স্মৃতি উসকে দিল ‘অবাক ভালোবাসা’
‘বাবার চাকরির সুবাদে রাজশাহীতে থাকতাম। স্কুলে পড়তাম; একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে গানটা শুনেছিলাম। একটু ভিন্ন ধরনের কম্পোজিশন। গানের কথা, গায়কি আর ইনস্ট্রুমেন্টে সময়ের চেয়ে এগিয়ে। সেদিন স্কুলে গানটা গুনগুন করেছি। কোনোভাবেই সুরগুলো মাথা থেকে বের করতে পারিনি। মহাকালের সাক্ষী হয়ে “অবাক ভালোবাসা” গানটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে।’ গানটি শুনে কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে লিখেছেন নওশাদ হাসান খান।
ওয়ারফেজ ব্যান্ডের কালজয়ী গান ‘অবাক ভালোবাসা’ নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করেছে কোক স্টুডিও বাংলা। গত শনিবার গানটি প্রকাশ্যে আসার পর শ্রোতারা স্মৃতির অলিন্দে ফিরছেন। তিন দশকের পুরোনো গানটি এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে।
নিজের লেখা ও সুরে গানটি গেয়েছেন বাবনা করিম। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়াকালে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে গানটি লিখেছেন বাবনা। পরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ওয়ারফেজের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘অবাক ভালোবাসা’ অ্যালবামে শিরোনাম সংগীত ছিল এটি। ক্যাসেটের যুগে অ্যালবামটি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন শ্রোতারা, ‘অবাক ভালোবাসা’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
২০০৯ সালে ওয়ারফেজের জনপ্রিয় গানের সংকলন ‘পথ চলা’-তেও গানটি ছিল। নব্বইয়ের শ্রোতাদের পাশাপাশি শূন্য দশকের শ্রোতাদের মধ্যেও গানটি সাড়া ফেলেছিল। ওয়ারফেজের সাবেক ভোকালিস্ট বাবনা করিমকে ফিরিয়ে আবারও গানটি নিয়ে এসেছে কোক স্টুডিও বাংলা।
গানটি নব্বই ও শূন্য দশকের শ্রোতাদের স্মৃতি উসকে দিয়েছে। নাঈম নামের আরেক শ্রোতা লিখেছেন, ‘১৮ বছর আগে রাত ৩টায় আমরা তিন বন্ধু সেন্ট মার্টিনের পূর্ণিমা রাতের নিস্তব্ধতায় সাগরে পা ভিজিয়ে হেডফোনে শুনেছিলাম “অবাক ভালোবাসা”। আজও সেই স্মৃতিতে রোমাঞ্চিত হই। ভালো থাকুক “অবাক ভালোবাসা”। ভালো থাকুক ওয়ারফেজের কালজয়ী গানগুলো।’
মূল গানটির প্রতি সম্মান জানিয়ে নতুন সংস্করণে নিয়ে এসেছে কোক স্টুডিও। এই গানের সংগীতায়োজন ও পারফরম্যান্সে ওয়ারফেজের পাশাপাশি ছিল কোক স্টুডিও বাংলা টিম। সংগীত প্রযোজনায় ছিলেন তৃতীয় সিজনের সংগীত প্রযোজক শায়ান চৌধুরী অর্ণব, শেখ মনিরুল আলম টিপু ও সামির হাফিজ। গানের গায়কিতে বাবনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পলাশ নূর, গিটারে ছিলেন সামির হাফিজ আর কমল, কি-বোর্ডে শামস, ড্রামসে টিপু ও বেজে রজার।
নাফিস আবদুল্লাহ নামের আরেক শ্রোতা লিখেছেন, ‘বাবনার লেখা এবং গাওয়া সেই গান শ্রোতাদের কাছে শুধু নস্টালজিয়াই নয়, আবেগেরও আরেক নাম। বাবনা ও পলাশ মিলে সেই আবেগকেই যেন ফিরিয়ে আনলেন কোক স্টুডিও বাংলার মঞ্চে, ভাসালেন নস্টালজিয়ায়। কি অদ্ভুত, অপার্থিব কিছু মুহূর্তের জন্ম হলো দুর্দান্ত এই সংগীতায়োজনে।’
ইমরান শেখ নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘আমি কখনো সামনাসামনি বাবনা করিমকে পারফর্ম করতে দেখিনি। কি যে ভালো লাগছে তা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। ছোটখাটো একটা স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল আজ।’
সাধারণ শ্রোতাদের পাশাপাশি ব্যান্ডশিল্পীরাও গানটিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। শিরোনামহীনের দলনেতা জিয়াউর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত। কোক স্টুডিওর গান আমার ভালো লাগল ফাইনালি। হ্যাটস অব ওয়ারফেজ।’