয়েকজন তরুণ সংগীতশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীর খোঁজ করি। তাঁদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করি। ইশানকে সেই ক্যাম্পেইনে পাই। এত চমৎকার, আরাম করে ও গানটা গাইল! তরুণ প্রজন্মের কাছে নজরুলকে ইশান নতুন করে আবার পরিচয় করিয়ে দিল। বিদ্রোহী কবির বাইরেও যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি—ইশানের গানের মাধ্যমে আবার তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারবে।’
সংগীতশিল্পী নন্দিতা গানের নেপথ্যের বিষয়ে জানান, ‘গানে সবাই বলছেন, আমাকে এত সুন্দর লেগেছে। এর পেছনে যে কষ্ট ছিল, তা আসলে গানটির দৃশ্য দেখে বোঝা যায় না। আমার শুটিংয়ের অংশের পুরোটাই হয়েছিল বারান্দায়। সেখানে আলো আর আবহাওয়ার কারণে যে গরম ছিল, সব মিলিয়ে আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। বেলা ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেছি, গরমে বমিও হয়েছে। অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাজটা এত উপভোগ করেছি, তখন আর এগুলোকে পাত্তা দিইনি।’
‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানের সংগীত পরিচালনা করেন শুভেন্দু দাস। শুভেন্দু জানান, ‘কোক স্টুডিওর প্রতিটি গানে কাজ করা তো আসলে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। এই গানে প্রচুর যন্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। শুরুতেই শৌনক দেবনাথ রিক সারেঙ্গি বাজিয়েছেন। আমি বুজুকি বাজিয়েছি। পিয়ানো, গিটার বেজেছে। বৈদ্যুতিক ড্রামের আয়োজন ছিল। আর নতুন সংযোজন ছিল আমাদের বেহালার দল। চমৎকার কাজ করেছেন সবাই। পুরো কাজটাই একটা দলগত বিষয় ছিল।’
গানের দৃশ্যায়নের একটা বড় অংশে আমরা শ্রেষ্ঠা সরকারকে নাচতে দেখি। গানের সঙ্গে সঙ্গে নাচের মূর্ছনাও বিমোহিত করে দর্শককে। দাঁড়ালে দুয়ারের দৃশ্যায়নে নৃত্যপরিচালক ছিলেন স্নাতা শাহরীন। তিনি জানান, ‘এটা নজরুলের গজল আকারে বাংলা গান। আবার আসরি ভাবও আছে। গানের প্রতিটি ধাপে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। নাচেও আমি তাই কত্থকি ব্যবহার করেছি।’
গানটির ভিডিও পরিচালক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘“দাঁড়ালে দুয়ারে” গানের পারিপার্শ্বিক সজ্জা প্রস্তুত করার সময় আমাদের প্রথমেই চিন্তা ছিল মোগল স্থাপত্যের ধাঁচে বানানোর। আর মূল ভাবনা করেছিলাম রোমিও-জুলিয়েট নিয়ে, যেখানে জুলিয়েট বারান্দায় এসে দাঁড়াবে, রোমিও নিচে থাকবে। সেভাবেই কাজ করা হয়েছে। কোক স্টুডিও বাংলায় সব সময় ফিউশনধর্মী কাজ করা হয়, যা এই গানের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের শিল্পনির্দেশক শিহাব নূর মোগল স্থাপত্যের ধাঁচে মঞ্চ বানাতে তাঁর সর্বোচ্চটুকু দিয়েছেন। আর গানটা ইউটিউবে শোনার পাশাপাশি দেখারও একটা বিষয় আছে। তাই আমরা মঞ্চসজ্জায় নানা বৈচিত্র্য এনেছি। দোতলায় বারান্দা ঘেঁষে ছিল মোগল আমলের একটা প্যাঁচানো সিঁড়ি। ছিল বাগানবিলাস গাছ। আর সাদা পায়রা। সাদা পায়রার মতো সবার শ্বেতশুভ্র পোশাক এক অন্য রকম আবহ তৈরি করেছে গানটিতে।’