বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের নিয়ে গুলশানে জমজমাট ‘নজরুল উৎসব’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃজনকর্মের চর্চাকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া, তাঁর সংগীতের আদি সুর ও বাণী নতুন প্রজন্মের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকায় গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে শুরু হয়েছে দুই দিনের নজরুল উৎসব। বাংলাদেশ ও ভারতের অর্ধশতাধিক শিল্পীর সম্মিলন ঘটেছে সংগীতজ্ঞ সুধীন দাসকে উৎসর্গকৃত এই সংগীতাসরে। যৌথভাবে উৎসবটির আয়োজন করেছে নজরুল সংগীত সংস্থা, গুলশান সোসাইটি ও ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)।
আজ শুক্রবার তৃতীয় নজরুল উৎসবের উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি। সংক্ষিপ্ত কথন পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক ও গুলশান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ওমর সাদাত। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসবের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম শাকিল।
উদ্বোধনী পর্বে শুদ্ধ সুর ও বাণীতে গীত নজরুলের ১২৫টি গান উন্মুক্ত করা হয় ইউটিউবে। পেশাদারি যন্ত্রাণুষঙ্গসহ রেকর্ডকৃত এই গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত শিল্পীরা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপটে নারীশক্তির বন্দনা ও নারীর সমতায় নজরুলের সৃষ্টি ও চেতনা প্রসঙ্গে মফিদুল হক বলেন, ‘আমরা নজরুলের গানে-কবিতায় বহুভাবে নারী শক্তির আরাধনা দেখি। চট করে মনে পড়ে ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’ গানটি। নারী জাগরণের বাইরেও নারীকে তিনি এক অসাধারণ শক্তির উদগাতা হিসেবে কামনা করেছেন। বহ্নিশিখার মতো তিনি নারী জাগরণ দেখতে চেয়েছেন।
প্রণয় ভার্মা বলেন, এই উৎসব শুধু মহান কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণের জন্য নয়; বরং দুই দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের উদ্যাপনও। তাই নজরুল উৎসব ভারত-বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের দারুণ প্ল্যাটফর্ম। খলিল আহমদ জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আবশ্যিক নজরুল নামে ৮০০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বইটি শিগগিরই প্রকাশিত হবে। অন্যদিকে নজরুলের ১২৫তম জন্মদিনে ‘এসেনশিয়াল নজরুল’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নজরুলের সতেরো খণ্ডের রচনাসমগ্র ইংরেজিতে অনুবাদ করে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, নজরুলের যেমন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎস থেকে আহরণ করে শিল্পসৃষ্টির ক্ষমতা ছিল, তেমনি তাঁর একটি গভীর মানবিক বাঙালি চেতনা ছিল। যেখানে জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ ছিল না। তিনি বঞ্চিতদের বেদনায় কাতর হয়েছেন, শোষিতের অত্যাচারে ক্ষিপ্ত হয়েছেন, পরাধীনতার বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ ও সোচ্চার হয়েছেন।
পরিবেশনা পর্বের শুরুতে পরিবেশিত হয় দেশ পর্যায়ের গান ও পাঠের ধারাভাষ্যময় গীতি-আলেখ্য ‘পঞ্চাঙ্গনা’। এরপর সৈয়দা সানজিদা জোহরা গেয়ে শোনান ‘স্বদেশ আমার! জানি না তোমার শুধিব মা কবে ঋণ’। আফসানা গেয়েছেন ‘গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরী যমুনা ঐ’। সুমন মজুমদারের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘মাগো চিন্ময় রূপ ধরে আয়’। স্বদেশের বন্দনায় সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয়েছে ‘ও ভাই সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি’।
গানের পর ছিল কবিতা পাঠ। বৈচিত্র্যের অনুসন্ধানী উৎসবে ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানের সুরে শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নাচ করে নৃত্যনন্দন।
ভারতীয় শিল্পী দেবারতি দত্ত পরিবেশন করেন ‘কেন ফোটে কেন কুসুম ঝ’রে যায়’। পশ্চিমবঙ্গে আরও দুই মনোময় ভট্টাচার্য ও শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় শুনিয়েছেন ‘নিশিরাতে রিমঝিম ঝিম’, ‘শূন্য এ বুকে’, ‘মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে’, ও ‘আমার কথা লুকিয়ে থাকে’সহ কয়েকটি গান।
আগামীকাল শনিবার বিকেল পাঁচটায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের উৎসব। এদিন গান শোনাবেন খায়রুল আনাম শাকিল, নাশিদ কামাল, ফেরদৌস আরা, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত তুষার দত্ত, পায়েল করসহ দুই দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা।